কলেজে জোর করে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে ছাত্রলীগ
খুলনার ‘সুন্দরবন সরকারি আদর্শ কলেজ’-এ ছাত্রলীগ নেতারা জোর করে নিজেদের পছন্দমতো ছাত্রছাত্রী ভর্তি করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাধা দেওয়ায় তাঁদের হাতে এক অভিভাবকও লাঞ্ছিত হয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাব খাটিয়ে ভর্তিতে বাধা দেওয়ায় এহসান নামের এক কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করেছে দুই ছাত্রলীগকর্মী। আর রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা জানান, সোমবার একাদশ শ্রেণিতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তির শেষ দিন ছিল। সুন্দরবন সরকারি আদর্শ কলেজে এ বছর বাণিজ্য বিভাগে ৪০০টি এবং বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগে ৩০০টি আসন আছে। ভর্তির শেষ দিন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভিড় বেশি ছিল।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভর্তি কার্যক্রম চলছিল কলেজের ‘একাডেমিক ভবন-২’-এ। কিন্তু সকাল থেকে কোনো শিক্ষার্থীকেই ভর্তি ফরম দেওয়া হয়নি। দুপুর ১টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীদের কলেজ থেকে বের করে দিয়ে একাডেমিক ভবন-২-এর ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় বাধা দেওয়ায় লাঞ্ছিত করে সনজিৎ কুমার নামের এক অভিভাবককে।
ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক বি এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শুরুতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। পরে ছাত্রদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে ঠিক করেছি। এখন সমস্যা নেই। বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।’
মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল বলেন, ওই কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। এ ছাড়া অনলাইনে জোর করে ভর্তির সুযোগ নেই। এর পরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করল ছাত্রলীগ কর্মী : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাব খাটিয়ে ভর্তিতে বাধা দেওয়ায় এহসান নামের এক কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করেছে দুই ছাত্রলীগকর্মী। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভর্তি কার্যক্রম চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে। ওই দুই ছাত্রলীগকর্মী হলো মিজানুর রহমান এবং তৌহিদুল ইসলাম জিমেল। তারা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন কনকর্ডের সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগকর্মী জিমেলের ভাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একাদশ শ্রেণির ভর্তির অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিল। গতকাল প্রভাব খাটিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে তাকে ভর্তি করাতে চাইলে কলেজ কর্মকর্তারা অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় ছাত্রলীগের ওই দুই ক্যাডার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে কর্মচারী এহসানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
লাঞ্ছনার শিকার এহসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি করার কারণে আমরা অসহায়। আমাদের ওপর হামলা করলেও আমাদের মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের (ভারপাপ্ত) অধ্যক্ষ ফজলুল হক বলেন, ‘আমি সকাল থেকেই উপাচার্যের সঙ্গে মিটিংয়ে ছিলাম। এরপর ১টার দিকে অফিসে এলেও কোনো কর্মচারী বা পরীক্ষা কমিটির কেউ আমাকে কিছুই জানাননি। আমাকে কেউ অবহিত না করলে কিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি মো. আলমগীর টিপু বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত নই। যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজশাহীতে ছাত্রলীগের বাধায় ভর্তি বন্ধ: রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের বাধার মুখে সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দু’টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারেননি। পরে বিকালে ভর্তি শুরু হয়।
এ ঘটনার পর কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান তার দফতরে তালা ঝুলিয়ে কলেজ থেকে লাপাত্তা হয়ে যান। যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোনেও তিনি সাড়া দেননি।
ভর্তিচ্ছুরা জানায়, বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ করেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবনের দোতলা উঠে তাদের বের করে দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ফলে তাদের বাধার কারণে অনেকেই ভর্তি হতে পারেননি।
এদিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুদ্দিন রবিনের দাবি, কলেজে নির্ধারিত এক হাজার ২০০ আসনের বিপরীতে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তালিকা টানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অথচ এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেই। এমনকি অতিরিক্ত শিক্ষার্থী পড়াশোনার মতো অবকাঠামোগত সুবিধাও নেই। তাই ভর্তিতে আমরা আপত্তি জানিয়েছি।
অনলাইনে ভর্তি বিড়ম্বনা : এদিকে নতুন নিয়মে অনলাইনে আবেদনের পর ভর্তি নিয়ে বিড়ম্বনা কাটছে না। ইতিমধ্যে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তি হয়েছে। প্রথম অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তিও শেষ হয়েছে সোমবার। কিন্তু রাজশাহী নগরীর নামিদামি কলেজগুলোতে এখনও বেশিরভাগ আসনই খালি থেকে গেছে।
একজন ভর্তিচ্ছু একাধিক কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষরা জানিয়েছেন, ভর্তি সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে।
মন্তব্য চালু নেই