কলেজছাত্রীকে ৪ দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ
ওই কলেজছাত্রী অভিযোগ করেন, ‘২১ মে রানা শেখ সিও অফিস মোড়ে ডেকে নিয়ে আমাকে ওর সঙ্গে যেতে বলে। না গেলে ওখানেই মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। জোর করে সাদা তিনটি ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমাকে একটি ঘরে (রানার মামাবাড়ি) আটকা রয়েছি। সেখানে একটি রুমে তিন দিন আটকে রেখে আমার ওপর নির্যাতন চালায় রানা। আমি বাধা দিতে গেলে ধারালো ব্লেড দিয়ে আমার হাত চিড়ে দেয়। সারা শরীরে আঘাত করে। ওখানকার লোকজন টের পেলে কদমতলা ওর ফুফুর বাড়িতে এনে আরও একদিন রাখে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘আমি হাতে-পায়ে ধরে পালাতে চাইলে আমাকে মেরে পুঁতে রাখার হুমকি দেয়। চার দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করার পর আমাকে নিজের বাড়ি চলে যা বলে ছেড়ে দেয়। আমার মোবাইল সিম রেখে দেয় ও কাউকে জানালে আমার পরিবারসহ মেরে ফেলার হুমকি দেয় রানা। এ সময় আমি বলি আমার তো সব শেষ, এখন কোথায় যাব। তখন রানা ও তার কয়েক বন্ধু আমাকে বেধড়ক মারধর করে। সুমন নামের এক ছেলে উদ্ধার করে আমার ভাইদের খবর দেয়। ভাইয়েরা আনতে গেলে তাদেরও মেরে ফেলতে চায়। পরে এলাকাবাসীর সাহায্যে আমরা রক্ষা পাই। রানা ও তার লোকেরা জোর করে আমার ও আমার ভাইদের সাদা কাগজে টিপসই রেখে দেয়।’
এদিকে, ঘটনা জানাজানি হলে ও সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেছে এ খবর পেয়ে বুধবার ঘটনাস্থলে এসআই বাদলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম হাজির হয়। তারা মেয়েটিকে উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রানা শেখ পিরোজপুর আফতাউদ্দিন কলেজের ছাত্র। তিনি এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। তার বাবা মোহাম্মদ রশিদ শেখ কদমতলা ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। রানা ছাত্রলীগকর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, রানা ও তার বাবা রশিদ শেখ এলাকায় নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। থানায় একাধিক মামলা রয়েছে রশিদ শেখের বিরুদ্ধে।
রানার বাবা রশিদ শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। সে এ ধরনের কোনো কাজ সে করেনি।’
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেয়েটিকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
পিরোজপুর থানার উপ-পরিদর্শক বাদল কৃষ্ণ রায় জানান, সাংবাদিকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়েটির অভিভাবক অভিযোগ করলে থানায় মামলা নেওয়া হবে।
কমদতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খান জানান, রানার সঙ্গে তরুণীটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে রানার বাবা রশিদ শেখ তাকে জানিয়েছেন। কয়েকদিন আগে মেয়েটিকে নিয়ে রানা পালিয়ে গিয়ে কাউকালীর চিড়াপাড়া মামাবাড়ি গিয়েছিল। পরে কদমতলায় রানার ফুফুর বাড়ি গিয়ে উঠে। মেয়ের অভিভাবকরা সেখান থেকে মঙ্গলবার মেয়েটিকে নিয়ে যায়। তবে মেয়েটিকে ধর্ষণ বা নির্যাতন করা হয়েছে কিনা— তা তিনি জানেন না।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন জানান, পুলিশের তত্ত্বাবধানে মেয়েটিকে পিরোজপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়েটির পক্ষ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য চালু নেই