কলিগ যদি হয় সমস্যার কারণ
অফিস কলিগ সবার আচরণ এক রকম না হওয়াই স্বাভাবিক। কারো থাকতে পারে কমন সেন্সের অভাব, কেউ আবার গায়ে পড়া স্বভাবের, যা আপনার একেবারেই না-পছন্দ। আবার কেউ হতে পারে রগচটা স্বভাবের, কেউ ভেতরে ভেতরে হ্যাব্বি প্রব্লেমেটিক- এক কথায় আপনার দুই চোখের বিষ! অথচ কিছু বলবেন সে উপায় নেই। কারণ তিনি আবার স্বভাবে ধরি মাছ না ছুঁই পানি টাইপের।
এই নানা কিসিমের কলিগই আপনার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারেন যেকোনো সময়। অনেকেই এদের নিয়ে পড়েন বিশাল ভাবনায়, যার ফলে আপনার অফিসের কাজে প্রত্যাশিত সাফল্য নাও আসতে পারে। তাই এ ধরনের কলিগদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনি নিতে পারেন কিছু কৌশল। যেমন-
সমস্যা : সহকর্মীর ফোনে উচ্চস্বরে বা অতিরিক্ত কথা বলা।
সমাধান : আপনার অফিসে এমন অনেকে থাকতে পারেন, যারা ফোনে উচ্চস্বরে কথা বলেন। আবার অনেকেই আছেন যারা অতিরিক্ত কথা বলেন। যার ফলে আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটে। অন্যদিকে কথা বলা লোকটির সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। সে তার মতো উঁচু গলায় সবার সঙ্গে কথা বলেই যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আপনি চিরকুটের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানাতে পারেন। এতে কাজ না হলে আপনি তাকে আলাদা নীরবে নিয়ে বোঝাতে পারেন যে, তার জন্য সবার সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই আছেন অফিসের ফোন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। এমন হলে আপনি তাকে বলুন, ভাইরে, এটা অফিস, অফিসের ফোন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়।
সমস্যা : আড্ডাবাজ সহকর্মী।
সমাধান : আপনার অফিসে অনেকেই থাকতে পারেন যারা নিজের কাজ ফেলে রেখে মনের মতো সাজিয়ে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন। এতে নিজের তো ক্ষতি হয়ই, তা অন্যের জন্যও যে ক্ষতি সেদিকে তার খেয়ালই থাকে না। তার কাছে আড্ডাই সব। সেক্ষেত্রে যখনই ওই ব্যক্তি আপনার কাছে আসবেন তখনই অধিক ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। তাকে বোঝাতে চেষ্টা করুন যে আপনি গুরুত্বপূর্ণ কাজে রয়েছেন, এখন আড্ডা দেওয়া যাবে না। তাতেও কাজ না হলে আপনি তার কথা না শোনার ভান করুন। এতে আস্তে আস্তে তিনি বুঝে যাবেন যে, আপনি তার কথা পাত্তা দিচ্ছেন না, তখন তিনি আপনাকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবেন।
সমস্যা : প্রভাব বিস্তারকারী সহকর্মী।
সমাধান : অনেক সহকর্মী আছেন যারা চান সবসময় আধিপত্য। তারা নিজেদের অনেক বড় মনে করেন। তিনি সব কাজে আগ বাড়িয়ে বক্তব্য দিতে পছন্দ করেন। অনেকেই অফিস মিটিংয়ে নিজেকে বড় মনে করে আধিপত্য বিস্তার করতে চান। অনেকেই নিজের সিদ্ধান্ত ভালো-মন্দ না বুঝেই নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে চেষ্টা করেন। সেক্ষেত্রে আপনি তার কথাগুলো ভালোভাবে শুনুন। তারপর তার সিদ্ধান্তের ত্রুটিগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করুন। এর পরিবর্তে আপনি আপনার বুদ্ধিদীপ্ত আইডিয়াগুলো উপস্থাপন করতে পারেন। এতে দেখবেন ওই ব্যক্তি যুক্তির কাছে হেরে গিয়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে ভবিষ্যতে নমনীয় হবেন। এতে আপনার মতো অনেকের কথা বলার সুযোগ হবে।
সমস্যা : সহকর্মী হতে পারেন আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী।
সমাধান : আপনার সহকর্মী প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন-এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে তার কাজের সঙ্গে নিজের কাজের তুলনা করে আপনি নিজের ভুলগুলো সংশোধন করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী সহকর্মীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক রেষারেষির পর্যায়েও চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার কাজের বিঘ্ন ঘটতে পারে। তিনি আপনাকে সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদন করতে নাও দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি সবসময় ভালো কাজের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজন না হলে তার সঙ্গে যুক্তিতর্ক করতে যাবেন না, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কোনো বিষয়ে সমস্যা হলে দুজনের সম্মতিক্রমে আলোচনায় বসে তা সমাধান করতে চেষ্টা করুন। আর একটি কথা, আপনি ভুলেও অন্যের কাছে তার সমালোচনা করবেন না। তার সম্পর্কে বসের কাছে কোনো খারাপ মন্তব্য না বলাই ভালো।
সমস্যা : সমস্যা যখন সেকশন বস।
সমাধান : আপনি যে সেকশনে কাজ করেন সে সেকশনের বস যদি বদমেজাজী হন তাহলে অফিসে কাজ করা আপনার জন্য নরকতুল্য হতে বাধ্য। অনেক বস আছেন যারা কারণে-অকারণে রেগে গিয়ে ঝাড়ি মারেন। সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করুন বসের এমন আচরণ করার কারণ। লক্ষ্য রাখুন বসের কী কী পজিটিভ আর কী কী নেগেটিভ দিকগুলো রয়েছে। এগুলো খুঁজে বের করে আপনি বসের অবস্থা বুঝে কাজ করতে পারেন। কখনও তার মখোমুখি তর্ক করতে যাবেন না। বস কখনও কোনো ভুল করলে তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন এবং যুক্তি দিয়ে বিনয়ের সঙ্গে বোঝাতে চেষ্টা করুন যে সিদ্ধান্তটি সঠিক নয়। অবশ্যই এ কাজগুলো করবেন বস যখন খোশমেজাজে থাকেন। তবে হ্যাঁ, একাধারে তিনি যদি একগুঁয়েমি করেন তবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। অন্যথায় অফিসে আপনার কাজ করা অসম্ভবও হতে পারে।
মন্তব্য চালু নেই