একান্ত সাক্ষাৎকারে কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন)
“কলারোয়ায় বিএনপি-জামায়াত বাহিনীর সেই তাণ্ডবলীলা দমন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি”
বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনীর সেই তাণ্ডবলীলা আমরা দমন করতে সক্ষম হয়েছি। আমি বলব আমার শান্তি প্রিয় উপজেলাবাসী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর অতীতের সকল সময়ের চেয়ে এখন সুখী সমৃদ্ধিশালী জীবন যাপন করছে। কোথায় এখন আর রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামা নেই। তবে বিএনপি জামায়াতের সেই সহিংসতার চিহ্ন এখনো মুছেনি। আমার কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান রাজনৈতিক দর্শন মানুষ মনে প্রাণে গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এবং সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন শেখ হাসিনার বাহিরে এদেশে কেউ রাজনীতি করতে চাইবে না।
সম্প্রতি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) আওয়ার নিউজ বিডি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন সাংবাদিক আবু রায়হান মিকাঈল। পাঠকদের জন্য সাক্ষাতকারটি নিম্নে দেওয়া হলো-
আওয়ার নিউজ বিডি : কেমন আছেন? আওয়ার নিউজ বিডি’র পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা নিন।
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : ভাল আছি। আপনারা কেমন আছেন? আপনাদেরকেও আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা রইল।
আওয়ার নিউজ বিডি : তৃণমূলের রাজনীতি সম্পর্কে কিছু বলুন?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : তৃণমূল রাজনীতি বলতে সমাজের একেবার সর্বশেষ স্তর। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ, গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের সাথী হওয়া, তাদের অগ্রগতি উন্নয়নের কথা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো এটিই তৃণমূলের রাজনীতি বলে আমি মনে করি।
আওয়ার নিউজ বিডি : কেন আপনি রাজনীতিতে আসলেন?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : আসলে কেন এই রাজনীতি আসা এর কোনো সংজ্ঞা নাই। মানুষ দেশের কাজ করতে গিয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। দেশ ও জাতির কাছে আমাদের সকলেরই একটা দায়বদ্ধতা আছে। আর সেই দায়বদ্ধতা থেকে দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছি। যার মাধ্যমে আমার রাজনীতিতে আসা।
আওয়ার নিউজ বিডি : কখন, কিভাবে আপনার এই রাজনীতিতে প্রবেশ বলবেন কী?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : আমি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং তখন থেকে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শকে বুকে ধারণ করার চেষ্টা করেছি। অবহেলিত ও শোষিত এই বাংলার মুক্তির জন্য আমি স্বপ্ন দেখেছি। আমি এসএসসি পাস করার পর কলারোয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। ভর্তি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে কলেজে ছাত্রলীগের একটা কমিটি হয়, আর ঐ কমিটির প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ছিলাম আমি। এটি ছিল ১৯৮১ সালের ঘটনা।
আওয়ার নিউজ বিডি : রাজনীতিতে এসে আপনি বেশি কোন ধরণের পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : আমি যখন ছাত্র রাজনীতিতে ছিলাম তখন স্বৈরাচর বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। বলা যেতে পারে, সেই আন্দোলন ছিল প্রায় ছাত্র নির্ভর। কেন্দ্রীয় কর্মসূচী অনুযায়ী আমরা মিছিল, মিটিং করেছি। তৎকালীন আমরা স্বৈরাশাসকের বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছি। এছাড়াও পরবর্তীকালে এই তৃণমূলে রাজনীতি করতে গিয়ে জামায়াত বিএনপির হাতেও অনেক লাঞ্ছিত হয়েছি। এই সন্ত্রাসী বাহিনী আমার বাড়িতেও হামলা চালিয়েছিল। শত প্রতিকূল পরিস্থির মধ্যেও আমি আমার দল আওয়ামী লীগকে ভালবেসে রাজনীতি করে গেছি। অটুট থাকার চেষ্টা করেছি বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শের প্রতি।
আওয়ার নিউজ বিডি : আচ্ছা, আপনি তো তৃণমূলে রাজনীতি করেন; আপনার এলাকায় রাজনীতির বর্তমান চিত্রটা কেমন?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : আমার এলাকার রাজনীতির বর্তমান চিত্র খুবই ভাল। বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনীর সেই তা-বলীলা আমরা দমন করতে সক্ষম হয়েছি। আমি বলব আমার শান্তি প্রিয় উপজেলাবাসী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে অতীতের সকল সময়ের চেয়ে এখন সুখী সমৃদ্ধিশালী জীবন যাপন করছে। কোথায় এখন আর রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামা নেই। তবে বিএনপি জামায়াতের সেই সহিংসতার চিহ্ন এখনো মুছেনি। আমার কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের হাতে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হয়েছিল। তাছাড়া জননেত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান এই রাজনৈতিক দর্শন মানুষ মনে প্রাণে গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এবং সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন শেখ হাসিনার বাহিরে এই দেশে আর কেউ রাজনীতি করতে চাইবে না।
আওয়ার নিউজ বিডি : ‘তৃণমূলের রাজনীতি’ জাতীয় রাজনীতিতে কেমন ভূমিকা রাখে বলে আপনি মনে করেন?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচী মূলত বাস্তবায়ন করে থাকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। সব সময়ই আন্দোলন সংগ্রামে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রাজপথে সংগ্রাম করে থাকে। এজন্য জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের রাজনীতির গুরুত্ব অপরিসীম।
আওয়ার নিউজ বিডি : সম্প্রতিকালে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান লক্ষ্য করা গেছে, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : জঙ্গিবাদ এমনই একটা জিনিস এদের ধর্ম নাই, দেশ নাই, নীতি আদর্শ নাই। সারাবিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাস কায়েমের লক্ষে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে জঙ্গিরা যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে তা কখনই সফল হবে না। আমরা লক্ষ করেছি পৃথিবীর যে সমস্ত দেশগুলোতে জঙ্গি হামলা হয়েছে তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা আমাদের চেয়ে শক্তিশালী মনে করলেও আজও এর কোনো সুরহা করতে পারিনি। কিন্তু আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে লক্ষ করেছি- বর্তমান সরকার পর পর কয়েকটি সফল জঙ্গি অভিযান সম্পন্ন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশে পুলিশের ভূমিকা আজ বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত।
আওয়ার নিউজ বিডি : জঙ্গিবাদ ইস্যুতে আ’লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো প্রতিবাদে উত্তাল থাকতে দেখা গেলেও জামায়াত এক ধরণের নিশ্চুপ; এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : এটি হচ্ছে জামায়াতের একটি অপকৌশল। ১৯৭১ সালে তারা পরাজিত হওয়ার পর ’৭৫-এ তাদেরই ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর তারা জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে পুরুজ্জিবিত হয়েছিল। সেই থেকে তারা গোপনে গোপনে নিজেদেরকে সুসংঘটিত করেছে। দীর্ঘকাল নিশ্চুপ থেকেছে। ১৯৭১ এর মতো তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ২০১৩ সালে। আমার এই শান্ত জনপদকে তারা অশান্ত করে তুলেছিল। আমার নেতাকর্মীদের রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, মৃত্যুাল্লাস করে মোবাইলে সেই দৃশ্য ধারণ করে ইন্টারনেটে ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে দিয়ে কলঙ্কিত করেছে এই কলারোয়া উপজেলাকে।
আওয়ার নিউজ বিডি : দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি’র ভূমিকা কেমন বলে আপনি মনে করছেন?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : বিএনপির ভূমিকা একেবারেই হতাশাব্যঞ্জক। কারণ, এই বিএনপির জন্ম হয়েছে একটা মিথ্যার মধ্যদিয়ে। আগুন নিয়ে খেলা করাই তো বিএনপির কাজ। আমরা দেখেছি, গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে কি নির্মমভাবে সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে তারা। শুধু তাই নয়, আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিল। বিএনপি কখনই চায়নি দেশ এগিয়ে যাক, অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি এগিয়ে যাক; তারা বার বার দেশকে পিছিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেছে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ আজ প্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
আওয়ার নিউজ বিডি : যুদ্ধাপরাধী ইস্যু: এ পর্যন্ত সরকার ৬ জন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি সরকার কার্যকর করেছে। তাদের ফাঁসি কার্যকরের পর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করতে দেখা গেছে। কিন্তু আপনার উপজেলায় ঐ ধরণের কর্মসূচি হয়েছিল কিনা?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : আমি ছাত্রজীবন থেকেই দেখেছি আমার কলারোয়ার মানুষ অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। পত্র-পত্রিকা দেখলে প্রমাণ পাবেন এ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর প্রক্রিয়ায় যখনই যেটাই হয়েছে প্রত্যেকটা ব্যাপারে আমার কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সম্মিলিতভাবে মিটিং করেছে মিছিল করেছে। এছাড়াও জনগণের কাছে বিভিন্ন সেমিনার-সেম্পজিয়ামের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের কর্মকা- তুলে ধরে মানুষের ধারণা বদলে দিয়েছে।
আওয়ার নিউজ বিডি : আপনার অঞ্চলে কি চিহ্নিত কোনো যুদ্ধাপরাধী এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। আমরা ইতিহাস পড়ে জেনেছি এবং এখন যারা জীবিত মুক্তিযোদ্ধা আছে তাদের কাছে শুনেছি- এখানে যুদ্ধকালীন কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন ও আব্দুল গফফারের নেতৃত্বে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়েছিল। কলারোয়া যথা সাতক্ষীরাকে মুক্ত করতে সেদিন নিজেদের জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছিল এই উপজেলার অনেক দামাল সন্তানেরা। কিন্তু অপর দিকে পাকিস্তানীদের সহায়তা দিতে যশোর ক্যান্টমেন্ট থেকে তাদের দাওয়াত করে এনে এই কলারোয়ার নিরীহ মানুষের ওপর লেলিয়ে দিয়েছিল জামায়াত নেতা কাশেম চেয়ারম্যান, আবু তালেব, শাহাদাত মাষ্টার। এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলাও হয়েছে।
আওয়ার নিউজ বিডি : আপনার এলাকায় বিগত দিনে নাশকতা মামলায় জামায়াত শিবিরের অনেক নেতাকর্মী তো এখনো পালাতক রয়েছে, তারা জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে কি আপনি মনে করেন?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : অবশ্যই। শিবির সৃষ্টি হয়েছে জামায়াত ইসলাম থেকে। সুতরাং জামায়াত ইসলাম থাকলে শিবির হবে, শিবির থাকলে জঙ্গিবাদ হওয়ার সম্ভবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
আওয়ার নিউজ বিডি : বর্তমান সরকারের সম্প্রতি একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ ১০ টাকা কেজিতে চাল। ৫০ লাখ দুস্থ পরিবার পাচ্ছে এই সুবিধা। এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : সারাবিশ্বে এটা একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। বিশ্বে যারাই আমাদের খাদ্য খাটতির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, যারা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করেছে বার বার, যারা আমাদের জাতিকে কটাট্ট করেছে নানাভাবে; তারা আজ দেখছে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন হচ্ছে। আমার কথা নয়, বিশ্ব ব্যাংক বলছে বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করি নাই, আজকে বাংলাদেশ খাদ্য রপ্তানির দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা এক সময় ওয়াদা করেছিল ১০টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবেন, কিন্তু আমাদের বিরোধী পক্ষ এটা নানানভাবে ব্যঙ্গ ও কটুক্তি করেছিল। তাদের সেই ব্যঙ্গ, কটুক্তি বা উপহাসকে পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রমাণ করেছে তিনি এ দেশের দুস্থ মানুষগুলোকে কতটা ভালবাসেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ১০টা কেজিতে চাল বিতরণ কার্যক্রম সত্যি এক বিরল ঘটনা। আমরা মাননীয় নেত্রীর আরো দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি যতদিন নেতৃত্বে থাকবেন ততদিন দেশ প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে।
আওয়ার নিউজ বিডি : আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালীন সময়ে আপনার এই উপজেলাতে তার গাড়ি বহরে হামলা করা হয়েছিল। ঐ হামলার বিষয়ে কিছু বলুন।
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : আমার দুর্ভাগ্য হোক আর সৌভাগ্য হোক, মাননীয় নেত্রীর একেবারে পিছনের গাড়িতে আমি ছিলাম। আমার চোখের সামনেই এই হামলাটি হয়েছিল। বিএনপির সকল সময় যে মানুষের প্রতি একটা আগ্রাসী মনোভাব সেটির বহিঃপ্রকাশ ছিল এটি। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তারা এ হামলা করেছিল। উপজেলা স্মৃতিসৌধের পাশে নেত্রীর গাড়ি আটকিয়ে এসিড নিক্ষেপ ও গুলি চালানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, নেত্রীর গাড়ী বহরের সাথে আমি যশোর পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বাড়ি ফেরা ছিল আমার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। শত প্রতিকূলতার মধ্যে আমি যখন ফিরে এসে থানায় মামলা করতে গেলাম তখন আমার শ্বশুর (যুদ্ধকালীন ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার) মোসলেম উদ্দীন নিজেই বললেন, তিনি এই মামলার বাদী হবেন। আমাকে উনি বাদী হতে দেননি। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে এই, মামলাটি করে বাড়ি আসার সাথে সাথেই বিএনপির ক্যাডার বাহিনী আমার বাড়ি ঘেরাও করে আগুন ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল। তখন আমার স্ত্রীর কোলে মাত্র ৯ মাসের সন্তান। সেদিন আমার স্ত্রী ফোনে সরাসরি মাননীয় নেত্রীর সাথে কথা বলেছিলেন, নেত্রী তাদের উদ্ধার করতে তৎকালীন এসপি সোহরাব সাহেবকে ফোন করেছিলেন। এসপি সাহেব ফোর্স নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, আমরা বিস্ময়ের সাথে দেখেছি সেদিন এই সহানুভূতিমূলক আচারণের জন্য ঐ এসপিকে ২ সপ্তাহের মধ্যে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল।
আওয়ার নিউজ বিডি : আপনি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত আপনার উপজেলাবাসীর জন্য উল্লেখযোগ্য কী কী করেছেন?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নের জন্য আমি সহ আমার পরিষদের সবাই আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সাথে এগিয়ে যাচ্ছে আমার উপজেলাও। তাছাড়া আমার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে কলারোয়াকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছি। এ লক্ষে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে সন্ত্রাস, জঙ্গী ও মাদক বিরোধী কমিটি করেছি। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সচেতনা মূলক সেমিনার সেম্পোজিয়াম করেছি। শুধু তাই নয়, এই কলারোয়াকে দরিদ্রমুক্ত, ভিক্ষুক মুক্ত ও বাল্য বিবাহ মুক্ত করতে নানা উদ্যোগ আমরা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছি। এনজিও’র মাধ্যমে ভিক্ষুকদের তালিকা নিয়ে তাদের পুণর্বাসনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
আওয়ার নিউজ বিডি : দেশের অনেক অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর বেশি নির্যাতনের শিকার হতে দেখা যায়। সেই হিসেবে আপনার উপজেলাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর অবস্থা কী?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : বাংলাদেশ একটি অসম্প্রদায়িক দেশ। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই একই সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। ঈদের নামাজ শেষ মুসলমানদের পাশাপাশি আমি অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের সাথেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। শুধু তাই নয়, অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের অনুষ্ঠানে গিয়েছি, তাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগী করেছি। শান্তি প্রিয় এই উপজেলায় কেউ সাম্প্রদায়িক উস্কানী দিয়ে ডাঙ্গা সৃষ্টি করতে পারিনি। সব সময় অটুট থেকেছে সাম্প্রদায়িক সম্পীতি।
আওয়ার নিউজ বিডি : আপনার ছাত্র জীবেনর রাজনীতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বাবার মুখে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শের কথা অনেক শুনেছি। সেই ছোট্ট থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুপ্রাণিত হয়েছি। একটি বিষয় আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে বলব- আমার বাবার কারণে এবং পরবর্তীতে আমার কারণে, আমার মাতৃভূমি গ্রামটি ছিল পুরো আওয়ামী গ্রাম। এখনো সেখানে অন্য কোনো দলের একজন সদস্যও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কলারোয়া সরকারী কলেজে পড়াকালীন সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর আস্তে আস্তে এক সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক, পরবর্তীতে আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সবশেষ এসে একটি উৎসবমূখর পরিবেশে কাউন্সিলের মাধ্যমে আমি কলারোয়া উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মনোনীত হই।
আওয়ার নিউজ বিডি : রাজনীতি আপনাকে কি দিয়েছে? বা, আপনি রাজনীতিকে কি দিয়েছেন? অবশেষে রাজনীতি থেকে আপনার চাওয়া পাওয়াটা কী?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : দেশ আমাকে কী দিলো সেটি বড় কথা নয়, আমি দেশকে কি দিলাম সেটাই বড় কথা। মানুষকে কিছু দিতে রাজনীতি করতে এসেছি, কিছু নিতে নয়। আর এভাবে নিবেদিত প্রাণ হয়ে রাজনীতি করে যাব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।
আওয়ার নিউজ বিডি : আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য আপনার কিছু বলার আছে কী?
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : এদেশের যা অর্জন, তার সবই আওয়ামী লীগ এনে দিয়েছে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ গণঅভূত্থান ও ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামসহ নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এদেশের মানুষের মুক্তি এনে দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যার নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই আমি বলব- আসুন আমরা সবাই আওয়ামী লীগের পতাকা তলে এসে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করি।
আওয়ার নিউজ বিডি : ধন্যবাদ, দীর্ঘক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
ফিরোজ আহম্মেদ (স্বপন) : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
মন্তব্য চালু নেই