কর্মীদের বেতন মোবাইলে দিন

সহজে ও নিরাপদে টাকার লেনদেন করতে শিল্প কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন ব্যাংকের ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) এর সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের বৈঠককালে এ আহ্বান তিনি।

গভর্নর বলেন, প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে নগদ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে প্রদান করতে হয়। এতে প্রতিষ্ঠান ও কর্মী উভয়েই ভোগান্তিতে পড়ে। বাড়তি লোক নিয়োগ করতে হয়। আর যদি কর্মীদের বেতন ব্যাংকের ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদান করা হয় তাহলে এ ধরনের ভোগান্তি হবে না। কর্মীরাও মোবাইলে তাদের টাকা ইচ্ছেমতো বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে ও খরচ করতে পারবে।

ড. আতিউর রহমান প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতে প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠনের আহ্বান জানান। সরকারের সহযোগিতায় এই ফান্ড গঠনে এফবিসিসিআইকে এগিয়ে আসতে বলেন তিনি। এতে একদিকে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা লাভবান হবে অন্যদিকে ফাইন্যান্সিংয়ে ইনক্লুশন আরও বিস্তার ঘটবে।

বৈঠকে ব্যবসায়ীরা ঋণের সুদ হার কমানো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের বিভিন্ন সহায়তাসহ খেলাপি ঋণ কমনোর বিষয়ে আলোচনা করেন। একই সঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) ঋনের সুদ পাঁচ শতাংশের দাবি করেন।

এ সময় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে গভর্নর বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ৯ শতাংশ সুদের মধ্যে চার শতাংশ নির্ধারিত তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালন ব্যয় হিসেবে এক শতাংশ নেয়। আর বাকি চার শতাংশ সরকার গ্রহণ করে থাকে। সরকার যদি তাদের চার শতাংশ না নেয় তা হলে পাঁচ শতাংশ সুদে তা প্রদান করা সম্ভব। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে আলোচনার বসার পরামর্শ দেন।

গভর্নর আরও বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসায়ীবান্ধব। গাভী পরিপালনে ঋণের ক্ষেত্রে এ ধরনের সুবিধা দিয়েছে। আপনারা যদি সরকারকে ঠিকমতো বোঝাতে পারেন, আশা করছি, রপ্তানি খাতেও এ সুবিধা প্রদান করবে। কারণ সরকারের সব সময় লাভ করার দরকার নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময় ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০০ মিলিয়ন ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রিন অর্থায়ন তহবিল রয়েছে। ব্যবসায়ীদের যখন দরকার, নিয়ম মেনে এ তহবিল থেকে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করতে পারবে বলে জানান ড. আতিউর রহমান।

এ সময় এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমেদ ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণকে ‘ক্যান্সার’ উল্লেখ করে বলেন, ঋণ খেলাপিরা নিজেরা সুবিধা নিয়ে ভালো ব্যবসায়িদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই ঋণ খেলাপিদের সুবিধাগুলো বন্ধসহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দাবি জানান তিনি।

বৈঠক শেষে মাতলুব আহমাদ বলেন, ব্যাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। যা অনেক কিছুই ব্যবসায়ীরা জানেন না। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ও ব্যবসায়ীরা কিভাবে যৌথ কাজ করতে পারে সেইসব বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, নির্বাহী পরিচালক আখতারুজ্জামান, এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই