কম্বোডিয়ায় ভিয়েতনামি ভাসন্ত গ্রাম
নদীর উপর দিয়ে মৃদু ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছেন ৬১ বছর বয়সী থাও ইয়েন। বয়সের সীমারেখা আজও তাকে বাধতে পারেনি। সময়ের স্রোতকে নদীর স্রোতের সঙ্গে মিশিয়ে থাও ভেসে চলেছেন নদীর উপরে বাশ দিয়ে তৈরি নিজের বাড়ির দিকে। সন্ধ্যের হওয়ার একটু আগে, পশ্চিমের দিকে অন্ধকার নামার আগেই পূবে চলে যেতে হবে। বেলা থাকতে থাকতে থাও বের হয়েছিল নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রির জন্য। এই মাছ ধরে বিক্রি করেই থাওয়ের পরিবার চলে।
কিন্তু মজার বিষয় হলো, থাও এবং তার পরিবারসহ গোটা সম্প্রদায় কোনো দেশের নাগরিক নয়। তার মতো আরও সাত লাখ মানুষ বর্তমানে কম্বোডিয়া বাস করছেন, যাদের নেই কোনো নাগরিকত্ব। তারা নিরীহ জীবনযাপন করেন বিধায় এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বৃহত কোনো প্রতিরোধের মুখোমুখে হননি তারা। আর এই কারণেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা নির্বিবাদে থেকে যাচ্ছে কম্বোডিয়ার ভূখন্ডে। যদিও তারা সত্যিকার অর্থে ভূখণ্ডে নয়, বরংচ নদীতে বাস করেন। এই নদীর বুকেই তারা বাসা বেধে এই নদীকেই উপজীব্য করে নিয়েছে জীবনযাপনের জন্য।
মূলত ১৮৬৩-১৯৫৩ সালের মধ্যে এই সম্প্রদায়টি ভিয়েতনাম থেকে কম্বোডিয়া আসে। অবশ্য সেসময় তাদের ফরাসি সরকার কম্বোডিয়ার প্রশাসনিক দপ্তরে কাজ করানোর জন্য নিয়ে এসেছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে খামেররা কম্বোডিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ করলে ভিয়েতনাম থেকে আগত সম্প্রদায়ের উপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন। অনেককে জোরপূর্বক ভিয়েতনামে ফেরত পাঠানো হয়েছে, আর যাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি তাদের হতা করা হয়েছে।
সরকারি কাগজপত্র ছাড়া কোনো ভিয়েতনামী কম্বোডিয়ায় কিছু কিনতে বা বিক্রি করতে পারে না। এই ব্যাপার শুধু পণ্য কেনার ক্ষেত্রে নয়, এমনকি ভূমি কেনার ক্ষেত্রেও। যে কারণে একান্ত বাধ্য হয়ে নদীর উপরেই বাসা বাধতে হয় তাদের। কম্বোডিয়ার ক্রমশ ভেতরের মৎস্যাঞ্চলে চলে যায় তারা। আর এখানেই তারা শুরু করে নতুন আশার বেসাতি। এভাবেই চলতে চলতে একদিন যখন কম্বোডিয়া থেকে খামেরদের শাসন শেষ হয়, তখন এই ভিয়েতনামিদের উপর নতুন করে অত্যাচার না হলেও তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।
মন্তব্য চালু নেই