‘কমলা রংগের মিষ্টি আলু চাষে ঝুকে পড়ছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা’

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ কমলা রংগের মিষ্টি আলু চাষে ঝুকে পড়ছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। এবারই প্রথম সদর উপজেলার পৌরসভাসহ মোগলবাসা ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের ৫০ একর চরের বালু জমিতে মিষ্টি আলুর চারা লাগানো হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বারি আলু-৪ ও ৮ জাতের মিষ্টি আলু ৭৮ টি নার্সারীর মাধ্যমে লাগানো হয়েছে। সদর উপজেলার ১২০০ কৃষক প্রশিক্ষন নিয়ে এ মিষ্টি আলু চাষ শুরু করেছেন।

উদ্যোক্তারা জানান, জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার ২ শতাধিক চরাঞ্চলের পড়ে থাকা হাজার হাজার হেক্টর বালু জমিতে উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। আর এ লক্ষ্যে মিষ্টি আলু উৎপাদন ও বাজারজাত নিশ্চিত করনে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সহযোগীতায় ইউনাইটেড কিংডম এজেন্সী ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট (ইউ,কে,আই,ডি)’র আর্থিক সহায়তায় কাজ করছে আর্ন্তজাতিক আলু কেন্দ্র ও বেসরকারী সাহায্য সংস্থা ব্রাক বাংলাদেশ।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যে আমরা ১৩ জন কৃষক প্রশিক্ষন নিয়ে ১৫০ শতক জমিতে নার্সারী করে মিষ্টি আলুর চারা উৎপাদন করেছি। এখান থেকে নিজের দুই একর জমিতে চারা লাগানোর পর ২লাখ চারা ৮৫ হাজার ২শ টাকায় বিক্রি করেছি। ফলন ভালো হলে আগামীতে বেশি পরিমান জমিতে মিষ্টি আলু নার্সাারী করাসহ চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড় গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম জানান, এবার প্রাথমিক ভাবে আমার চরের ৬ শতক জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ শুরু করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০ দিন আগে মিষ্টি আলুর চারা লাগিয়েছি। এই অল্প সময়ে চারা থেকে প্রচুর ডালপালা গজিয়েছে। আশা করছি ফলন খুব ভালো হবে।

আর্ন্তজাতিক আলু কেন্দ্র কুড়িগ্রাম অফিসের মাঠ সমন্বয়কারী মোঃ মহিদুল হাসান বলেন, ভাতের উপর চাপ কমিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে ও স্বল্প খরচে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চল গুলোতে মিষ্টি আলু চাষের উপর কাজ করছে আর্ন্তজাতিক আলু কেন্দ্র। কমলা রংগের এ মিষ্টি আলুতে উচ্চ ভিটামিন এ সমৃদ্ধ পুষ্টিগুন থাকায় এ আলু খেলে মানুষজনের ক্যান্সার প্রতিরোধসহ ডায়াবেটিস ও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রন হবে। পাশাপাশি পড়ে থাকা বালু জমিতে ফসল ফলিয়ে লাভবান হবেন কৃষকরা।

কুড়িগ্রাম সদরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু চাষে কৃষকদের পরামর্শসহ উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ মৌসুমে সদর উপজেলায় ১২০০ কৃষক এ মিষ্টি আলু চাষ শুরু করেছে। ১২০ দিনের মধ্যে মিষ্টি আলু ঘরে তুলতে পারবে কৃষকরা। প্রতি শতকে ৩ থেকে ৪ মন আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। মিষ্টি আলুর বাজারদর ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হতে পারবে।

ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচারাল প্রডাক্টিভিটি প্রজেক্ট (আইএপিপি) কুড়িগ্রাম জেলা সমন্বয়কারী মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলে মিষ্টি আলু চাষ প্রকল্প যা উৎপাদনের বীজ নিশ্চিত করন, প্রশিক্ষণ, প্রকল্প কতৃক উৎপাদন খরচ প্রদান ও বাজারজাত করণের সহয়তা করলে কৃষক অবশ্যই এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে ধরে রাখবে। খাদ্য, পুষ্টি, আয় এবং নারী উদ্দোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই ধরনের প্রকল্প যথেষ্ট ভুমিকা রাখবে।
এব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কামরুজ্জামান বলেন, বারি মিষ্টি আলু ৪ ও ৮ উচ্চ ভিটামিন ”এ” সহ অন্যান্য সকল পুষ্টি বিদ্যমান থাকায় উক্ত কৃষক তার নিজ পরিবারের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করন সহ অতিরিক্ত উৎপাদিত মিষ্টি আলু অন্যান্য জেলার পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করছি। মিষ্টি আলু চাষে আমরা চরাঞ্চলের কৃষদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। যাতে করে আগামীতে চরাঞ্চল গুলোতে কৃষকরা মিষ্টি আলু চাষ করে স্বালম্বী হতে পারে।

ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্রের সেক্টর লিডার ড. শফিউর রহমান সোহাগ জানান, দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কুড়িগ্রামসহ দেশের ১২টি জেলায় উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ কমলা রংগের মিষ্টি আলু চাষে কাজ করা হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা একদিকে যেমন লাভবান হবেন অন্যদিকে দেশের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত হলে শিশুদের মেধা বিকাশে অগ্রনী ভুমিকা রাখবে।



মন্তব্য চালু নেই