কবর যিয়ারত কেন ও কিভাবে করবেন

মৃত্যুকে স্মরণ, মৃত ব্যক্তি দর্শন বা জানাযা এবং কবর যিয়ারত আমরা কেন করব? এর জন্য উদ্দেশ্য থাকতে হবে নিজেদের মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং একদিন আল্লাহ্‌র কাছে ফিরে যেতে হবে অনুধাবন করা, বিচার দিনে নিজেদের কি অবস্থা হবে তা নিয়ে চিন্তা করা ইত্যাদি।

রাসূল সাল্লাল্লাহু’আলাইহি’ওয়া’সাল্লাম, মৃত্যু এবং আখেরাতকে স্মরণ করার জন্য কবর যিয়ারত করতেন এবং অন্যকে কবর যিয়ারত করতেও উৎসাহিত করেছেন। তাই কবর যিয়ারতকে আমরা সুন্নত বলে থাকি।

কবরের পাশে গিয়ে, নিজের মৃত্যুকে ও আখেরেতকে স্মরণ করবে, কবর বাসীদের মাগফেরাতের জন্য দুয়া করবে খালেস অন্তর থেকে। এই সময় নিম্নের দুয়া করবে, দুয়ার জন্য একাকী হাত উঠানো যেতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু’আলাইহি’ওয়া’সাল্লাম, বাক্বী’গারক্বাদ কবরস্থানের দীর্ঘক্ষণ ধরে দুয়া করতেন এবং তিনি একাকী তিনবার হাত উঠিয়ে ছিলেন।

তবে কবর স্থানে গিয়ে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালানো, সেজদা করা, অপবিত্র অবস্থায় যাওয়া ইত্যাদি বেদায়াতপূর্ণ কাজ করা যাবে না।

কবর স্থানে গিয়ে এই দোয়া পড়তে পারেনঃ আচ্ছালামু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মুসলিমীনা ওয়াল মু’মিনীন, ওয়া ইন্না ইনশা আল্লাহু বিকুম লাহিকুন, আনতুম লানা সালাফুন, ওয়ানাহনু বিল আছার। আসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়াহ।

অর্থ: হে মুসলিম-মুমিন কবরবাসী! আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহ চাহেতো আমরা আপনাদের সঙ্গে অচিরেই মিলিত হবো। আপনারা আমাদের পূর্বসূরী, আমরা আপনাদের অনুসরন করবো। আমি আল্লাহর নিকট আমাদের ও আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ( ফতোয়া আব্দুল্লাহ বিন জিবরীন নং ৬৪৭৫)

কবর যিয়ারতের আদবসমূহ:

১. সালাম দিবে।

২. কবর যিয়ারতের করতে গিয়ে বসা উচিৎ নয়। কেননা রাসূল (সা:) বসতে নিষেধ করেছেন। জ্বলন্ত কয়লায় বসে পরিধেয় জ্বালিয়ে দেওয়ার পর চামরা জ্বালিয়ে দেওয়া, কবরে বসা অপেক্ষা উত্তম। ( মুসলিম আবু হুরায়রা থেকে)

৩. কবরে জুতা খুলে প্রবেশ করা। এগুলো ছাড়া বিদআতী কর্মকান্ড পরিত্যাগ করে চলতে হবে। তবে জুতা যদি পবিত্র থাকে তাহলে অসবিধা নেই।

৪. রাসূল (সা:) বলেন: তোমরা তোমাদের ঘর বাড়ীকে কবরস্থান বানিয়ে নিওনা, কেননা যে ঘরে সূরা বাকারা পড়া হয় শয়তান সে ঘর থেকে পলায়ন করে। ( মুসলিম)

উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রমান হয় যে, কবরস্থান কুরআন তেলাওয়াতের স্থান নয়, কুরআন তেলাওয়াতের স্থান বাড়ি। রাসূল (সা:) ও তার সাহাবী থেকে ও কোন প্রমান নেই যে, তাঁরা মৃতদের জন্য কুরআন পড়েছেন, হ্যাঁ তাঁরা মৃতদের জন্য দু’আ করেছেন। রাসূল (সা:) যখন মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করতেন, তার নিকট দাড়িয়ে বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার সুদৃঢ় হওয়ার জন্য দু’আ কর। যেহেতু এখণ সে জিজ্ঞাসিত হবে। ( হাকেম)

৫. কবরে বা মাজারে পুষ্পমাল্য বা ফুল অর্পন করা যাবে না। এ আমল রাসূল ( সা:) ও তার সাহাবাগণ থেকে প্রমানিত নয়, এটা খৃষ্টানদের কালচার।

৬. কবরে নির্মান কার্য করা নিষেধ। ( মুসলিম)

৭. মৃত ব্যক্তির নিকট দু’আ চাওয়া ও তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকুন। মৃতরা সামর্থহীন, বরং এক আল্লাহকে ডাকুন, তিনি সর্ব শক্তিমান ও দু’আ কবুল করেন। উপরন্তু মৃত ব্যক্তির নিকট কিছু প্রার্থনা করা শিরকে আকবরের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ্‌ যেন আমাদেরকে ইমান আনার পর মুসলিম হয়ে মৃত্যু বরন করার তৌফিক দান করেন এবং পরকালের সম্মানিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।



মন্তব্য চালু নেই