কত নম্বরে কোন ট্রেন, যাত্রীদের ভরসা এই ‘নিউজকাকু’!
ভারতের বিধাননগর স্টেশনে নিত্যযাত্রীদের কাছে পরিচিত এবং জনপ্রিয় বছর পঁয়ষট্টির লজেন্সবিক্রেতা গোপাল সরকার। টক-ঝাল-মিষ্টি লজেন্সের পাশাপাশি তাঁর ‘ইউএসপি’ ট্রেন চলাচলের সঠিক খবরাখবর দেওয়া!
টিকিট কাটার হুড়োহুড়িতে ট্রেনের ঘোষণা শুনতে পারেননি? বাসচালকের গড়িমসিতে স্টেশনে পৌঁছতে দেরি হয়ে গিয়েছে? বৃথা উদ্বেগে ভোগেন না যাত্রীরা। ‘লজেন্সকাকু’কে ধরে প্রশ্ন করলেই হল, ‘‘এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে কোন গাড়ি?’’ দৃপ্তকণ্ঠে উত্তর আসবে, ‘‘একে নৈহাটি দিয়েছি। দু’য়েরটা একটু চেঞ্জ করতে পারি।’’
হাতে ঘড়ি না থাকলেও সময় মিলিয়ে বলে দেবেন, ‘‘আগের ডানকুনিটা সময়ে দিতে পারিনি, ব্যাটারা ঝোলাল।’’ একটু থেমে, ‘‘এই ট্রেনটা একদম সময়ে প্ল্যাটফর্মে ঢোকাব।’’
বারো মাস সকাল ৯টার মধ্যে বিধাননগর স্টেশনে হাজির হন দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দা গোপাল। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে লজেন্স বিক্রি। সঙ্গে ট্রেনের খবর দেওয়ার কাজ। পাঁচ ফুটের শীর্ণকায় চেহারাটা দেখলেই সারাদিন উড়ে আসে ট্রেন সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন।
বিরক্ত হন না? লোককে দিনভর ট্রেনের খবর বলে লাভ কী? ঝটিতি উত্তর আসে, ‘‘বিরক্ত হওয়ার কী আছে? তাড়াহুড়োর সময় লোকে ট্রেনের খবর পেয়ে খুশি হয়, লজেন্স কেনে। খবর না পেলে ক’টাই বা লজেন্স বিক্রি হতো!’’
তা হলে এ হল লজেন্স বিক্রির কৌশল? ‘‘ঠিক তা নয়। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ১৫ বছর বয়সে এই বিধাননগর স্টেশনে চলে আসি। তারপর থেকে এখানেই আছি। হজমি, রঙিন রাংতায় মোড়া লজেন্স, অনেক কিছু বিক্রি করেছি। আমার মতো ট্রেনের টাইম কতজন জানে? তাই বলে দিই, আর কী!’’
ট্রেনের সময় বলতে ভুল হয়নি কখনও? গোপালের দাবি, তেমন বড় ভুল হয়নি। তবে ট্রেন দেরি করলে যাত্রীরা তাঁর উপরেই রাগারাগি করেন। তাতে অবশ্য ট্রেনের সময় ঘোষণা থামাননি গোপালবাবু। ওই যে! ট্রেনের সময় তাঁর মতো কতজনই বা জানেন! -এবেলা।
মন্তব্য চালু নেই