কতটা সফল হবে রিও অলিম্পিক?

আগামী পাঁচ আগস্ট পর্দা উঠছে রিও অলিম্পিকের। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সবেচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব এই ক্রীড়াযজ্ঞ। ১৮৯৪ সালে ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) গঠন করেন। এরপর অলিম্পিকের ৩০টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে এই প্রথম অলিম্পিক। আর লাতিন আমেরিকায় দ্বিতীয়। সর্বশেষ ১৯৬৮ সালে লাতিন দেশ হিসেবে অলিম্পিক আয়োজন করেছিল মেক্সিকো।

ব্রাজিলের মাটিতে অলিম্পিক হওয়ায় সবার একটা ভিন্ন আগ্রহ জন্মেছে। মহাবন আমাজন ছাড়াও সেখানে রয়েছে অনেক দৃষ্টিনন্দন জায়গা। একে কেন্দ্র করে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ দেশটিতে জড়ো হতে পারে। ২৮টি ক্রীড়ার ৩০৬টি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে ২০৬টি দেশ থেকে ১০ হাজার ৫০০ ক্রীড়াবিদের সেখানে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে এখানে অলিম্পিক কেমন হবে- তা নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এটি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক হলেও আয়োজক দেশ ব্রাজিলে এখন শীতকাল। এই প্রথম পুরো শীতের মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজন হচ্ছে।

শীত-গ্রীষ্মের চেয়ে রিও অলিম্পিকের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ নিরাপত্তা। বিশ্ব ব্যাপী জঙ্গি হামলার টার্গেটে পরিণত হতে পারে রিও। এখানের ৩৩টি ভেন্যুতে এবার অলিম্পিকের ইভেন্টগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরে দেশটির সবচেয়ে বড় শহর সাও পাওলো, রাজধানী ব্রাসিলিয়া, মানাউশ ও সালভাদরে ভেন্যু করা হয়েছে।

ব্রাজিলে রাজনৈতিক অস্থিরতাও আছে। দেশটির নারী প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের অভিশংসন ঝুলে আছে। তার বিরোধীরা কিছু দিন আগেও বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। বামপন্থী সরকারের অনেক সিদ্ধান্তে জনগণ নাখোশ হয়েছে। আছে দুর্নীতির অভিযোগ। যদিও লুলা ডি সিলভার অধীনে দেশটি কিছুটা উন্নয়নের দিকে এগিয়ে ছিল।

ব্রাজিলে স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিও প্রকট। ইতোমধ্যে গলফ, টেনিসসহ বেশ কয়েকটি ইভেন্টের খেলোয়াড়রা নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কয়েক মাস আগে দেশটিতে জিকা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছিল। তার প্রভাব এখনও থাকতে পারে- এমন আশঙ্কায় অনেক নারী ক্রীড়াবিদ রিও অলিম্পিকে যাচ্ছে না। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়া ব্রাজিলের জন্য একটি ব্যর্থ দিক হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।

জিকা ভাইরাস ছাড়াও স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে ব্রাজিলে। একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, দেশটির বেশির ভাগ হ্রদ ও সৈকতের পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। অ্যাথলেটরা পানির ইভেন্টে অংশগ্রহণ করলে তাদেরকে মুখ বন্ধ করে রাখার পরামর্শ দিয়েছে ডাক্তাররা। তা নাহলে তাদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সব মিলিয়ে ব্রাজিল অলিম্পিক সফল হওয়ার দিক থেকে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কিন্তু প্রথমবারের মতো এই আয়োজনের জন্য দেশটির সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তাছাড়া আগে অলিম্পিক আয়োজন না করলেও ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের মতো অভিজ্ঞতা আছে দেশটির। ২০১৪ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ সফলভাবেই আয়োজন করেছিল ব্রাজিল। তাছাড়া ১৯৫০ বিশ্বকাপও আয়োজন করেছিল দেশটি। শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলীয়রা প্রথম অলিম্পিকে কতটা সফল হয়- সেটাই দেখার বিষয়।



মন্তব্য চালু নেই