কখন বুঝবেন প্রিয় মানুষটিকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে?

আমাদের দেশে আমরা মাথা ব্যাথার জন্যও ডাক্তারের কাছে যাই, কিন্তু মানসিক কোন সমস্যার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাই না। ছোট ছোট নানান মানসিক সমস্যা দিনে দিনে বড় হতে হতে একসময় গ্রাস করে আমাদের সুস্থ জীবনকে। আমরা অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকি আর আমাদের প্রিয়জনেরা বলেন ‘ও একটু পাগল’! কিন্তু তবু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান না যিনি আমাদের প্রকৃতপক্ষেই সাহায্য করতে পারেন অসুস্থ মানুষটিকে। আবার অসুস্থ মানুষটি নিজেও মানতে চান না যে তিনি অসুস্থ।

কি কি সমস্যা হলে বুঝবেন মানুষটিকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া প্রয়োজন? জেনে নিন এই বিষয়গুলো-

অবসাদ
আপনার কি সারাক্ষণ অবসাদ বোধ হয়? যে কোন মানুষেরই মন খারাপ হতে পারে। কিন্তু মানুষের মস্তিষ্ক কখনো একটি বিষয়ে একাগ্র থাকে না। সে পরিবর্তন চায়। অন্য বিষয়ে ভাবতে চায়। আপনি যদি দীর্ঘসময় মন খারাপ বা অবসন্ন বোধ করেন এবং অনেক সময় এটা হয় কোন কারণ ছাড়াই তাহলে বিষয়টি মানসিক রোগের লক্ষণ। মুড ডিসর্ডারসহ ডিপ্রেশন বা অন্যান্য গভীর সমস্যা থেকতে পারে।

হঠাৎ রেগে যাওয়া
অনেকে আছেন যারা হঠাৎ হঠাৎ রেগে যান। তারা সচেতনভাবে এটা করেন না। খুব সামান্য বিরক্ত হওয়ার মত একটা ঘটনায় তারা ভীষণ বাজে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বসেন। এটি কিন্তু স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। পি এম এস সহ আরও অনেক ধরনের সমস্যা আপনার রাগের মূল কারণ হতে পারে।

উদ্বিগ্নতা
দুশ্চিন্তা করা একটি সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু যতটুকু সমস্যা ততটুকু দুশ্চিন্তা করা স্বাভাবিক। আপনি যদি অতিরিক্ত চিন্তা করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনি এমন কিছু করছেন যা আপনার করার কথা নয়। আমরা অনেকেই দেখা যায় ছোট একটি ব্যাপারে অস্থির হয়ে পড়ি। ভাবি, এবার আমার কি হবে! আমাদের প্রেশার বেড়ে যায়, ঘামতে থাকি। এই সবই উদ্বিগতার লক্ষণ। দ্রুত ডাক্তার না দেখালে আপনার হার্ট এটাক, স্ট্রোক সহ নানান ভয়াবহ শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

ভয়
ভয় বিভিন্ন রকম হয়। অনেকে সাপ ভয় পান। এতই ভয় পান যে সাপ শব্দটা লেখা দেখলেও তার গাঁ শির শির করে। অনেকে আবার ভয় পান উচ্চতাকে। উঁচু কোথাও উঠলেই ঘামতে থাকেন। অনেক ভয় পান অন্ধকারকে। প্রতিটি ভয়ই অস্বাভাবিক হতে পারে। আপনার সামনে সাপ আসলে আপনার ভয় পাওয়াই উচিৎ। কিন্তু ‘সাপ’ লেখা দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খুব দ্রুত চিকিৎসা না হলে এধরণের মানুষ যে কোন সাধারণ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে নিজের এবং অব্যের ক্ষতি করতে পারেন। সিজোফ্রেনিয়াসহ নানান ফোবিয়ার কথা আমরা সবাই জানি।

জীবনের প্রতি অনাগ্রহ
অনেকেই জীবনের প্রতি ভীষণভাবে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। কোনকিছুই তাদের ভাল লাগে না। তারা মন খারাপ করে থাকেন, হতাশাজনক কথা বলেন। সবসময় দুঃখী থাকেন। জীবনের উৎফুল্লতাতখুজে পেতে তাদের সাহায্য করতে পারেন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

যৌনজীবন
একজন মানুষ যখন সারাক্ষণ যৌণতাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হন তখন তিনি সুস্থ মানুষ হতে পারেন না। অনেকেই আছেন যারা সারাক্ষণ সামনের মানুষটির প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন। মানুষটি কে সেটা কোন বিষয় নয়। যে কেউ হতে পারেন। অপরিচিত কেউও হতে পারেন। কিন্তু রোগী তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ফ্যান্টাসী বোধ করতে থাকেন। তার জীবনের মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় যৌনসুখ। এধরণের মানুষ যে কোন জায়গায় যে কাউকে এবিউজ করতে পারেন। এই রোগকে নিম্ফোম্যানিয়া বলে।

স্যাডিস্ট
কিছু মানুষ অযথাই অন্যের ক্ষতি করতে চায়। এটা আমরা যত স্বাভাবিকভাবেই নিই না কেন আসলে স্বাভাবিক নয়। এধরণের মানুষের অতিস্বত্তর চিকিৎসা প্রয়োজন। কারণ তারা শারীরিকভাবেও ক্ষতি করতে পারেন। অনেক সময় স্যাডিস্টদের মাঝে যৌনবিকৃতি দেখা যায়। তারা শারীরিক ব্যাথা বা ক্ষতকে যৌন উত্তেজক মনে করেন।



মন্তব্য চালু নেই