কক্সবাজার পৌরসভার পানি সাপ্লাইয়ের ট্যাংকি পাহাড় অস্তিত্ব সংকটে

মোঃ আমান উল্লাহ, কক্সবাজার : কক্সবাজার পৌরসভার পানি সাপ্লাইয়ের প্রাচীন ট্যাংকি পাহাড় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় এ ঐতিহ্যবাহী ট্যাংকি পাহাড়ের পাশের মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে প্রভাবশালীরা। সরকারি পাহাড়ের উপর অবস্থিত ওই ট্যাংকি যে কোন সময় মাটি ধসে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি সচেতন মহলের দাবী ভূমিদস্যূদের ওইস্থান থেকে বিতাড়িত করে পানি সাপ্লাইয়ের ট্যাংকি ও পাহাড়টি সংরক্ষণের।

এদিকে সাধারণ মানুষের দাবি দখলকৃত পাহাড়ী জমি পুনর্রুদ্ধার করে পানির রিজার্ভ করার ট্যাংকিটি আবারো আধুনিকায়ন করা গেলে আপদকালিন শহরবাসীকে পানি সরবরাহ করা যেত এবং পানি সরবরাহে একটি নতুন দ্বার উন্মোচন হতো।

কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক প্রবীণ কর্মচারী রূপনাথ চৌধুরী নাচ্চু বলেন, শহরের বড় কবরস্থান সংলগ্ন পাহাড়ে ১৯৬০ সালের দিকে তৎকালীন পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ করার জন্য এই ট্যাংকি তৈরি করা হয়েছিল। মূলত পানি সেখানে জমা রাখা হতো। পরে নির্দিষ্ট সময়ে সেখান থেকে পানি ছাড়লে তা পাইপের মাধ্যমে মানুষের ঘরে চলে যেত। আমার জানা মতে বহু বছর সেটা কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেখভাল করা হতো। পরে আস্তে আস্তে পাহাড়টি সম্পূর্ণ বেদখল হয়ে যায় এবং বর্তমানে সেই ঐতিহাসিক পাহাড়টির অস্থিত্ব সংকটে চরম পড়েছে।

শহরের বিবেকানন্দ সড়কের বাসিন্দা মাষ্টার নুরুল ইসলাম বলেন, সেই পানির ট্যাংকিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয় না। এক সময় পৌর এলাকার সব পানি এখান থেকে সরবরাহ করা হতো। মূলত ব্যবহার না থাকায় সেটি এখন দখলবাজদের হাতে চলে গেছে। এমন কি ট্যাংকির নীচের মাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছে দুবৃত্তরা। যার ফলে সেটি যে কোন মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে, বর্তমানে ওই পাহাড়ের জমি প্রতি শতক লাখ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীরাই এ কাজে জড়িত।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সরওয়ার, জাহাঙ্গির, বজল, ইস্কান্দার, রতন, সুভাষ, মুফিজসহ দখলকারীরা সেখানে বাড়ি করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে।

আলাপকালে রহিমা নামের এক পাহাড় দখলকারী বলেন, আমরা এই জমি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি। উখিয়া থেকে এখানে এসেছি ৪/৫ বছর আগে। আমরা যাদের কাছ থেকে কিনেছি তারাও নাকি কিনে নিয়েছিল। তবে আমরা জানি এটি সরকারি জমি।

এদিকে কক্সবাজার পৌরসভার পানি শাখার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ বলেন, আমি যতটুকু জানি সেই ঐতিহ্যবাহী ট্যাংকিটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একবার সেটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছিলাম খুবই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে সেটি। নিচের মাটিও সরিয়ে নিয়ে গেছে দখলকারীরা।

তিনি বলেন. যদি আবারো সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে রিজার্ভ ট্যাংকিটি ব্যবহার উপযোগী করা যেত তাহলে সাধারণ মানুষের খুব উপকারে আসতো। যেমন হঠাৎ করে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকে না সে সময় আমরা মটর চালাতে না পারলে পানি সরবরাহ করা যায় না। যদি সেই রিজার্ভ ট্যাংকিতে পানি থাকে তাহলে আপদকালীন শহরে পানি সরবরাহ করা যেত। এতে সাধরাণ মানুষের খুবই উপকার হতো। আর এই ট্যাংকিটি একসময় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ছিল। এখন কি অবস্থা সেটা আমি সঠিক বলতে পারবো না।

এ ব্যপারে কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী নসরত উল্লাহ বলেন, ট্যাংকি পাহাড়ের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। তবে পানির ট্যাংকিটি সম্পূর্ণ বেদখল হয়ে গেছে। তাদের উচ্ছেদ করা না গেলে সেখানে কোর ধরনের উন্নয়ন কাজ চালানো যাবে না।

আর পানির সব দায়দায়িত্ব এখন পৌরসভার। তাই আগে সেটি আমাদের থাকলেও এখন পৌরসভার দায়িত্বে আছে। এ ব্যাপারে পৌরসভাকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বলেন, রিজার্ভ ট্যাংকি বা ট্যাংকি পাহাড় বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই। তাই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের পরিষদ সভায় এ বিষয়ে একটি আলাদা কমিটি গঠন করে কাজ করতে চেষ্টা করবো।



মন্তব্য চালু নেই