‘ওয়ান্টেড’র মুক্তি নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে তোলপাড়

ভারত থেকে আমদানিকৃত হিন্দি সিনেমা ওয়ান্টেড  সারা দেশে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এ নিয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছেন। তাদের কেউ মনে করছেন- এটা আমাদের দেশের সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রের উপর প্রভাব ফেলবে। আবার কেউ বলছেন- বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমাটি মুক্তি পেলেও তাতে কোনো ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না।
এদিকে ভারতীয় চলচ্চিত্র দেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি তাদের সব কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউই চলচ্চিত্রের কোনো প্রকার কাজ করবেন না বলে জানিয়েছেন- বাংলাদেশে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তিনি ছাড়াও ঢাকাই চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংম্পৃক্ত কয়েকজনের মন্তব্য:

চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই কর্মবিরতিতে যাবে : দেলোয়ার জাহান ঝন্টু (নির্মাতা)

ভারতীয় চলচ্চিত্র ওয়ান্টেড বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য মোটেও ভালো নয়। ২০ জানুয়ারি, মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই কর্মবিরতিতে যাবে। যতদিন এর কোনো সমাধান না হয় ততদিন পরিচালক, শিল্পীসহ সকল কলাকুশলীরা কর্মবিরতি থাকবেন।
দেশের চলচ্চিত্রের উপর খারাপ প্রভাব পড়বে : মনতাজুর রহমান আকবর (নির্মাতা)

ওয়ান্টেড সিনেমা এ দেশে মুক্তি পাচ্ছে। এটা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য ক্ষতিকর। এটি মুক্তি পেলে এ দেশের চলচ্চিত্রের উপর খারাপ প্রভাব পড়বে।
দেশীয় চলচ্চিত্রের ক্ষতি হবে : টেলিসামাদ (সিনিয়র অভিনেতা)

ভারতীয় চলচ্চিত্র বাংলাদেশে মুক্তি পেলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির উপর খারাপ প্রভাব পড়বে। ভারতীয় সিনেমা খারাপ হোক ভালো হোক মানুষ নতুন বলে দেখতে যাবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সিনেমার উপর প্রভাব পড়বেই। আমাদের দেশের সিনেমা তো ওদের দেশের হলে চালায় না। ওরাও যদি আমাদের সিনেমা চালাতো তা হলে ভালো লাগতো। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এমনিতেই করুণ অবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রের ক্ষতি হবে।

ওদের টেকনিক আর আমাদের টেকনিক আলাদা। আমাদের চলচ্চিত্র ওদের দেশে না চললে আমরা ওদের সিনেমা চলতে দিব না।
দেশের চলচ্চিত্র শেষ হয়ে যাবে : আব্দুল আলীম (চলচ্চিত্র প্রযোজক)

ভারতীয় চলচ্চিত্র এ দেশে মুক্তি পেলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। বাংলা চলচ্চিত্রের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এর পরে যদি আবার ভারতীয় চলচ্চিত্র এদেশে মুক্তি পায়, তাহলে এ দেশের চলচ্চিত্র শেষ হয়ে যাবে। যারা চলচ্চিত্রের দায়িত্বে আছেন, তারা কেউ চলচ্চিত্রের স্বার্থে কাজ করে না। তারা সবাই দালাল। ভারতীয় চলচ্চিত্রের অনেক টাকা খরচ করে। আমরা তা পারি না। তাহলে কিভাবে ওদের মতো সিনেমা তৈরি হবে। দর্শক স্বাভাবিকভাবেই ওদের সিনেমা হলে গিয়ে দেখবে।
খারাপের কিছুই দেখছি না : দেবাশীষ বিশ্বাস (চলচ্চিত্র নির্মাতা)

ভারতীয় হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে। এতে খারাপের কিছুই দেখছি না। অন্য ভাষার সিনেমা দেখতে পাবে দর্শক। ওদের ভালো কিছু থাকলে তা দেখে শিখতে পারব।
আমাদের জন্য হুমকি স্বরূপ : মনির হোসেন সোহেল (চলচ্চিত্র নির্মাতা)

ভারতীয় সিনেমা বাংলাদেশে মুক্তি পাবে এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনই সাধুবাদ জানাব না। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের কিছু লোক হিন্দি ভাষা বুঝে। ওয়ান্টেড মুক্তি পেলেও তেমন দর্শক সাড়া পাবে না। তবে ভারতীয় বাংলা সিনেমা এদেশে মুক্তি পেলে তা হবে আমাদের জন্য হুমকি স্বরূপ।
প্রয়োজনে আমরা রাজপথে নামব : জায়েদ খান (অভিনেতা)
হঠাৎ করে ভারতীয় চলচ্চিত্র বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য মোটেও ভালো না। আমি একজন শিল্পী হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। পরিচালকরা আমাদের অভিভাবক। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমরা মেনে চলবো। প্রয়োজনে আমরা রাজপথে নামব।
বাংলা সিনেমায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না : আহসান উল্লাহ হাসান (শ্যামলী সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক)  
ওয়ান্টেড সিনেমাটি যেহেতু থ্রিডি, সাউন্ড ভালো তাই আশা করছি দর্শক এটি দেখবে। দেশি সিনেমার মেকিং ভালো হলে দর্শক অবশ্যই দেশি সিনেমা দেখবে। এটার জন্য বাংলা সিনেমায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
একটা শো গেলে বলা যাবে কেমন যাবে : জয় (বলাকা সিনেমা ওয়ার্ল্ড-এর ব্যবস্থাপক)

আমরা এই প্রথম হিন্দি সিনেমা প্রদর্শন করতে যাচ্ছি। দর্শক এটাকে কিভাবে নিবেন তা এখনও বলতে পারছি না। একটা শো গেলে বলা যাবে কেমন যাবে।
উল্লেখ্য ২৩ জানুয়ারি থেকে শুক্রবার দেশের রাজধানীর মাল্টিপ্লেক্সেসহ ৫০-৬০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ওয়ান্টেড সিনেমাটি। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন বলিউডের পরিচালক  প্রভুদেবা। সিনেমাটি আমদানি করছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইনউইন এন্টারপ্রাইজ। এ সিনেমাটি ছাড়াও আরও তিনটি সিনেমা সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছে। এগুলো হলো- থ্রি ইডিয়টস, তারে জমিন পারধুম থ্রি



মন্তব্য চালু নেই