ঐক্য করতে যাইনি, খালেদাকে বলেছি ঘর থেকে বের হোন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঐক্য করতে যাননি জানিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘চায়ের দাওয়াত গিয়ে তার সঙ্গে আমার দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। আমি তাকে স্পষ্ট করে বলেছি, আপনি ঘর থেকে বের হোন। আপনার ঘরে সবাই আসবে আর আপনি বসে থাকবেন, সেটা হয় না। আপনিও অন্যের ঘরে যান।’
শুক্রবার (৫ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কাদের সিদ্দিকী।
‘আমাদের ওপরে কোনোকিছু চাপিয়ে দিলে যেমন আমরা শুনব না, তেমনি তাদের ওপরেও আমরা কিছু চাপিয়ে দিইনি, আমরা প্রস্তাব করেছি। আমি বলেছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার ভালোবাসা। তাকে বাদ দিয়ে আমি রাজনীতি করব না। তাকে অবহেলা করে কেউ রাজনীতি করলে তার সঙ্গেও আমরা থাকব না। বঙ্গবন্ধুকে গালাগালি করা যাবে না। তার রাজনীতি নিয়ে যদি কোনো কথা হয়, নিশ্চয় তা করবেন এবং সেটা অবশ্যই রাজনীতির সীমায় থেকে।’ বলেন তিনি।
দেশ ও জাতির প্রয়োজনে জামায়াত ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন বঙ্গবীর।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) রাতে খালেদার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় জাতীয় ঐক্য নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠকের জন্য কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে ঢুকলেও পাঁচজন সদস্য এতে অংশ নেন।
ওই বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য গঠন করতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম। তিনি তা সাদরে গ্রহণ করে আজকে এসেছেন। এ ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। ঐক্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আমাদের বলেছেন।’
এর একদিন পর অর্থাৎ শুক্রাবার (৫ আগস্ট) আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন করলেন কাদের সিদ্দিকী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিকালে আজ স্বাধীনভাবে জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা নেয়া দরকার। সেখানে যেমন জামায়াত থাকবে না, তেমনি বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত ও দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ‘গণবাহিনী’ ও থাকবে না।’
‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো ঐক্য করতে যায় নাই, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম’ জানিয়ে কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের স্ত্রী বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। আমরা উনি (খালেদা জিয়া) একটা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। আমি বলব, উনি একটা ভালো কাজ করেছেন। উনার আগে এই ডাকটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশ থেকে ফিরে এসে উনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। আসলে উনার (প্রধানমন্ত্রী) নেতৃত্বে কোনো ঐক্য হয়নি। স্বাধীনভাবে জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা নেয়া দরকার।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীকে বলেছি, জামায়াতকে ছেড়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বার বার শতবার বলা দরকার, আপনি রাষ্ট্র ও দেশের প্রয়োজনে জাতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টা নিন। যদি বারবার বলার পরেও তিনি (খালেদা জিয়া) তার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হন, তাহলে আপনা-আপনিই ঐক্যে জাতিকে পরিত্রাণের দায়িত্ব বেগম খালেদা জিয়ার কাঁধে গিয়ে পড়বে। তিনি (খালেদা জিয়া) যদি সফল হন, তিনি নেতা হবেন। আর যদি তিনি ব্যর্থ হন, তাহলে জাতিকে এই ক্রান্তি থেকে উত্তোরণের জন্য সেই দায়িত্ব অন্য কারোর ওপর যাবে। এটা বসে থাকবে না। কারণ, এটি বহমান নদীর মতো।’
দেশের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধা বলেন, ‘একাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য যেমন ছিলেন অবশ্যম্ভাবী, একজন অবিসংবাদিত নেতা; কেউ মানুন আর না মানুন-আজকে শেখ হাসিনা সেই অবস্থায় ও অবস্থানে এসেছেন। তিনি এখন বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় নেতা। তবে খালেদা জিয়াকে একেবারে বাদ দিয়ে নয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার জন্য আমাদের সবার চেষ্টা করা উচিত।’
‘বঙ্গবন্ধু ছাড়া রাজনীতি করব না, বঙ্গবন্ধুকে লালন করেই বেঁচে থাকব’, এমন মনোভাবের কথা জানিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে প্রস্তাব দিয়েছি, জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করব না। বিএনপি নেত্রীকে জাতীয় নেতৃত্ব দিতে হলে প্রথম স্পষ্টভাবে বলতে হবে-জামায়াত আর জোটে নেই।’
বিএনপি চেয়ারপারসনকে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘১৫ আগস্ট বাংলাদেশের হৃদয় চৌচির হয়ে গেছে। অঙ্গহানী হয়েছে, অঙ্গ ছেদন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ওইদিনে খালেদা জিয়ার প্রকৃত জন্মদিন হলেও তা পালন করা চলবে না এবং সেটা মানুষকে বলে করতে হবে। বলতে হবে, এই রকম একজন মহান নেতার মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত, দুঃখিত। আমরা প্রস্তাব করেছি। তারা নিশ্চয় বিবেচনা করবে। তবে কখন করবেন, তারা জানেন।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দেয়া প্রস্তাবে বেগম খালেদা জিয়া কী বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘একটি মানব সন্তান পেতে হলেও আমাদের দশ মাস অপেক্ষা করতে হয়। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। কোনো তাড়াহুড়া করিনি। নিশ্চয় আমাদের সব প্রস্তাব সবাই মানবে না। আবার আমাদের মানার মতো প্রস্তাব কেউ স্বীকার না করলে তাদের সাথেও বনিবনা হবে না। এটা অনেকটা বিয়ের ঘটকালির মতো। বিয়ে হয় উভয়ের পছন্দে, রাজনীতিও হবে সে রকম।’
সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের ডাকে আমন্ত্রণ জানালে সেখানে যাবেন কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘যাবো তো দূরের কথা, আমি তো গিয়েই আছি। আন্তরিকভাবে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য যেকোনো কাজ, ‘জামায়াত ও জঙ্গি গণবাহিনী’ ছাড়া যাদের কাছে গিয়ে মনে হবে সত্যিকার অর্থেই প্রতিকার হবে, সেখানে তো আমি গিয়েই আছি।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সমস্ত ক্ষুদ্রতা ঝেড়ে ফেলে আপনি জাতিকে একত্রিত করার চেষ্টা করেন, যেভাবে ১৯৭০ ও ’৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান করেছিলেন। তার কন্যা হিসেবে আবার আপনার ঘাড়ে-কাঁধে ও মাথায় সেই দায়িত্ব এসেছে। এই দায়িত্ব অস্বীকার করলে আগামী প্রজন্মের কাছে আপনি নিন্দিত হবেন। আমরা চাই, আপনি নন্দিত হোন।’
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বঙ্গবীরের সহধর্মিণী নাসরিন কাদের সিদ্দিকী,সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা এএইচএম আব্দুল হাই, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক হাবিবুন নবী সোহেল প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই