এ কান্না রাখবো কোথায়?

গত বছরের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ। কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনের দূরবর্তী বুংকাক এলাকা থেকে সাতজন বয়স্ক নারীকে গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী। ঘটনার পরের দিন ১১ তারিখ আরও তিনজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রশাসনের নির্দেশে। কিন্তু কেন এই বয়স্ক নাগরিকদের এভাবে রাস্তায় প্রতিবাদ করতে নামতে হলো এবং তাদের কেনই বা গ্রেপ্তার করা হলো। নমপেনের প্রতিবাদ সমাবেশ নিয়ে কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমই আগ্রহ দেখায়নি। অবশ্য আগ্রহ না দেখানোরও যথেষ্ট কারণ আছে। প্রথমত, কম্বোডিয়ার এই সমস্যা অনেক পুরনো, দ্বিতীয়ত; কম্বোডিয়ার এই ইস্যু দিয়ে মিডিয়ার টিআরপি(টার্গেট রেটিং পয়েন্ট) বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।
২০০৭ সালে নমপেনের বাংকাক লেকের পার্শ্ববর্তী বিশাল ভূমি দখল করে নেয় সরকারি বাহিনী। তখন এই জোরপূর্বক ভূমি অধিগ্রহনের কারণে কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়। প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণা বলে দখলকৃত স্থানে হাউজিং প্রকল্প চালু করা হয়, যাতে ২০১১ সালে মাত্র ৯০০ পরিবারকে আবাসন সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই ফিরে পায়নি তাদের ভূমি। প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, নমপেন সরকার অধিগ্রহন করা জমির একটা বিশাল অংশ বেসরকারি একটি কোম্পানির নামে লিখে দিয়েছে এবং ওই কোম্পানির সঙ্গে সরকারি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। আর ওই বেসরকারি কোম্পানিটি তাদের অধিকৃত গোটা এলাকা উচু দেয়াল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। পাশাপাশি বাংকাক লেকটিতে বালু আর মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে তারা। যে কারণে এখন অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়।
নিজেদের জমি ফিরে পেতে অনেক মানুষই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায় সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই প্রতিবাদ-আন্দোলনেও নিজেদের অবস্থান থেকে একটুও সরে দাড়ায়নি নমপেন সরকার। উল্টো বিভিন্ন মেয়াদে আন্দোলনকারীদের অনেককে সাজা দেয়া হয়েছে। যাদের বসবাসের জন্য নূণ্যতম ভূমিটুকুও নেই, তাদেরও আদালত থেকে আন্দোলন করার জরিমানা হিসেবে এক মিলিয়ন রিয়েল করে দিতে বলা হয়েছে। আর এই জরিমানা দিতে না পারলে এক বছরের কারাবাস করতে হবে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রতিবাদকারীদের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন বৃদ্ধা নারীকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে যারা আসামী তাদের পক্ষ থেকে কোনো আইনজীবীকে কিছু বলতে না দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর দেয়া একতরফা বিবৃতির ভিত্তিতে দোষি স্বাব্যস্ত করা হয় তাদের। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করেই আবার তাদের আদালতের বাইরে দাড়িয়ে থাকা প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। কি দোষ এই বৃদ্ধার, তা কেউ জানে না। নিজের ভূমির অধিকার চাওয়া যদি অপরাধ হয়, তাহলে এই অপরাধে আমরা সবাই অপরাধী। এই পৃথিবীর প্রাণ হিসেবে প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে তার অধিকার বুঝে নেয়ার। কৃত্তিম রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের সেই অধিকারগুলো আইন আর আদালতের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নিঃশ্বাস নেয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে। যেমন ছবির এই বৃদ্ধার চোখ বেয়ে কান্না গড়িয়ে পরছে, তবু তিনি তার সন্তানের হাত ধরে রেখেছেন। হয়তো এই বৃদ্ধাই কোনো এক বসন্তে কম্বোডিয়ার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু আজ! অশ্রুসজল সন্তানের হাত থেকে বৃদ্ধাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত রাষ্ট্রের উর্দিধারী পুলিশ বাহিনী।



মন্তব্য চালু নেই