এমন মুরগি সম্ভাবত আপনি জীবনে দেখেননি!
আপনি কি চিকেন খেতে খুব ভালোবাসেন? সুযোগ পেলেই বানিয়ে ফেলেন চিকেনের নানান ডিশ? সামনে আবার উত্সবের মরশুম। প্রচুর চিকেন খাওয়া পড়বে নিশ্চয়ই?
ব্যক্তিগতভাবে এই জিনিসটি খেতে আমার আর ভালো লাগে না। দিনের শেষে প্রাণীই তো একটা। হোক না ছোট। জীবন তো আছে তার। অবশ্য আপনি বলবেন, উদ্ভিদেরও তো প্রাণ আছে। তাহলে শাক শব্জিই বা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন? খুব বেকায়দায় পড়ব এমন তর্কের মাঝখানে পড়ে গেলে। তাই মার্জনা করে নেবেন প্লিজ।
চিকেন না বলে বরং একটু মুরগিই বলি। আমাদের ভাষাতে তো মুরগিই। অবশ্য এই ভাষার কথাতেই মনে পড়ল, মুরগি শব্দটার অর্থই তো বদলে গিয়েছে। মুরগি মানে এখন আর শুধুই প্রাণী নয়। মুরগি আসলে মানুষ! যে বোকা সেই মুরগি! যে সহজ-সরল, সেই মুরগি! যে ভুল করে কারণ, অন্যকে বিশ্বাস করে, সে মুরগি! মুরগিদের শুধু প্রাণটাই আছে। তাদের যে আর মানুশের মতো ‘হুঁশ’ নেই। তাই মেনে নেওয়া ছাড়া ওরা আর কীই বা করতে পারে ওরা। আপাতত যে কথাগুলো বলার – তবে, এটা মানুষ মুরগি নয়, প্রাণী মুরগির কথা বলবো। আজ পর্যন্ত তো অনেক মুরগির মাংস খেলেন। অনেক মুরগিই জীবনে দেখলেন। গ্রামের দিকের মানুষ হলে হয়তো আপনি বাড়িতে মুরগিও পুষেছেন। কিন্তু হলফ করে বলতে পারি, এরকম মুরগি আপনি সম্ভাবত দেখেননি।
এই মুরগির নাম ‘আয়াম সেমানি’। বলতে পারেন ল্যাম্বার্জিনি গাড়ির মতো মুরগি। একেবারে রয়্যাল ব্যাপার স্যাপার। গোটা পৃথিবী খুঁজলেও এই মুরগি আর দ্বিতীয় কোথাও পাবেন না। বলতে পারেন কৃষ্ণাঙ্গ মুরগি। মুরগি মানে আপনার চোখে ভেসে আসে সাদা, খয়েরি, লালচে, কালো ছোপ ছোপ অথবা হলদেটে রঙের। কিন্তু আয়াম সেমানি একেবারে কৃষ্ণাঙ্গ মুরগি। এর গোটা শরীর কালো! মেঘ কালো, আঁধার কালো, কৃষ্ণ কালো, আর মুরগি কালো হতে পারে না!
এ পৃথিবীর ইন্দোনেশিয়াতেই পাওয়া যায় এই আয়াম সেমানি মুরগিকে। এর গায়ের সব কিছু রঙ কালো। গায়ের পালক কালো। চামড়া কালো। ঠোঁট, নখ, ঝুঁটি, মুখ, জিভ, এমনকি শরীরের ভিতরের মাংস, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এমনকি হাড় পার্যন্ত কালো! কালো বলে কালো? একেবারে কুচকুচে কালো। ইন্দোনেশিয়ায় এই মুরগি অনেক ধার্মিক কারণেও ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীকালে হল্যান্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্র আর স্লোভাকিয়াতেও এই ধরণের মুরগির জন্ম দেওয়া হচ্ছে হাইব্রীড করে। আমাদের দেশের মধ্যপ্রদেশেও এর হাইব্রীড করা হয়। এখানে নাম করকনাথ চিকেন।
মনে প্রশ্ন আসছে হয়তো আপনার যে, এই আয়াম সেমানি ডিম দেয় কী রঙের আর রক্তের রঙটাই বা কী? তাই তো? না, রক্তটা লাল। তবে, সেটাও বেশ গাঢ় লাল। কালচে লাল বা খয়েরি ধাঁচের বলতে পারেন। আর ডিমগুলো বেশ কালো ধরনের। তবে, বাদামি ধাঁচের। আসলে ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় ভাষায় আয়াম শব্দের অর্থ হল মুরগি। আর সেমানি শব্দের অর্থ হল কালো। ইন্দোনেশিয়ার জাভায় পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জেনেছেন, আয়াম সেমানিরা এই পৃথিবীতে অন্তত ৯০০ বছর আগে থেকে রয়েছে। অনেক অনেক গল্প এই মুরগিকে নিয়ে। সেখানকার মানুষ বিশ্বাস করে এই মুরগি সৌভাগ্য এনে দেয় জীবনে। আয়াম সেমানির মাংসতে এত বেশি আয়রন থাকে, যা অন্য কোনও মাংসে নাকি থাকে না। গর্ভবতী মহিলারা এই মুরগির মাংস খেলে, তাঁর শরীর ভালো থাকে। সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। এবং তাতে তাঁদের সন্তানও বুদ্ধিমান এবং শক্তিমান হয়!
আয়াম সেমানি হল সেই মুরগি যা সম্ভাবত বিশ্বের সবথেকে দামি মুরগি! হ্যাঁ, আমেরিকাতে আজ থেকে ১৫ বছর আগেও সচরাচর কোথাও এই মুরগি একটি পাওয়া গেলে, তার দাম নিদেন পক্ষে হত আড়াই হাজার ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় দাম হবে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার মতো। কালো বাজারে তো কখনও কখনও এর দাম প্রায় তিন লাখ টাকাও উঠে যায়! আজকের দিনে এক-একটা মুরগির দামও তিন লাখ টাকা! এরপর কাউকে মুরগি বলার আগে একবার ভেবে নেবেন। না হলে আয়াম সেমানি আপনার দিকে হয়তো কালো দাঁত দেখিয়েই বিকট হাসবে। জিনিউজ
মন্তব্য চালু নেই