এবার ‘সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ’!

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত সাড়ে সাত বছরে দলটির নামের সঙ্গে মিল রেখে আত্মপ্রকাশ করেছে অভিনব নামধারী শতাধিক সংগঠন। কেন্দ্রীয় অনেক নেতার আশীর্বাদ পাওয়ার সুযোগ থাকায় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে এসব দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় উত্তরোত্তর এমন দলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন ‘সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ’। অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ব্যবহার করে এ সংগঠনটি গড়েছেন রনি আহম্মেদ নামে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে এ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন অফিস পাড়ায় ও ব্যবসায়ীদের কাছে। সম্প্রতি তার একটি ভিজিটিং কার্ড এসেছে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে। এতে তার নামের সঙ্গে লেখা রয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ ঢাকা জেলা কমিটি। আর সংগঠনটির স্থায়ী কার্যালয় হিসাবে ঠিকানা লেখা রয়েছে কালীগঞ্জ বাজার, চৌধুরী মার্কেট, কেরানীগঞ্জ ঢাকা-১৩১০। কার্ডটিতে তার দুটো মোবাইল ফোন নম্বরও দেওয়া রয়েছে। তবে ওই নম্বর দুটিতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও নম্বর দুটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে নানা জায়গায় চাঁদাবাজি ও সুবিধা পাওয়ার আশায় দলটির নামের শেষাংশ অর্থাৎ ‘লীগ’ শব্দটি যথেচ্ছ ব্যবহার করে কথায় কথায় দল বানিয়ে ফেলছেন কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তি। এসব সংগঠন নিজেদের আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সহযোগী বা ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবেও দাবি করে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এসব সংগঠনের বেশিরভাগই ব্যানার সর্বস্ব, কোনও কোনও সংগঠনে ৫ জন নেতা-কর্মীও নেই। মূল দল আওয়ামী লীগ থেকে এগুলোর কোনও স্বীকৃতিও নেই। তবুও এরা নিজেদের ব্যানারে ‘লীগ’ শব্দটি ব্যবহার করে এবং মাঝে মাঝে প্রেসক্লাব বা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠান বা সংবাদ সম্মেলনের নামে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করছে। কিন্তু, সব জেনেও এগুলোর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় কিছু নেতা নিজেদের প্রচারের স্বার্থে এসব সংগঠনের অনুষ্ঠানে নিয়মিত যাচ্ছেন এবং বক্তৃতাও করছেন। এর ফলে সুবিধাবাদী দলীয় কর্মীরা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করে একাধিক পকেট সংগঠন বানানোর পর এখন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামেও সংগঠন বানিয়ে ফেলেছে।

আত্মপ্রকাশ ঘটা এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় সংসদ, আওয়ামী সমবায় লীগ, আওয়ামী তরুণ লীগ, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, ডিজিটাল ছাত্রলীগ ইত্যাদি নাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বলেন, ‘দলের কিছু সমর্থক নামসর্বস্ব কিছু সংগঠন গড়ে তুলে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। ক্ষমতায় আসার পর এসব সংগঠন গজিয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, এটাও সত্যি আমাদের কোনও কোনও নেতা এসব সংগঠনের অনুষ্ঠানে যান। সেখানে বক্তব্য দিয়ে তাদের ঝিইয়ে রাখেন। যা সত্যিই দুঃখজনক।’

এসব সংগঠন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা এ সংগঠনগুলোকে নিজেদের সংগঠন নয় বলে জানান। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতীলীগ। ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে রয়েছে ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগ। এছাড়া কিছু সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনও রয়েছে আমাদের সমমনা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, কিছু নামসর্বস্ব সংগঠনের খবর শুনি। এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, এসব সংগঠনের ব্যাপারে কী করা যায় তা নিয়ে আমাদের ফোরামে আলোচনা চলছে। শিগগিরই এগুলোর লাগাম টানা হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, ক্ষমতার আবর্তে এসব ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে উঠেছে। এগুলো আওয়ামী লীগের স্বীকৃত নয়। তিনি বলেন, এসব সংগঠনের গড়ে উঠার ক্ষেত্রে লাগাম টানার চেষ্টা চলছে।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।



মন্তব্য চালু নেই