এবার বাস্তবেই ধরা পড়ল এই সিড্রাগন!
মিথলজির কোনো প্রাণী নয় রুবি সিড্রাগন। তবে এরা সাধারণত সিড্রাগনের জাত ভাই। কিন্তু রুবি সিড্রাগন এতটাই বিরল যে তাকে মিথলজির প্রাণী বলেই মনে করতেন অনেকে। অবশেষে কল্পনার অবসান ঘটলো। বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো এই প্রাণীটিকে ক্যামেরায় ধরতে সক্ষম হলেন।
অদ্ভুত রংয়ের ছটা এর দেহে। সিহর্সগুলোর মতোই দেখতে অনেকটা। প্রথমবারের মতো এর দেখা মিললো। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রেচার্চি আর্কিপেলাগোতে এই ড্রাগনের সন্ধান মিলেছে। ১০ ইঞ্চি দীর্ঘ তার দেহ। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে রুবি সিড্রাগনকে নতুন প্রজাতির প্রাণী হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। সিড্রাগন প্রজাতির তৃতীয় সদস্য হিসাবে পরিচিতি পায়। ১৫০ বছর আগে একে প্রথম আবিষ্কার করা হয় বলে ইতিহাস রয়েছে।
কিন্তু শত বছর আগে রুবি সিড্রাগনের আবিষ্কার বাস্তবে সম্ভব হয়নি। মৃত প্রাণীদের জাদুঘরে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে একে শনাক্ত করা হয়। সাগরের গভীরে যেখানে এরা থাকে সেখান থেকে হয়নি এর আবিষ্কার।
স্ক্রিপস ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির জীববিজ্ঞানী গ্রেগ রাউস বলেন, সাগরে প্রাণীবৈচিত্র্যের একটা লুকিয়ে থাকা জগত রয়েছে। এই ড্রাগনটির সন্ধান পেয়েছেন জোসেফিন স্টিলার এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মিউজিয়াম গবেষক নেরিদা উইলসন। তাদের এই আবিষ্কার বড় আকারের ক্যারিশমেটিক রুবি সি ড্রাগনকেই তুলে ধরেছে।
এই ড্রাগনকে খুঁজে পাওয়ার সহজ কথা নয়। বিশাল সাগরে এর দেখা মেলা প্রায় অসম্ভব। এই প্রজাতির নাম ফাইলোপটেরিক্স ডিওয়াইসি। এটি সাধারণ সিড্রাগনের মতোই আচরণ করে। দেখতেও অনেকটা তাদের মতোই। সাধারণ সিড্রাগনের দেহ অনেকটা পাতাবহুল। এদের অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণের উপকূলে ঘুরতে দেখা যায়। এরা সাগরের ১০০ ফুট নিচে ঘাস ও কোরাল রিফে ঘোরাঘুরি করে।
এই প্রজাতিকে সংজ্ঞায়িত করেছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে সাগরের ১৭০ ফুট নিচে এটাকে দেখা যায়। ধারণা করা হয়, রুবি ড্রাগন আরো গভীরে বাস করে।
২০১৬ সালের এপ্রিলে রাউস এবং তার সহকর্মীরা প্রত্যন্ত রিচার্চি আর্কিপেলাগোতে যান। এই প্রাণীটির খোঁজ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। সবমিলিয়ে এটাকে খোঁজার জন্য একদিন সময় ছিল হাতে।
রিমোট কন্ট্রোলচালিত মিনি সাবমেরিনের ব্যবহারে চারটি ডাইভ দেওয়া হয় গভীরে। তারা সাগরের ১৬৭ ফুট নিচে দুটো রুবি ড্রাগনকে চিহ্নিত করতে পারেন। বিজ্ঞানীদের দলটি খুবই ভাগ্যবান। যতবারই ডাইভ দেওয়া হোক না কেন, এই ড্রাগনের খোঁজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
বিজ্ঞানীদের ফুটেজে দেখা গেছে, রুবি সি ড্রাগনের আচার-আচরণ। এটা নিজের গোত্রের অন্যান্য প্রাণীদের থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে ক্যামোফ্লেজ ব্যবহার করে। গভীর অন্ধকারে শিকারীদের হাত থেকে বাঁচার অনন্য উপায় রয়েছে এর কাছে। আঁকাবাঁকা লেজ দিয়ে অন্য কিছু ধরতে সক্ষম তারা। কিন্তু সাধারণ সিড্রাগন লেজ দিয়ে কিছু ধরতে পারে না।
আশা করা হচ্ছে, এই অদ্ভুত ও বিরল প্রাণীটিকে রক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ। এই মুহূর্তে রুবি ড্রাগনের সংখ্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই আমাদের, বলেন রাউস। সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
মন্তব্য চালু নেই