এফটিএ করতে চায় মালয়েশিয়া
বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের প্রস্তাব দিয়েছেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জহির হামিদি।
সোমবার কুয়ালালামপুরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠককালে এ প্রস্তাব দেন মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়মিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ায় যেসব বাংলাদেশির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের পুনঃনিয়োগের আওতায় নিয়ে কাজ করার অনুমতি দিতে দেশটি সম্মত হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
মালয়েশিয়া সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সোমবার কুয়ালালামপুরে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০১৬’এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জহির হামিদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন।
সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বিষয়ক মন্ত্রী দাতো শ্রী মুস্তফা বিন মোহাম্মেদ, ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নূর আশিকিন মোহা. তাইয়েব, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অ্যান্ড কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মো. আলমগীর জলিল এবং মালয়েশিয়ায নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের(এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, ডিসিসিআইয়ের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ ইব্রাহিম, প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ ইভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট কে এম তানজিব উল আলম এবং এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মীর নাসির আহমেদ সম্মেলনে যোগ দেন।
এ ছাড়া সামিটে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করেন। মালয়েশিয়ার শিল্প উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা সামিটে অংশ নেন।
কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইকনমিক জোন অথরিটি, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি, এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে এ সামিট হচ্ছে। ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ার হাইকমিশন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি এখন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, এ বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করতে আহমাদ জহির হামিদির প্রতি আহ্বান জানা তোফায়েল আহমেদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের মালয়েশিয়ায় কাজ করার সুযোগ দিতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়নে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষের কথাও বাণিজ্যমন্ত্রীকে জানান।
সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সব ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাসী বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করছে। গত বছর বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৫১ ভাগ জিডিপি অর্জন করেছে। গত ১০ বছরে গড় জিডিপি অর্জন ছিল ৬ ভাগ। চলতি বছর ৭ দশমিক ২ ভাগ অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি এখন ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে ২০২১ সালে রপ্তানি আয় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সরকার বিস্তারিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগবান্ধব নীতির ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে দেশের বিভন্ন স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। মালয়েশিয়ানরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তারা বাংলাদেশের বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের কথা উল্লেখ করে এ দেশে বিনিয়োগ ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
মন্তব্য চালু নেই