এখন কথা বললে বউ মাইর দিবে : সাকিব

তারেক মাহমুদ : ফোন তিনি ধরেন। ধরে কথা-টথাও বলেন। কিন্তু সবই না লেখার শর্তে। লেখা যাবে, এমন কিছুই নাকি বলা যাবে না। আইপিএলের দু-তিন ম্যাচ যাওয়ার পর মুঠোফোনে একদিন সে রকমই কথা হলো সাকিব আল হাসানের সঙ্গে, যার কিছুই লেখা যায়নি। তবে ফোন রাখার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ভালো খেললে লেখার জন্যও কিছু বলবেন।

উপলক্ষটা চলে এল গত রোববার রাতে। গুজরাট লায়ন্সের কাছে কলকাতা নাইট রাইডার্স শেষ পর্যন্ত হারলেও সাকিবের ব্যাটে অপরাজিত ৬৬ রান, বোলিংয়ে ৩৮ রানে ১ উইকেট। আগের পাঁচ ম্যাচে রান করেছেন ২০, উইকেট ২টি। গোপনে ঢাকায় এসে ‘গুরু’ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের টিপস নিয়ে গিয়েই ভোজবাজির মতো বদলে গেল পারফরম্যান্স। এবার তো আর বলা-লেখা কোনোটাতেই বাধা থাকার কথা নয়।

সাকিব ফিরে যাওয়ার পরদিনই ছয় মাসের কন্যা আলায়না হাসান অউব্রেকে নিয়ে স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরও উড়ে যান কলকাতায়। সেটারই প্রভাবে কিনা সোমবার রাতে মুঠোফোনে বেশ চনমনে পাওয়া গেল সাকিবকে। কোনো একটা শপিং মলে ছিলেন সম্ভবত। আবার বলছিলেন মুভি দেখতে যাবেন, ‘এখন কথা বললে তো বউ মাইর-ই দিবে, মুভি দেখতে যাচ্ছি…।’ কপট-আতঙ্কের কথায়ও আনন্দের বাতাবরণ। প্রিয় মানুষদের কাছে পাওয়ার আনন্দ, নিজেকে ফিরে পাওয়ারও কি নয়!

আনন্দের রেশ কাটার আগেই ঢুকে পড়া গেল আসল প্রসঙ্গে-
* অবশেষে আইপিএলে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন। আত্মবিশ্বাস নিশ্চয়ই বেড়েছে একটু…
সাকিব: রান করলে তো সবারই আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তবে আত্মবিশ্বাসে আমার কখনোই সমস্যা ছিল না। আসলে অনেক সময় আত্মবিশ্বাস থাকলেও কিছু জিনিস ঠিকঠাক মতো হয় না। সেগুলো ঠিক করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আবার অনেক সময় আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও কাজ করতে হয়। একেক সময় একেকটা…সবই পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।

* ঢাকা ঘুরে গিয়েই রান পেলেন। কোচ সালাউদ্দিনের সঙ্গে দুটি সেশনই কি তাহলে কাজে লাগল?
সাকিব: ওদিনও কিন্তু প্রথমে অত ভালো ব্যাটিং করিনি। ধরুন যদি রান না করতাম, তখন মনে হতো এটা কাজে আসেনি। যেহেতু রান করেছি, বলতে হবে কাজে লেগেছে। সত্যি বলতে কি ব্যাপারটা পুরোই মানসিক।

* কখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, ব্যাটে রান ফেরাতে এ রকম কিছু করা দরকার?
সাকিব: ঢাকায় যাওয়ার দু-চার দিন আগে সিদ্ধান্ত নিই যে, যাব। মনে হলো যা করলে ভালো লাগবে, নিজের শান্তি  লাগবে—এ রকম একটা কিছু করতে হবে। এ কারণেই যাওয়া।
বিরুদ্ধ স্রোতে সব ক্রিকেটারকেই কখনো না কখনো সাঁতরাতে হয়। কেউ জেতে, কেউ হারে। সাকিব বরাবরই প্রথম দলের লোক। তবে হতাশা তাঁকেও পোড়ায়। নইলে আগের আইপিএলগুলোর সঙ্গে এবারেরটার তুলনা করতে গিয়ে কেন কণ্ঠে বেজে উঠবে না-পাওয়ার সুর, ‘আগের বছরগুলোতে প্রতি ম্যাচেই উইকেট পেয়েছি। এবার তা পাচ্ছি না। ব্যাটিংয়ে তো অবশ্যই সন্তুষ্ট নই। তিনটি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলাম। সুযোগ পেয়েও ভালো করতে না পারলে তো সেটা সমস্যাই।’

আইপিএলে এটা সাকিবের ষষ্ঠ আসর। ভারতের আন্তর্জাতিক মোড়কের এই ঘরোয়া টুর্নামেন্টে টিকে থাকার প্রতিযোগিতা কত কঠিন, তা এত দিনে ভালোই বুঝে গেছেন। সে প্রসঙ্গ তুললে একটু সময় নিয়ে বললেন, ‘ভালো না খেললে কারওই ভালো লাগে না। আর আমার জন্য প্রতিযোগিতাটা এখানে একটু বেশি। পারফর্ম করার চাপ থাকেই।’

গত ম্যাচে সেই চাপ কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠেছেন। এখন পরের ম্যাচগুলোয়ও তার ব্যাটের দিকে আগ্রহভরে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ আর কলকাতার কোটি দর্শক। তবে এই আইপিএলে সাকিবের কারণে যতবার বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয়েছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি উচ্চারিত হয়েছে মুস্তাফিজুর রহমানের কীর্তিতে। সাকিবকেও নিশ্চয়ই মুস্তাফিজকে নিয়ে কেকেআর-সতীর্থদের কৌতূহলের জবাব দিতে হয়। সাকিব অবশ্য অন্য কথাই বললেন, ‘এখানে খেলা বা খেলোয়াড় নিয়ে তেমন কথা হয় না আমাদের মধ্যে। এ নিয়ে মিডিয়া আর দর্শকেরাই বেশি আগ্রহী। তবে মুস্তাফিজের প্রশংসা সবাই করছে। খুবই ভালো বল করছে ও।’

কাউন্টি খেলতে মুস্তাফিজের সাসেক্সে যাওয়া নিয়ে নানা রকম আলোচনা হচ্ছে। বেশি বেশি খেলে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, চোটের শঙ্কা, হোম সিকনেস—কত কথা! এ ব্যাপারে মুস্তাফিজকে সবচেয়ে ভালো পরামর্শ সাকিবই দিতে পারতেন। আইপিএল, কাউন্টি, বিগ ব্যাশ, সিপিএল, এসএলপিএল, পিএসএল—কোথায় খেলেননি তিনি! তবে অনেক চেষ্টা করেও কোনো পরামর্শ বের করা গেল না সাকিবের মুখ থেকে। বারবার বলটা মুস্তাফিজের কোর্টেই পাঠালেন, ‘মুস্তাফিজ তো আর ওখানে চার দিনের ম্যাচ খেলবে না। তবে এটা ওর জীবন, ও-ই ভালো বুঝবে কী করতে হবে। এগুলো যার যার শরীর ও মনের ওপর নির্ভর করে। আমি পরামর্শ দেওয়ার কেউ নই।’

এটাকে স্বার্থপরতা বলতে পারেন। অনুজ এক ক্রিকেটারকে একটু পথ দেখালে কী হয়! কিছু হয়তো হয় না। কিন্তু সাকিব যে এত দূর এসেছেন, সেটা তো একা হেঁটেই! মুস্তাফিজকে তা মনে করিয়ে দিয়ে যেন স্বাবলম্বী হওয়ারই পরামর্শ দিলেন জাতীয় দলের এই অগ্রজ, ‘আমার বেলায় আমিই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কী করব। এখানেও একমাত্র মুস্তাফিজই জানে, ও কী পারবে আর কী পারবে না। ওর সিদ্ধান্ত ওকেই নিতে হবে।’ -প্রথম আলো



মন্তব্য চালু নেই