এক নিরক্ষর গৃহবধূ, যার তেঁতুল বেচে বছরে আয় ৭ লাখ টাকা
স্রেফ তেঁতুল আর মহুয়া ফল বিক্রি করে বছরে রোজগার ৭ লাখ টাকা। শুধু মহিলা মহলেই নয় গোটা অঞ্চলের চোখে উদাহরণ হয়ে থাকছেন ছত্তিশগড়ের সেলভা গ্রামের নিরক্ষর গৃহবধূ ফুলকেরিয়া মিঞ্জ।
একদা চরম দারিদ্র্যর সঙ্গে ছিল তার নিত্যসংগ্রাম। আড়াই দশক পার করে সেই ফুলকেরিয়া দেবীর সৌজন্যে বছরে অন্তত ৫০ দিনের কাজ পান গ্রামের পুরুষরা। তার এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে তুখোড় ব্যবসায়িক বুদ্ধি এবং প্রবল পরিশ্রম।
১৯৯০ সালে নিরক্ষর অনিল মিঞ্জের সঙ্গে ঘর বাঁধেন ফুলকেরিয়া। ছোট্ট সংসারে অর্থাভাব ছিল প্রবল। এ সময় পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নেন ওই বধূ।
খুচরো আনাজের বেচাকেনা দিয়ে রোজগারে হাতেখড়ি। পরে ২০০৮ সালে মহিলা সমবায় ব্যাংক থেকে মাত্র ৯ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পাইকারি সব্জির ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
পাশাপাশি হিসাবপত্র বুঝতে নিজ উদ্যোগে লেখাপড়ার তালিম নেন। ক্রমে ব্যবসার বহর বাড়ায় ২০১১ সালে। ব্যাংক থেকে ফের ১.২৮ লাখ টাকা ধার নেন ফুলকেরিয়া।
সঠিক ব্যবসায়িক কৌশল এবং পরিশ্রমের ফলে আরো উন্নতি ঘটে। তেঁতুল, মহুয়া, কুল, ডুমুরের মতো মৌসুমি ফল-সব্জির পাশাপাশি ধানের ব্যবসাতেও দারুণ লাভ হয়। বাত্সরিক আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬-৭ লাখ টাকা।
ফুলকেরিয়ার সাফল্যে রয়েছে তার স্বামীর অবদানও। ব্যবসা নিয়ে স্ত্রী যখন ব্যস্ত অনিল সেই সময় দুই হাতে সংসার সামলেছেন। নিজ কাজের সঙ্গে নিজেদের একফালি জমিতে ফসল ফলিয়েছেন। নিজেরা নিরক্ষর হলেও তিন সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলতে ভালো স্কুলে পড়িয়েছেন এই দম্পতি।
আর্থিক সুখ এলেও শোক পিছু ছাড়েনি ফুলকেরিয়ার। ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বড় ছেলে অনুজ ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পথ দুর্ঘটনার শিকার হন।
তার মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছিলেন ফুলকেরিয়া। পরে দুই মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আরো একবার নিয়তিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি হয়েছেন। নিরন্তর কর্মব্যস্ততা হয়ে উঠেছে তার বেঁচে থাকার ইউএসপি।
মন্তব্য চালু নেই