এক ঠিকানায় ১২০০ পরিবার, চিঠি পৌঁছাতে ভোগান্তি!
অদ্ভুত এক জায়গা যেখানে ঠিকানা লেখার ধারাই আলাদা! নামের পরই লিখতে হয় স্থানীয় ক্লাবের নাম। পিনকোড হিসেবে বাড়ির নম্বরের চেয়েও জরুরি মোবাইল নম্বর। তা নাহলে চিঠি পাবেন না ভারতের বিধাননগরের ১১৫, দত্তাবাদের বাসিন্দারা!
কারণ, বিধাননগর পুরনিগমের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১২০০ পরিবারের ঠিকানা একটাই— ১১৫, দত্তাবাদ! ফলে বাড়ি বাড়ি চিঠি দিতে গিয়ে নাজেহাল হন ডাককর্মীরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, জরুরি কোনো চিঠি আসবে জানা থাকলে সিসি ব্লকের ডাকঘরে গিয়ে আগাম জানিয়ে আসেন বাসিন্দারা। সেভাবেই খাতায় প্রাপকের মোবাইল নম্বর লিখে রাখেন ডাককর্মী। চিঠি এলে কখনো ফোন, কখনো বা ‘মিসড্ কল’। এরপর ডাকঘরে গিয়ে চিঠি নিয়ে আসেন বাসিন্দারা। ২১৪, ২২৭, ২২৮, ২৬০, ২৬২, ২৯২ দত্তাবাদের ঠিকানাতেও একই সমস্যা। তবে সেখানে একই ঠিকানায় থাকা পরিবারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
পুরনিগম সূত্রের খবর, ওই এলাকা আগে দক্ষিণ দমদম পুরসভার আওতায় ছিল। সেখানে একটি রেশন দোকান রয়েছে, যেটির হোল্ডিং নম্বর ১১৫, দত্তাবাদ। সেই ঠিকানাতেই আদি বাসিন্দাদের চিঠি পৌঁছত। তাঁরা ওই দোকান থেকেই চিঠি নিয়ে যেতেন। পরবর্তীকালে জনবসতি বাড়তে থাকে। আদি বাসিন্দাদের অনেকেই জলাভূমি এলাকা দখল করে একের পর এক ঘর তৈরি করে ভাড়া দেন বলে অভিযোগ। তবে দখল-জমির উপরে সেই সব ঘরের ঠিকানাও রয়ে যায় ১১৫, দত্তাবাদ।
এক ডাককর্মীর কথায়, ‘‘১১৫, দত্তাবাদের ঠিকানায় ১০ হাজারের বেশি মানুষের বাস। আবার একই নামের একাধিক লোক রয়েছে। গলিও একই। কয়েকজনকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে চিনি। কিছু ক্ষেত্রে ক্লাবগুলো চিনিয়ে দেয়। ওখানে দিনে ৫০টি চিঠি গেলে বেশিরভাগই ফিরে আসে। ’’
বুধবারই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দু’টি ‘ওয়েলকাম কিট’ নিয়ে গলদঘর্ম হয়েছেন এলাকার ডাককর্মী। কারণ, সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় স্থানীয় ক্লাব বা মোবাইল নম্বরের উল্লেখ নেই। এসব ক্ষেত্রে ওয়ার্ড অফিস বা রেশন দোকানই ভরসা।
স্থানীয় বাসিন্দা অলোক দাস বলেন, ‘‘জনধন যোজনায় অনেকেই চেকবই পাননি। ব্যাংকের ম্যানেজারের কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৫০০ টাকার পরিবর্তে প্রতিবেশীদের ১০০০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে বলুন। কারণ, ব্যাংকের কিট, চিঠি পাঠাতেই ৪০০ টাকা চলে যায়। ’’
সিসি ব্লকের পোস্টমাস্টার তপন কুমার কাইত স্বাভাবিকভাবেই বলেন, ‘‘প্রতিটি বাড়ির আলাদা নম্বর হলে খুব সুবিধা হয়। গ্রাহকেরাও চিঠি পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হন। ’’
সমস্যা সম্পর্কে অবহিত স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মল দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘পুরবোর্ডের বৈঠকে বিষয়টি জানিয়েছি। এভাবে চলতে পারে না। ’’ আর মেয়র সব্যসাচী দত্তের কথায়, ‘‘সমস্যার কথা জানি। কিছু তো একটা করতেই হবে। ’’
সূত্র: এবেলা
মন্তব্য চালু নেই