একসময়ের কোটিপতি এখন চা বিক্রেতা!
একেই বলে নিয়তি! বছর দু’য়েক আগেও মহম্মদ সাউইরি ছিলেন গাজার অন্যতম ধনকুবের। গাজার মিলিয়নেয়রদের মধ্যে একজন। আর পাঁচটা ধনবানদের মতোই বিলাসবহুল জীবন ছিল তাঁর। ডলার খরচ করতেন পানির মতো। বিলাসবহুল বাড়ি। বিদেশি গাড়ি। দামি স্মার্টফোন।
সব মিলিয়ে সাউইরির জীবনে বিলাসিতার অভাব ছিল না। হবু স্ত্রীরকে কিনে দিয়েছিলেন দামি ফোন। সেই মানুষটাই এখন গাজার একটি পার্কে চা বেচছেন। দিন খুব ভালো হলে রোজগার হয় ৫ ডলার। স্মার্টফোন তো দূর-অস্ত খরচ কমাতে হবু স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় চিঠিতে।হ্যাঁ, যুদ্ধোত্তর গাজায় ধনকুবের মহম্মদ সাউইরি এখন মামুলি চা বিক্রেতা।
কেন এই হাল সাউইরির?
হাইস্কুল ড্রপ-আউট সাউইরি ছিলেন গাজার টানেল মিলিয়নিয়ার মাত্র ১৭ বছর বয়সে কাজ শুরু করেছিলেন। তিন বছরেই হয়ে যান ধনকুবের। রাজনৈতিক অশান্তিই তাঁকে ক্ষমতার গজদন্ত মিনার থেকে এক ধাক্কায় ফেলে দিয়েছে রাজপথে। এক
সময় গাজার সঙ্গে মিশরের বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত সুড়ঙ্গ। কয়েক হাজার মানুষের মতো সাউইরিও সুড়ঙ্গের ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে ওঠেন অচিরেই। গাজা থেকে সুড়ঙ্গের সাহায্যে গরু, চিড়িখানার বিভিন্ন জন্তু, সিমেন্ট, সোডা, গাড়ি ইত্যাদি পাঠানো হত মিশরে। এই ব্যবসায় রাতারাতি ধনী হয়ে যান মহম্মদ সাউইরি।
কিন্তু সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কারণ যুদ্ধ। ইসরাইলের হানায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে গাজা। গত এক বছরে গাজায় বেকারত্ব বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। যুদ্ধের জেরেই গাজার সঙ্গে সুড়ঙ্গ বাণিজ্যে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মিশর। মিশরের বক্তব্য, ওই সুড়ঙ্গ দিয়েই হামাস যোদ্ধাদের পাঠানো হচ্ছে মিশরে।
এমনকি যোদ্ধাদের নানা অস্ত্রও ওই সুড়ঙ্গ দিয়েই পাচার করা হচ্ছে অবাধে। তাই সুড়ঙ্গ বাণিজ্য কার্যত বন্ধই করে দিয়েছে মিশর। আর এতেই বিপদে পড়েন সাউইরি। রাতারাতি রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একসময়ের ধনকুবের এখন ঠেলা গাড়িতে চা, কফি, আইস ক্রিম বিক্রি করেন।
মায়ের থেকে ৬৫ ডলার ধার করে গাজার একটি পার্কে একফালি জায়গা কিনেছেন সাউইরি। চা বিক্রিতে তাঁর সঙ্গ দিচ্ছে তাঁর ছোট্ট ভাইপোও। একে একে বিক্রি করেছেন সব কিছু। গাড়ি, বাড়ি, স্মার্টফোন, কম্পিউটার– সব কিছু। আজ তিনি নিঃস্ব।
শুধু সাউইরিই নন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় এখন একসময়ের বহু ধনী ব্যক্তিরই পেশা চা, কফি, আইস ক্রিম, খবরের কাগজ বিক্রি। কেউ কেউ তো দায়ে পড়ে পরিবারের লোকেদের যৌন ব্যবসাতেও নামাতে বাধ্য হচ্ছেন। মাত্র ৫ ডলারের বিনিময়ে শিশুরা বেছে নিচ্ছে দেহ ব্যবসা।
পেটের জ্বালা, বড় জ্বালা। জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ সাউইরির আর্তনাদ, ‘ ইসরাইল তার ক্ষমতা দিয়ে আমাদের গ্যাস ঢেলে তো মেরে ফেলতে পারে। এভাবে আর বাচিয়ে রেখে লাভ কী শিশুরা খিদের পেটে নিজেদের পায়খানা খাচ্ছে। এভাবে মানুষ বাঁচতে পারে!’ -অন্য দিগন্ত/নিউইয়র্ক টাইমস
মন্তব্য চালু নেই