একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা ও ছেলে!

মলি রাণী কুণ্ডু, বয়স ৩৭। আরেকজন মৃন্ময় কুমার কুণ্ডু, বয়স ১৬। দুজনেই এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। আরও বিষয় আছে। দুজনের সম্পর্ক মা-ছেলে। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার গালিমপুর গ্রামের ঘটনা এটি। দুজনেই বাগাতিপাড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। মলি কুণ্ডু উপজেলার গালিমপুর গ্রামের মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবব্রত কুমার কুণ্ডু ওরফে মিন্টুর স্ত্রী।

আজ রোববার দুপুরে বাগাতিপাড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মা মলি আর ছেলে মৃন্ময় ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা দিচ্ছে। কেউ কারও দিকে খেয়াল করছে না। নিজের মতো করে লিখে চলেছে মা ও ছেলে। পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। মলি রাণী জানান, নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুরের অসিত কুণ্ডুর মেয়ে তিনি। সংসারের প্রয়োজনে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা বিয়ে দিয়ে দেন বাগাতিপাড়ার মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবব্রত কুমারের সঙ্গে।

পরে আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। সংসারের কাজের চাপে খাঁটি গৃহিণী হয়েই ছিলেন। এর মাঝে তাদের দুটি সন্তানের জন্ম হয়। ওরা পড়ালেখা শুরু করে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওদের পড়াতে বসতে হয়। বড় ছেলে মৃন্ময় কুমার কুণ্ডু বাগাতিপাড়া মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে কারিগরি শাখায় বিল্ডিং মেইনটেনেন্স ট্রেডে নবম শ্রেণিতে ওঠে। আর ছোট ছেলে পাপন কুণ্ডু তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠে।

মলি বলেন, ‘ওদের পড়াতে গিয়ে অনুভব করি, ছেলেদের পড়াতে হলে নিজেকে আরও পড়ালেখা করতে হবে। নইলে স্বামীর সামান্য উপার্জনে ছেলেদের গৃহশিক্ষক দেওয়া সম্ভব হবে না।’ আর এ জন্য তিনি তাঁর স্বামীর কাছে নতুন করে পড়ালেখার অনুমতি চাইলেন। স্বামী রাজি হয়ে গেলেন সেই সঙ্গে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। এভাবেই তিনি নতুন করে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করলেন। তিনি বাগাতিপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে কারিগরি শাখায় ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডে ভর্তি হন। মলি কুণ্ডু বলছিলেন, ‘ভাগ্যক্রমে ছেলের সঙ্গেই এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হলো। দুজন একই বই পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি।’

মা হাসতে হাসতে বললেন, ‘ভেতরে-ভেতরে আমাদের বেশ প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে যায়। ছেলে ঘুমিয়ে পড়লেও আমি রাত জেগে পড়েছি। ছেলে টের পেলে সে-ও ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসত।’ মৃন্ময় বলে, ‘প্রথম প্রথম একটু বিরক্তি লাগলেও পরে মায়ের পড়ালেখায় উৎসাহ দিয়েছি।’

স্বামী দেবব্রত কুমার জানান, তিনি সারাক্ষণ মিষ্টির ব্যবসা নিয়ে থাকেন। ছেলেদের পড়ালেখার দিকে খেয়াল রাখার সময় পান না। স্ত্রী ছেলেদের পড়ালেখার সবকিছু করেন। স্ত্রীর আগ্রহ দেখে তিনি তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। তখন থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে আসছেন তার স্ত্রী। দেবব্রত কুণ্ডুর কথা, ‘সে (মলি কুণ্ডু) যত দূর পারবে তত দূর পড়বে, এতে আমার কোনো আপত্তি নাই।’ প্রথম আলো



মন্তব্য চালু নেই