“একটা পর্ণ আসক্ত বর্বর মানসিক রোগীর সাথে সংসার করছি, যে আমাকে…”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহবধূ জানিয়েছেন নিজের নির্যাতনের ভয়াবহ করুন কাহিনী।
“আপু, সালাম নেবেন।
প্লিজ আমার নাম পরিচয় প্রকাশ করবেন না। আমি লজ্জায় মারা যাব। আমি আপনাকে ফেইসবুক এর মাধ্যমে আরো আগে থেকেই চিনি। কিন্তু কোনদিনও ভাবিনি, এইভাবে আপনাকে কখনো চিঠি লিখতে হবে।
আমার বয়স ২৭, বিয়ে হয়েছে মাত্র ৯ মাস হলো। বাবা না থাকায় বিয়ে একটু দেরিতে হয়েছে। আমার স্বামীর বয়স ৩৩ এবং সে একজন মানুষিক রুগী। তার কারণে আমি আজ শারীরিক ভাবে বিকলাঙ্গ। আমার কথাগুলো কাউকে বলা দরকার, না হলে পাগল হয়ে যাব।
আমার বাবা নেই। একটা ছোট ভাই আছে। ছোটবেলা থেকেই আমি খুব লাজুক। নিজের প্রয়োজনের জিনিসগুলোও কখনো লজ্জায় মায়ের কাছে চাইতাম না, মা নিজেই বুঝে নিতেন। আমার মা’ ই আমার বিয়ের যাবতীয় আয়োজন করলেন। আমার এরেঞ্জ ম্যারেজ। ছেলেকে আমার পছন্দই হয়েছিল। বিয়ের সময় কিছুই বুঝি নাই। কিন্তু বিয়ের পর ধীরে ধীরে সমস্যা গুলো বুঝতে শুরু করলাম।
প্রথমত সে একজন পর্ন আসক্ত। যখনি সময় পায়, তখনি ওগুলো দেখে। আমাকেও ওদের মত করতে বলে। প্রথম ভেবেছিলাম, মাত্র বিয়ে হলো- ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। আমি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাই আমি তেমনভাবে কখনো নিষেধ করিনি। বরং রাত্রে আমিও ওর সাথে দেখেছি।
ওর ভীষণ পছন্দ ছিল, মেয়েদের উপর অত্যাচারের পর্ন। একদিন বলল, আমাকেও ঐভাবে আদর করবে। আমি ভয় পেয়ে যাওয়ায় বলে “আমি তোমাকে কোনো কষ্ট দেব না, শুধু হাত পা আর চোখ বেঁধে আদর করব। আর এটা ভিডিও করব। আজ থেকে অনেক বছর পর আমরা যখন দেখব, তখন অদ্ভুত ভালো লাগবে।” অনেক বোঝানোর পর, আমি বিশ্বাস করে রাজি হই।
ও আমাকে নগ্ন করে বিছানায় শুইয়ে, খাটের ৪ পায়ের সাথে আমার ৪ হাত পা টান করে বেঁধে ফেলে। তারপর চোখ বেঁধে দেয়- প্রথম কিছুক্ষণ সব ভালই ছিল। হঠাৎ করেই আমার গোপনাঙ্গে তীব্র ব্যথায় চিত্কার করে উঠি। দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসে।
আমার স্বামী ভয় পেয়ে আমার চোখ আর হাত খুলে দেয়, দেখি, আমার গোপনাঙ্গ থেকে রক্ত বের হচ্ছে, বিছানার চাদরে পড়ছে। এইটুকু দেখে ব্যথায় আর ভয়ে আমি জ্ঞান হারাই। ও ধারালো একটা ব্লেড দিয়ে আমার ক্লিতরিসের মাথা কেটে ফেলেছে। আমার যখন জ্ঞান ফেরে, তখন দেখি একজন লেডি ডাক্তার নিয়ে এসেছে আর ডাক্তার কে বলা হয়েছে, আমি সেভ করতে যেয়ে কেটে ফেলেছি। আমি খুব অবাক হয়েছি- যে ডাক্তারও সেই কথা বিশ্বাস করেছে। সে পরিবেশ, পরিস্থিতি দেখেও কিছু বোঝেনি।
যাই হোক, শুধু ড্রেসিং এ হয়নি, একটা সেলাই লেগেছে ওখানে। লজ্জায় কাউকে বলতে পারিনি এই কথা। আমার শাশুড়িকে, মাকে, কাউকে না, শুধু একা একা কেঁদেছি।
যাই হোক, ভীষণ কষ্ট পেয়েছি কিছুদিন, বাথরুম করতেও কষ্ট হত। তারপর ক্ষত কিছুটা সারার পরেই ওর ওখান থেকে চলে আসি মায়ের বাসায়। ও আমার হাতে পায়ে ধরে আটকানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি একজন পাগলের সাথে থাকার আর সাহস করতে পারিনি। সেই থেকে মাস তিনেক হলো আমি আমার মায়ের সাথেই আছি।
কিন্তু সেই যন্ত্রণা আজও আমি বয়ে বেড়াচ্ছি। মাঝে মাঝেই ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা হয় ওখানে।
আমি আমার স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবছি- কিন্তু আমার মা কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। তিনি শুধু কারণ জানতে চান, আর আমি কারণ বলতে পারছি না।
এদিকে আমার স্বামী আমাকে ভয় দেখাচ্ছে যে, আমি যদি ডিভোর্স এর কথা চিন্তাও করি, তাহলে ওই ভিডিও সে ইন্টারনেট এ নাম ঠিকানা সহ ছেড়ে দেবে। আবার শশুর শাশুড়ি চারিদিকে রটিয়ে বেড়াচ্ছে, যে আমার নাকি অন্য কারো সাথে প্রেম আছে- এইজন্য স্বামীকে ছেড়ে চলে এসেছি।
সব মিলিয়ে খুব ভয়ঙ্কর একটা পরিস্থিতির মধ্যে বেঁচে আছি। মাঝে মাঝে মনে হয়- স্বামীর কাছেই চলে যাই, তারপর সুযোগ বুঝে মানুষটাকে খুন করি। আমি ছেড়ে দিলে সে আবার বিয়ে করবে, আবার কোনো একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করবে।এভাবে আর থাকতে পারছি না।
একদিকে শারীরিক যন্ত্রণা, একদিকে মানুষিক যন্ত্রণা। আবার মনে হয়, সব ভয় ভুলে, আমি নিজেও যদি অন্য কোথাও বিয়ে করি, আমার কাটা অঙ্গের এবং অসহনীয় যন্ত্রণার কি ব্যাখ্যা দেব সেই মানুষটির কাছে।
কী করব এখন আমি?”
পরামর্শ:
সত্যি কথা বলি আপু, তোমার চিঠি পেয়েছি আমি আরও কয়েক ঘণ্টা আগে। চিঠি পাবার পর থেকে এতটা সময় কেবল থমকে ছিলাম। একদিনে ভীষণ কান্না পাচ্ছিল, আরেকদিকে তুমি কীভাবে এই ভয়ানক পরিস্থিতি সহ্য করছো ভেবে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। তোমার চিঠিটি পেয়ে আমার মাঝে বড় ধরণের একটা নাড়া লেগেছে। সেটা এতই বেশী যে আমি এখনো ধাতস্ত হতে পারিনি।
প্রথমেই বলি আপু, তুমি কোন অন্যায় করো নাই। তোমার কোন দোষ নাই। তুমি কেন ভয় পাচ্ছ, কেন লজ্জা পাচ্ছ? প্রথমেই তোমার মা-কে বলে দাও সবকিছু। শাশুড়ি বিশ্বাস করবেন না, তাও বলো। তুমি নারী, তাঁরাও নারী। তাঁরা মা। প্রয়োজনে তাঁদেরকে দেখাও। তাঁরাও জানুক যে লোকটা কি প্রচণ্ড মাত্রার অসুস্থ।
দ্বিতীয়ত ইন্টারনেটে ভিডিও ছেড়ে দেয়া এত সহজ না। একজন ভালো উকিলের কাছে যাও, তাঁকে সব খুলে বলো। তারপর সোজা গিয়ে পুলিশে মামলা করো। সে যে ভিডিও ছাড়ার কথা বলে, সেটাও। শোন, ভিডিও ছাড়তে গেলে সে নিজেই ফেঁসে যাবে। কারণ তোমাকে নির্যাতন করার ভিডিওই সেটা। সে তোমার স্বামী, তাই লজ্জা পাবার বা ভয় পাবার কোন কারণ নেই। পুলিশে বা র্যাবে কমপ্লেইন করলে ভিডিও কীভাবে উদ্ধার হয়, সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমাদের দেশে পুলিশ বা র্যাব নিয়ে মানুষের মাঝে অনেক ভয়ভীতি কাজ করে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে খুবই দ্রুত ফল পাওয়া যায়। তাই আইনি সহায়তা মাস্ট নেবে। নির্যাতিতা নারীদের সহায়তা করার সংস্থা গুলোকেও যোগাযোগ করতে পারো।
তৃতীয়ত, অতি সত্বর একজন ডাক্তারের কাছে যাও। এখনো সেখানে ব্যথা হচ্ছে মানে অবশ্যই কোন না কোন সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তারের কাছে যাও ও পূর্ণ চিকিৎসা করাও।
আর শোন আপু, বিশ্বাস করো, পৃথিবীতে সব মানুষ খারাপ না। সব পুরুষ খারাপ না। খুব ভালো একটা মানুষকে অবশ্যই তুমি একদিন পাবে, যিনি সব জেনেই তোমাকে ভালবাসবেন। লড়াই করো আপু, হেরে যেও না। প্লিজ।
মন্তব্য চালু নেই