এককালে এখানেই চা বেচতেন নরেন্দ্র মোদি; সেই রেল স্টেশনই এখন…
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শৈশব কী ভাবে কেটেছিল, তাঅজানা নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, ছোটবেলায় বাবার চায়ের দোকানে তিনি চা বিক্রির কাজ করতেন। কিন্তু কোথায় ছিল তার চায়ের দোকানটি? মোদিরই বক্তব্যে মিলেছিল সেই প্রশ্নেরও উত্তর।
তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, গুজরাতের রাজধানী আমদাবাদ থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরবর্তী ওয়াড়নগরে তার জন্ম, এবং ওয়াড়নগর স্টেশনেই ছিল তার বাবার চায়ের দোকানটি। এ বার আট কোটি টাকা ব্যয়ে সেই স্টেশনেরই ভোল বদলাতে চলেছে। রাজ্যের রেল প্রতিমন্ত্রী মনোজ সিংহ এই ঘোষণা করেছেন।
না, শুধু নরেন্দ্র মোদী এক কালে এই স্টেশনে চা বিক্রি করেছিলেন বলেই স্টেশনের হাল ফেরানো হচ্ছে, তা নয়। আদপে ওয়াড়নগর এবং আশেপাশের পুরো এলাকাটারই রেলব্যবস্থার উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে মোট ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তার মধ্যে আট কোটি টাকা ব্যয় হবে শুধু ওয়াড়নগর স্টেশনটি সাজাতে।
কেন এত গুরুত্ব পাচ্ছে এই স্টেশন? নিন্দুকেরা বলছেন, আদপে সরকারি কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার চেষ্টা করছেন এই ভাবে। কিন্তু প্রকাশ্য কারণ অন্য। ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার(ডিআরএম) দীনেশ কুমার বলছেন, আসলে মেহসানা-তরঙ্গা পাহাড়ি রেলপথটিকেই মিটার গেজ থেকে ব্রড গেজ করা হচ্ছে। ওয়াড়নগর স্টেশনটির উপর দিয়েই গিয়েছে এই রেলপথ। কাজেই স্টেশনটিকেও ঢেলে সাজানো হবে।
ওয়াড়নগরের পরিচিতি অবশ্য নিছক মোদির জন্মস্থান হিসেবে নয়। এই শহরের ঐতিহাসিক তাত্পর্য বিপুল। মহাভারত-সহ বিভিন্ন পুরাণে যে অনন্তপুরা কিংবা অনর্থপুরা নামের শহরের উল্লেখ পাওয়া যায়, তা আদপে বর্তমানের ওয়াড়নগর বলেই মনে করেন ঐতিহাসিকরা।
গুজরাটের প্রাচীনতম রাজধানীও বলা হয় এই শহরকেই। বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসেও এই শহর বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ। বোধিসত্ত্বের একটি বিখ্যাত ছবি এই ওয়াড়নগরের একটি বৌদ্ধ গুম্ফাতেই সংরক্ষিত রয়েছে। ছবিটি দেড় হাজার বছরেরও বেশি পুরানো বলে মনে করা হয়।
সঙ্গত কারণেই এলাকাটিকে হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর সেই কারণেই ওয়াড়নগর স্টেশনের হাল ফেরানোর দায়িত্বও মূলত গুজরাট পরিবহণ দফতরকেই দেওয়া হয়েছে বলে জানান দীনেশ কুমার। ‘স্টেশনের নতুন নকশা পরিবহণ দফতরই করবে। তবে রেলওয়ে সেই নকশায় স্বীকৃতি দিলে, তবেই কাজ এগোবে’; বলেন দীনেশ।
অন্য দিকে রাজ্যের ট্যুরিজম কমিশনার এবং গুজরাট ট্যুরিজমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এন শ্রীবাস্তব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওয়াড়নগর স্টেশনকে এমন ভাবে গড়ে তোলা হবে, যাতে এই অঞ্চলের বিপুল ঐতিহাসিক ঐতিহ্য এই স্টেশনেও প্রতিফলিত হয়।
বর্তমানে স্টেশনের হাল খুব একটা ভাল নয়। সামান্য টিনের ছাউনি দিয়ে স্টেশনের কিছুটা আড়াল করা। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাও তেমন নেই বলেই অভিযোগ খোদ যাত্রীদেরই। সেই স্টেশনের কপালে এ বার জুটতে চলেছে আট কোটি টাকা।
মন্তব্য চালু নেই