একই প্রেসক্রিপশনে ১৪ কোম্পানীর ঔষধ! রোগীর নাকি ডাক্তারের প্রয়োজনে?
হামিদা আক্তার বারী, নিজস্ব সংবাদদাতা : নামের সামনে ডাঃ ডিগ্রী লাগালেই কি ডাক্তার হওয়া যায়? বেশ কিছু ডিগ্রীর সাংকেতিক অক্ষর লাগিয়ে কি রোগীর সেবা দেওয়া যায়? কিংবা বিভিন্ন উপাধি দিয়ে প্যাড ছাপিয়ে রোগী দেখলেই কি ডাক্তার হয়ে যায়, এ রকম নানা প্রশ্ন এখন জনমনে সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে কি নামে মাত্র ডাক্তারগণ রোগীর আরাগ্যের জন্য ঔষধ প্রেসক্রিপশন করছেন নাকি কোম্পানীর নানা উপঢৌকেনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
রোগের প্রয়োজনে ঔষধ লিখছেন নাকি কোম্পানীর প্রয়োজনে? এসব প্রশের সৃষ্টি হয়েছে নীলফামারীর জেলার সদরে ভবানীগঞ্জ, ডোমার সদর, ডিমলা মেডিকেল মোড় ও পঞ্চগড়ের দেবিগঞ্জ উপজেলার সদরে চেম্বার খুলে রোগীর চিকিৎসা প্রদানকারী জনৈক্য ডাঃ মোঃ হারুন আর রশিদের একটি প্রেসক্রিপশন ঘিরে। ঐ প্রেসক্রিপশন দেখে এসব উল্লেখিত নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।
সম্প্রতি জনৈক্য মোঃ মোজাম্মেল হক ৬০ বছর বয়সী এক রোগীকে দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দেখা যায় একটি প্রেসক্রিপশনে একই দিনে ১৪ (চৌদ্দ) প্রকারের ঔষধ লিখেছেন। লম্বা ঔষধের তালিকার এই প্রেসক্রিপশন দেখে মনে হয় যেন রোগীর জন্য নয় কোম্পানীর সম্মান রাখতেই এত ঔষধ লেখা হয়েছে। ঔষধগুলি হচ্ছে- ট্যাব-সিনারন প্লাস ১৫ মি.গ্রা , ২। ট্যাব-পেনোডিন এস আর ৬০০ মি.গ্রা, ৩। ট্যাব-প্রোপানল ১০ মি.গ্রা, ৪। ট্যাব-লসিটা ১০মি.গ্রা ৫। ট্যাব-করটি প্লাস ৬। ক্যাপ-পিপিআই ৪০ মি.গ্রা, ৭। ট্যাব-বেকলো ১০ মি.গ্রা, ৮। ট্যাব-মেলপেরেড ৪ মি.গ্রা, ৮। ট্যাব-টিপিসি, ১০। ট্যাব-এক্স-ট্রাকল ডি, অপর পৃষ্টায় ১১। ট্যাব-হেক্সিনর ৫ মি.গ্রা, ১২। ট্যাব- ডি-ডোপা, ১৩। ১টি ওর-সেলাইন+১টি গ্লুকোজ+লবন খেতে হবে এবং ১৪। ইনফিউশন- প্রোলিভ/এমাইনোমেক্স,মিনিটে ২০ ফোটা করে।
অনেকে মনে করেন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ রোগী দেখে প্রযোজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ৩ থকে ৪ ধরনের বেশী ঔষধ লিখতে চান না কিংবা লিখেন না। অথচ ডাঃ হারুন আর রশিদ ঐ রোগীর সিবিসি, ইএসআর, এইচএল ও আরবিসি পরীক্ষা করিয়ে ঔষধ লেখেন ১৪ প্রকারের। এতে রোগী ও তার আত্বীয় স্বজনদের মনে উল্লেখিত নানা প্রশ্নের উৎভব হয়। ডাঃ হারুন অর রশিদ নিজেকে এমবিবিএস পাশ ডাক্তার পরিচয় না দিলেও তিনি ডিগ্রী লাগিয়েছেন-”এমপিএইচ (এনসিডি)সিসি ঢাকা, বিএসপিটি (ডিইউ) নিটর (ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল), পিজিটি (নিউরো ফিজিও) বিএসএমএমইউ (পিজি হাসপাতাল ঢাকা), স্পেশাল ট্রেনিং ইন ব্যাক পেইন এন্ড মাসকুলো স্কেলিটাল সিস্টেম, পঙ্গু,বাত-হাড়জোড় ব্যাথা, প্যারালাইসিস ও স্পোটস ইানজুরি বিশেষজ্ঞ ”। জনমনে প্রশ্ন কি করে তিনি এমবিবিএস পাশ না করেই এসব ডিগ্রী অর্জন করেন ? তাহলে কি এসব ডিগ্রী নিতে এমবিবিএস কোর্স পড়তে হয় না ?
এ ব্যাপারে ডাঃ হারুন অর রশিদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসলে এসব ডিগ্রী নিতে এমবিবিএস পাশ করতে হয় না। আমি যেসব ডিগ্রী লাগিয়েছি সেগুলো এমবিবিএস পাশ সমমান। আপনার কোন রেজি: নম্বর নেই কেন ? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিএমএ সংগঠনের সদস্য নই, আমি বিপিএ’র সদস্য। তাই আমার কোন রেজিষ্ট্রেশন নম্বর নেই।
একই প্রেসক্রিপশনে এত ঔষধ লিখেছেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২২ প্রকারের ঔষধ দেয়া যেতে পারে, এটা হলো রোগীর রোগকে কন্ট্রোল করার জন্য। সুতরাং আমি যা লিখেছি তার ব্যাখা আমার কাছে আছে। প্রশ্ন করা হয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারা তো এত ঔষধ লিখেন না ? উত্তরে ডাঃ হারুন অর রশিদ বলেন, তাদের প্রেসক্রিপশনে কয়জন রোগী ভালো হয় বলতে পারেন ? দেখবেন আমাদের চিকিৎসায় বেশী রোগী ভালো হয়।
মন্তব্য চালু নেই