‘এই ফ্ল্যাটেই শাওনের সাথে থাকত আমার পুত্রবধূ মাহি’

রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডার প-১৩ নম্বর বাড়ি। পাঁচ তলা বাড়ির তৃতীয় তলার পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাট। এই ফ্ল্যাটেই থাকতেন শাওন-মাহী দম্পতি। আর উত্তর দিকের ফ্ল্যাটে থাকেন শাওনের বাবা-মা। শাওনের মা শিউলি আক্তার তার ছেলে ও ছেলের বউয়ের বসবাসের ফ্ল্যাটটি দেখিয়ে বলেন, এই ফ্ল্যাটেই আমার পুত্রবধূ মাহী থাকত। রাত বিরাতে শুটিং শেষ করার পর সে বাসায় ফিরে আসত। শ্বশুরবাড়ি ছাড়া সে কোথাও থাকত না। হঠাত্ করে কি হলো বুঝতে পারলাম না। এখন শুনি নাকি সিলেটের এক ছেলের সঙ্গে মাহীর বিয়ে হয়েছে। হঠাত্ করেই পুলিশ শাওনকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।

গতকাল দক্ষিণ বাড্ডায় শাওনদের বাড়ির পরিবারের সদস্য ছাড়াও আশপাশের লোকদের সঙ্গে কথা হয়। চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নীপা ওরফে মাহিয়া মাহী এখন দেশের আলোচিত একটি নাম। নায়িকাদের বিয়ে হয়, বিরহ আসে, ভাঙনের শব্দ শোনা যায়। এসব কিছুই শাওনদের বাড়ির আশপাশের লোকজন জানেন। ওই বাড়িতে শাওন-মাহীকে একসঙ্গে আসা-যাওয়া করতে দেখেছেন এলাকার লোকজন। বিয়ের ছবি দেখিয়ে শাওনের স্বজনরা জানিয়েছেন শাওন-মাহীর বন্ধুত্ব থেকে বিয়ে পর্যন্ত নানা ঘটনার কথা।

শাওনের মা শিউলি আক্তার জানান, উত্তরা হাইস্কুল থেকে উত্তরা মডেল কলেজে একসঙ্গে লেখাপড়া করতে গিয়েই শাওন-মাহীর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিয়ের আগেও শাওনদের বাসায় আসা-যাওয়া ছিল মাহীর। গত বছরের শুরুর দিকে ঢাকা পদাতিকের একটি নাটক দেখতে গিয়েছিল মাহী ও শাওন। ফিরে এসে শাওনের মাকে মাহী জানিয়েছিলেন, শাওনকে তিনি ভালোবাসেন। তাকে বিয়ে করতে চান। বিষয়টি মজা হিসেবেই মনে করেছিলেন শাওনের মা শিউলি আক্তার। পরবর্তীতে একইভাবে মাহীকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন শাওন। কিন্তু ছেলের বয়স কম হওয়ার কারণে বিষয়টি এড়িয়ে যান তার মা।

গত বছরের ৩রা মার্চ মাহীর মা-বাবা ফোনে উত্তরার বাসায় দাওয়াত দেন তাদের। পরদিন সপরিবারে ওই বাসায় গেলে সেখানেই শাওনের মা-বাবাকে মাহী-শাওনের বিয়ের প্রস্তাব দেন মাহীর বাবা আবু বকর সিদ্দিকী খোকন। তবে নায়িকার ক্যারিয়ারের বিষয় মাথায় রেখে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করতে বারণ করেন মাহীর মা-বাবা। শাওনদের বাড়িতেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত বছরের ৩ মে শাওনের চাচা মোফাজ্জল হোসেন রহিম মারা যাওয়ায় বিয়ে

অনুষ্ঠিত হয় মধ্য বাড্ডায় শাওনদের আত্মীয় সোলেমান রহমানের বাসায়। ওই বিয়ের একটি ছবি দেখিয়ে শিউলি আক্তার জানান, বিয়ের সাজে মাহী। মাহীর পেছনে তার বাবা, এক পাশে ফুফু, কালো ব্লে­জার ও প্যান্ট পরনে শাওন ও পাশে তার মা শিউলি আক্তার। এতে শাওনের এক চাচীও রয়েছেন।

এরকম অনেক ছবি ও একটি ভিডিও ফুটেজ ছিল শাওনের কম্পিউটারে। গত ২৭ মে রাতে তাকে গ্রেফতারের পর ঐ কম্পিউটার, মোবাইলফোন ও ক্যামেরা নিয়ে গেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। বিয়েতে দুই পক্ষের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বর-কনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছিলেন। বিয়ের একটি ছবিতে মাহীর বান্ধবী প্রভাও রয়েছেন। মাহীর বিয়ের সাক্ষী ছিলেন হারুন অর রশীদ। একটি ছবি দেখিয়ে তিনি জানান, বিয়ের পর তার মেরুল বাড্ডার বাসায় গিয়েছিলেন শাওন-মাহী। ওই সময়ে তার ছেলে-মেয়ে ও বোন ফাতেমার সঙ্গে একটি ছবি তোলেন। বিয়ের সম্পর্কে তিনি জানান, চার লাখ টাকা দেনমোহরে ওই বিয়ে হয়।

শাওনের বোন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নাফিসা জানান, ভারতে ফিল্ম করবে বলে ভাবী জানিয়েছিল। তবে বিয়ের আগে অগ্নি-২ ছবির শুটিং শেষ হয়েছিল ভাবীর। বিয়ের পর ফিল্মের কাজে বাইরে গেলেও তাদের বাসাতেই থাকতো ভাবী। শাওনদের বাড়ির পঞ্চম তলার বাসিন্দা রোকসানা পারভিন জানান, বিয়ের পর তারা সবাই শাওনদের বাসায় আসেন। মাহী সেদিন তাদের শরবত তৈরি করে খাওয়ান। একইভাবে দক্ষিণ বাড্ডার প-১৩ নম্বর বাড়ির গলির এক লন্ড্রি দোকানের মালিক বলেন, সবাই জানে মাহী ওই বাড়ির পুত্রবধূ। শাওন-মাহী প্রায়ই ওই বাসা থেকে একসঙ্গে আসা-যাওয়া করতেন।

শাওনের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, সিলেটের বিত্তশালী বর পেয়ে বিয়ে গোপন করে আবার বিয়ে করেছে মাহী। এটিইতো অনেক বড় অপরাধ। বিয়ের সকল প্রমাণ, শত শত সাক্ষী রয়েছে। আদালতে তা জানিয়েছি। স্বামী-স্ত্রীর ছবি তার বন্ধুরা আপলোড করেছে। এতে আমার ছেলের কি অপরাধ আমি বুঝতে পারছি না।

এ বিষয়ে মাহীর বক্তব্য জানতে বারবার তার ফোনে যোগাযোগ করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। মাহীর বর্তমান শ্বশুর সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, তার ছেলে অপু ও মাহী দেশের বাইরে রয়েছে। মাহীর প্রথম বিয়ে সম্পর্কে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমরা খুব বিব্রত। আগে জানলে এ বিয়ে হতো না।-ইত্তেফাক



মন্তব্য চালু নেই