এই নাসিরকে বসিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ!

রানের চাকা সচল রেখে শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকা, বোলিংয়ে দারুণ অফ স্পিনে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা, শেষ মুহূর্তে ডিপে দারুণ এক ক্যাচে টেনে দেওয়া সমাপ্তি! এই তো অলরাউন্ডার নাসির হোসেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজ চিরচেনা নাসিরকেই দেখা গেছে। অথচ তাঁকেই কিনা বসিয়ে রাখা হয়েছে ম্যাচের পর ম্যাচ! অনেক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ছিল তাঁর। দিলেনও। প্রথমে ব্যাটিংয়ে, পরে বোলিংয়ে এবং শেষে তাঁর সেই নির্ভরতা জাগানো ফিল্ডিংয়ে! শেষ ক্যাচটা যে তিনিই নিলেন!

ইংল্যান্ডের সামনে ২৩৯ রানের লক্ষ্যটা পর্বতপ্রমাণ করে তুলতে বোলিংয়ে অসাধারণ কিছু করতেই হতো বাংলাদেশকে। সেটি হয়েছেও। আর তাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যাটিংয়ের মতো নাসির এখানেও অধিনায়কের সঙ্গে রেখেছেন কার্যকারী ভূমিকা। ১০ ওভারে ২৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। মেডেন ১টি। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা তাঁর বোলিংয়ে কতটা ভুগেছেন, তা ইকোনমিতেই পরিষ্কার—২.৯০, যেটি বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম। নামের পাশে আছে মঈন আলীর গুরুত্বপূর্ণ উইকেটও।

ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা বুঝেই মাশরাফি নাসিরকে করিয়েছেন টানা ১০ ওভার। অবশ্য বোলিংয়ে তাঁর অতীত পরিসংখ্যানও যথেষ্ট উজ্জ্বল। ২০১৫ সালে ১৬ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ১৬ উইকেট, বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষ পাঁচে।

ব্যাটিংয়ে আজ সমান উজ্জ্বল নাসির। যে অবস্থায় নেমেছেন শতভাগই দিয়েছেন। যদিও মাশরাফির ব্যাটিং-ঝলকে আড়ালেই পড়ে যাবে নাসিরের ২৭ বলে অপরাজিত ২৭ রানের ইনিংসটা। তবে মাশরাফিকে সঙ্গ দেওয়ার কাজটা করেছেন ঠিকভাবে। অষ্টম উইকেটে ৬৯ রানের জুটি, পুরো ইনিংসেই সর্বোচ্চ। এই জুটি না হলে খেলা তো অর্ধেকেই শেষ!

১৬৯ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার বাংলাদেশের অলআউট হওয়াটা সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। বিপর্যয়ের এই করুণ ছবি বদলে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মাশরাফি-নাসিরের অষ্টম উইকেট জুটি। ৪৯ বলের জুটিতে পাল্টা আক্রমণ করেছেন দুজন। প্রথমে মাশরাফি, পরে নাসির। যদিও শেষ তিন ওভারে মাত্র ২১ তুলল বাংলাদেশ, না হলে একসময় ২৫০ হবে বলেও মনে হচ্ছিল।

মাশরাফির মতো একের পর এক স্লগ করতে পারেননি নাসির। প্রথম বাউন্ডারিটা পেয়েছেন ২০ বল খেলে। জ্যাক বলকে পরপর দুই বাউন্ডারিই নাসিরের ইনিংসের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম দিক। বাউন্ডারির ফুলঝুরি হয়তো নেই, তবে শেষ দিকে উইকেটে নাসিরের উপস্থিতিটা অনেক কাজে দিয়েছে বাংলাদেশকে। এতে ব্যাটিংয়ে ঝড় তোলার ঝুঁকিটা নিতে পেরেছেন অধিনায়ক।

এরপর বোলিংয়ে টানা ১০ ওভার। আর শেষ উইকেটে ইংল্যান্ডের জুটিটা যখন ক্রমেই ভয় দেখাচ্ছে, নাসিরের মাথা ঠান্ডা রেখে ধরা ক্যাচ। নাসির ব্যাটিং করেন, বোলিং করেন, ফিল্ডিং করেন। এক নাসির থাকা মানে তো দলে দুই খেলোয়াড়ের সেবা পাওয়ার মতো।

অথচ এই নাসির অনেক দিন ধরেই ব্রাত্য! দলে থাকেন ঠিকই, একাদশে সুযোগ পান না খুব একটা। জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ, ফেব্রুয়ারি-মার্চে এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা প্রায় বসেই কেটেছে তাঁর।

লম্বা বিরতির পর খেলতে নেমে সব অবজ্ঞার কী জবাবটা না দিলেন নাসির!



মন্তব্য চালু নেই