এই কারণেই হাবিলকে হত্যা করেছিল আদম (আ.) এর পুত্র কাবীল…

হাবিল এবং কাবীল হযরত আদম (আঃ) এবং বিবি হাওয়া (আঃ) এর দুই পুত্র। ইতিপুর্বে আমরা অবগত হয়েছি যে, হযরত আদম-হাওয়া (আঃ) এক সঙ্গে একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান যমজভাবে জন্মগ্রহন করতেন। তখনকার নিয়মানুসারে বিভিন্ন সময়ের বা গর্ভের সন্তানকে বিভিন্ন বংশের বলে গণ্য করা হতো। প্রথম বারের পুত্রের সাথে দ্বিতীয়বারের কন্যা ও দ্বিতীয় বারের পুত্রের সাথে প্রথম বারের কন্যার বিবাহ হতো।
তখনকার শরীয়ত অনুযায়ী এইরূপ বিবাহ প্রয়েজন ছিল। কারণ তখন হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন মানব ছিলেন না। তাঁদের পুত্র-কন্যা সকলেই ভাই-বোন। কাজেই ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ না হলে, তারা সকলেই অবিবাহিত থেকে যেত। ফলে পৃথিবীতে আর বংশ বৃদ্ধি হতো না। হযরত আদম (আঃ) এবং বিবি হাওয়া (আঃ) এর আবার লিওজা ও আকলিমা নামে দুই কন্যা ছিল। শরীয়ত অনুযায়ী হাবীলের সাথে আকলীমার এবং কাবীলের সাথে লিওজার বিবাহ স্থির হল। আকলিমা লিওজা অপেক্ষা সুন্দরী ছিলেন। সেহেতু কাবীল তাকেই বিবাহ করবে বলে বলতে লাগল, কিন্তু শরীয়ত মত তাহা হয় না। হযরত আদম (আঃ) ইহা দেখে তাঁর ছেলে কাবীল কে বুঝাতে লাগলেন, কিন্তু কাবীল তার সিদ্ধান্তে অনড়।

হযরত আদম (আঃ) সমস্যায় পড়লেন। এমনি সময়ে আল্লাহুর নিকট হতে আদেশ আসল হাবীল ও কাবীল উভয়েকেই মান্নত করতে হবে। যার মান্নত আল্লাহুর দরবারে গৃহীত হবে, সেই আকলীমাকে বিবাহ করবে। কাবীল নিজ কৃষিজাত দৃব্য হতে কিছু ফল এবং তরকারী আল্লাহুর নামে উৎসর্গ করল আর হাবীল একটি হৃষ্টপুষ্ট মেষ আল্লাহুর নামে উৎসর্গ করবার জন্য উপস্থিত করে একটি পাহাড়ের নিকটবর্তী একস্থানে রেখে আসলেন। কোথা হতে একটা অগ্নি শিখা এসে হাবিলের মেষটাকের পুড়িয়ে দিয়ে গেল, আর কাবীলের ফল ও তরকারী যথারিতি পড়ে রইল। তখনকার দিনে ইহাই ছিল মান্নত আর কবুল হওয়ার নিদর্শন। কাজেই হাবীলই যে আকলীমাকে বিবাহ করবেন তাহা নির্ধারিত হয়ে গেল। হাবীল ছিল সহজ সরল প্রকৃতির এবং ধর্মপ্রাণ। আর কাবীল ছিল শয়তানের অনুগামী হিংসুক। কাবীলের মান্নত গৃহীত না হওয়ায় তার মনে হিংসার উদ্রেকের জন্ম হল। সে এতদুর উত্তেজিত হয়ে পড়ল যে, ক্রোধে আত্মহারা হয়ে একদিন সুযোগ মত জঙ্গলের মধ্যে হাবীলকে পেয়ে হত্যা করে ফেলল। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।

যাহা নিম্নতুলে ধরা হলো। উচ্চারণ- فَطَوَّعَتْ لَهُ نَفْسُهُ قَتْلَ أَخِيهِ فَقَتَلَهُ فَأَصْبَحَ مِنَ الْخَاسِرِينَ (বাংলা অর্থ)-অতঃপর তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃহত্যায় উদুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।” সুরা মায়েদাহ্‌, আয়াত ৩০ হাবীলকে হত্যা করার পর কাবীলের মনে ভয় হল যে, পিতা জানতে পারলে, ইহার বিচার করবেন। একটা অপ্রকাশিত অন্ধকার যেন তার চক্ষুর সম্মুখে জমাট বেঁধে গেল। হাবীলের মৃতদেহ কোথাও দুরে নিক্ষেপ করে ফেলা যায় কি না, তাহা চিন্তা করতে লাগল। কিন্তু কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। এই অবস্থায় কাবীল দেখতে পেল যে দুইটা কাক পরস্পর মারামারি করতে করতে একটি অপরটিকে মেরে ফেলল। তার পর জীবিত কাকটি ঠোঁক দ্বারা মাটি খুড়িয়ে একটি গর্ত করে ফেলল।

কাবীল ব্যাপারটি মনোযোগ সহকারে প্রত্যক্ষ করছে। তার পর মৃত কাকটিকে ঐ গর্তের মধ্যে পুঁতে রেখে উপরে মাটি দিয়ে ঢেকে সমান করে দিয়ে উড়ে চলে গেল। পাপীষ্ট কাবীল এইরূপ দেখে ভাবলঃ আমিও যদি কাকের ন্যায় করি, সে টা কেমন হয়? আমার একটা কাকের বুদ্ধিও নেই। অতঃপর সেও কাকের প্রদর্শিত নিয়মে মাটি খুঁড়ে হাবীলের লাশ মাটির নিচে পুঁতে রেখে চলে গেল। এ ঘটনাটি আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। যাহা নিম্নে তুলে ধরা হলো। উচ্চারণ – فَبَعَثَ اللّهُ غُرَابًا يَبْحَثُ فِي الأَرْضِ لِيُرِيَهُ كَيْفَ يُوَارِي سَوْءةَ أَخِيهِ قَالَ يَا وَيْلَتَا أَعَجَزْتُ أَنْ أَكُونَ مِثْلَ هَـذَا الْغُرَابِ فَأُوَارِيَ سَوْءةَ أَخِي فَأَصْبَحَ مِنَ النَّادِمِينَ (বাংলা অর্থ ) অতঃপর আল্লাহ তাআলা এমন একটি কাক প্রেরণ করলেন। সে মাটি খনন করছিল যাতে তাকে শিক্ষা দেয় যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ কিভাবে আবৃত করবে। সে বললঃ আফসোস, আমি কি এ কাকের সমতুল্যও হতে পারলাম না যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ আবৃত করি।

অতঃপর সে অনুতাপ করতে লাগল। সুতরাং (উক্ত নিয়মে) স্বীয় ভ্রাতার লাশ গোপন করে ফেলল। আর সে নিজে খুবই লজ্জিত হয়ে গেল। সুরা মায়েদাহ্‌, আয়াত ৩১ হযরত আদম (আঃ) হাবীলের নিহত হওয়ার সংবাদে ভীষণভাবে দুঃখ পেলেন। কাবীল শাস্তির ভয়ে কোথাও নিখোঁজ হয়ে গেল এবং আল্লাহুর অবাধ্য ও নাফরমান হয়ে রইল। হযরত আদম (আঃ)- এর আরো এক পুত্র ছিল তাঁর নাম শিষ। হযরত আদম (আঃ)-এর হায়াতের জিন্দেগী শেষ হয়ে আসল, তিনি তাঁর সকল পুত্র-কন্যা ও পৌত্রদের কে ডেকে পরস্পর সমভাবে এবং সৎপথে থাকার চলার উপদেশ দিলেন। তিনি বলিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর শিষ তাঁর প্রতিনিধি হবেন। তাঁর উপদেশ মত চলার জন্য সকলকে পরামর্শ দিয়ে চির বিদায় নিলেন। আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) ইন্তেকালের পর হযরত শিষ (আঃ) তাঁর প্রতিনিধি হন।



মন্তব্য চালু নেই