উপযুক্ত সময়ের আগে কেন ছেলেদের প্রেমে জড়ানো উচিত নয়?
পাশের বাড়ির কলেজপড়ুয়া ছেলেটা প্রতিদিন বিকালে তার নতুন গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হয়। সারাদিন মোবাইলে গুজুরগুজুর-ফুসুরফুসুর করে। আপনি খালি জানালার ফাঁক দিয়ে দেখেন, আর হা-হুতাশ করেন। হয়তো রাগে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে আপনার। সেদিনের পিচ্চি ছোকরা, যে কিনা একটা চকলেটের জন্য আপনার পিছে পিছে ঘুরতো, সে আজ আপনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে প্রেম করে বেড়ায়! আর আপনি জীবনে কোন মেয়ের সাথে সাহস করে হয়তো একটা কথাও বলতে পারেন নি। খারাপ লাগবে। কষ্ট হবে। নিজের উপর অভিমান হবে। রাগ হবে। হয়তোবা ভাগ্যকেও দোষ দিবেন। “সবাই পায়, আমি কেন পাই না???”
এই লেখাটা তাহলে আপনার জন্য। একা আছেন? তো কি হয়েছে? আজীবন তো নিশ্চয়ই একা থাকবেন না! একসময় ঠিকই আপনার পাশে কোন ডানাকাটা রাজকন্যা এসে দাঁড়াবে। আপনার হাত ধরবে। এটা হবেই। কিন্তু তার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কি মন খারাপ করে, বালিশের ভিতর মুখ গুঁজে, কোলবালিশ জড়িয়ে শুয়ে শুয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়বেন?
মোটেও না। জীবনে কিছুটা সময় নিজের মতো, একা থাকার প্রয়োজন আছে। এটা জীবনেরই একটা অংশ। এতে করে নিম্নোক্ত ৭ ভাবে আপনি উপকৃত হবেনঃ
যোগ্য সঙ্গী খুঁজে নেওয়ার ব্যাপারে আপনি স্বাধীনঃ
যারা প্রেম করে, সবাই কি সুখে আছে? কেউ হয়তো সবার সামনে দেখাবে তারা একে অন্যের জানেমান-শাজাহান। সবার সামনে সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করবে। টুলুপুলু-কুচিপুচি নামে একেকজনকে ডাকবে। কিন্তু সেই তাদেরই দেখা যাবে রাত ২ টার দিকে কথা বলার সময় কল ড্রপের মতো তুচ্ছ কারণে রিলেশনশিপ ব্রেক-আপ করতে। এর মধ্যে কি ভালো কিছু আছে? আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন। অপেক্ষা করুন যোগ্য সঙ্গীর জন্য, যে আপনাকে বুঝবে।
দায়িত্ব কম থাকবে অনেকঃ
আপনি যদি কোন রিলেশনে না থাকেন, আপনার দায়-দায়িত্ব অনেক কমে যাবে। দুপুর ২ টার দিকে গার্লস স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না, ঘন্টায় ঘন্টায় মোবাইলে ডিউটি দিতে হবে না, মোড়ের ফটোস্ট্যাট এর দোকান থেকে নোট ফটোকপি করে এনে প্রেমিকার বাসায় পৌঁছিয়ে দিতে হবে না। আরো কতরকম দায়িত্ব থেকে আপনি রেহাই পাবেন, একবার শুধু ভাবুন। একা থাকার জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিন।
নিজেকে তৈরী করার পর্যাপ্ত সময় পাবেনঃ
আপনি যখনই কোন রিলেশনে থাকবেন, আপনার ফোকাস সম্পূর্ণই থাকবে আপনার গার্লফ্রেন্ড এর দিকে। এতে করে আপনি নিজেকে সময় দিতে পারবেন না। এতে করে কিন্তু আপনি ভুল করবেন। তুমুল প্রতিযোগিতার এই যুগে আপনি যদি প্রতি মুহূর্তে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে না পারেন, আপনি নিক্ষিপ্ত হবেন আস্তাকুড়ে। তখন আপনার সেই গার্লফ্রেন্ড কিন্তু আপনার দিকে ফিরেও তাকাবে না!
স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবেনঃ
একা থাকলে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন। আপনি দুপুর ১২ টায় ঘুম থেকে উঠবেন? কেউ তার জন্য আপনাকে বলতে আসবে না, কেন তুমি ভোর ৫.৩০ টায় উঠে জগিং এ যাওনি? শান্তিতে থাকতে পারবেন।
জীবনে অতিনাটকীয়তা কম থাকবেঃ
জীবনে মাঝে মাঝে ক্লাইমেক্স থাকা খারাপ না। জীবনে বৈচিত্র আসে। কিন্তু রিলেশনে যদি আপনি থাকেন, আপনার জীবনে অসংখ্যবার ক্লাইমেক্স আসবে। ঝড় আসবে। সবসময় আপনার হয়তো সেগুলো ভালো লাগতে নাও পারে। অতিরিক্ত কোনকিছুই যে ভালো না!
সামাজিকতা বাড়বেঃ
রিলেশনে থাকলে একটা ছেলে অনেকটাই অসামাজিক হয়ে যায়। তার সমস্ত মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু থাকে তার প্রেমিকা। তাকে সময় দেওয়ার জন্য হয়তো সে তার কাছের বন্ধুদের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখে না। ভুলে যায় আত্মীয়-স্বজন, পরিবার। এসব মোটেও ভালো কিছু না। আপনি যখন একা থাকবেন, আপনার সেধরণের চিন্তাভাবনা আসবে না। আপনি তখন সবার সাথেই মিশবেন। বন্ধুরা মিলে একসাথে সিনেমা দেখতে যাবেন। পরিবারকে সময় দিবেন। এটাই নিয়ম।
ঝুঁকি নিতে পারবেনঃ
হতে পারে, আপনি নতুন ব্যবসায়ী। এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখেন নি। কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন, একটা ঝুঁকি নিলে হয়তোবা আপনার ব্যবসা লাভের মুখ দেখবে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এই ঝুঁকি আপনি তখনই নিতে পারবেন, যখন আপনি একা থাকবেন।
হয়তো এসব কারণেই জীবনমুখী গায়ক নচিকেতা গেয়ে উঠেছিলেন, “পুরুষ মানুষ দুইরকম…জীবিত, বিবাহিত!” আপনি “জীবিত” আছেন—-এটা মনে করেই সুখী থাকুন। ভালো থাকুন।
মন্তব্য চালু নেই