উত্তরাঞ্চলে ভাদ্র কাটানি উৎসব !
আজ পহেলা ভাদ্র। ভাদ্র মাসের শুরুতে শুরু হয়েছে বাঙালিদের ভাদ্র কাটানি উৎসব । নববধূরা বাবার বাড়িতে নাইয়োর যেতে শুরু করেছে। এখন গ্রামে গ্রামে চলছে ঐতিহ্যবাহী ভাদ্র কাটানি উৎসব। এ উৎসবের রীতি অনুযায়ী, কমপক্ষে ভাদ্র মাসের প্রথম দিন থেকে দশ দিন পর্যন্ত স্বামীর মঙ্গল কামনায় কোনো নববধূ তার স্বামীর মুখ দর্শন করবেন না। এটা সনাতনি রীতি।
দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে এ ঐতিহ্যবাহী উৎসবের লক্ষ্যে বাবার বাড়িতে যান নববিবাহিতা বধূরা। শহরে এর প্রভাব কম থাকলেও গ্র্রামে এ উৎসব চোখে পড়ে বেশি।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ‘ভাদ্র কাটানি’ উৎসবের কোনো ব্যাখ্যা না থাকলেও এ অঞ্চলের আদি প্র্রথা অনুযায়ী, পহেলা ভাদ্র থেকে শুরু হয়ে যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব।
নববিবাহিতা বধূ বাবার বাড়িতে নাইয়োর যাবে। এ বাক্যটি এখন নববিবাহিত পরিবারের সবার মুখে মুখে।
দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে এবং ভারতের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিনাজপুর মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের কোনো কোনো অংশে এ প্রথা চালু আছে। এছাড়াও জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি জেলার কোনো কোনো অংশ এ প্রথা বাঙালি সমাজে চালু রয়েছে বলে জানা যায়।আধুনিক যুগে ভাদর কাটানির পক্ষে নিরপেক্ষ তর্ক-যুক্তি নাই। তবুও ভাদর কাটানি উৎসব থেমে নেই। যারা মনে প্রাণে বাঙালি, যারা বাঙালির রীতিনীতি ও প্রথা মেনে চলে মানার চেষ্টা করেন তাদের নিয়মের ভেতরেই রয়েছে ভাদর কাটানি প্রথা।
স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস- বিবাহিত জীবনের প্রথম ভাদ্র মাসের এক থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত স্বামীর মুখ দেখলে অমঙ্গল হবে। তাছাড়া সাধারণত এ মাসে বিয়ের কোনো আয়োজনও চোখে পড়ে না। প্রচলিত এ প্রথাটি যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলে হিন্দুু-মুসলিমদের মধ্যে চলে আসছে।নিয়ম অনুযায়ী, কনে পক্ষ শ্রাবণ মাসের দুই-একদিন বাকি থাকতেই বরের বাড়িতে সাধ্যমতো বিভিন্ন রকমের ফল, মিষ্টি, পায়েসসহ নানা রকম পিঠা-পুলি নিয়ে যান। বরপক্ষও সাধ্যমতো তাদের আপ্যায়ন করে। বাড়িতে কনে পক্ষের লোকজন আসায় চারদিকে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়।
দিনাজপুরের প্রবীন ব্যক্তি মফিজুল্লাহ শাহ্ জানিয়েছেন , বউ গেছে তার বাপের বাড়িতে। বৌকে বিদায় দিতে হবে কিংবা কনের বাড়ির লোকজন দলবেঁধে মেয়েকে নিতে আসবে। বাড়িতে অতিথি আসলে বাড়ির লোকজনরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রথমে হাত মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা, গামছা তোয়ালের ব্যবস্থা তারপর খড়ম বা স্যান্ডেল ধুতি-লুঙ্গির ব্যবস্থা যেন পরিপূর্ণ করা হয়। তারপর খাওয়ার জন্য ছাগল, মুরগি, ডিম, দুধ, কলা, দই, চিড়া, মুড়ি, পায়েশ, পুলি, পিঠা, আয়োজনের মধ্যে সবই থাকে বাঙালি সমাজে।
দিনাজপুরের নাট্য ব্যক্তিত্ব তারেকুজ্জামান জানান, ভাদর কাটানি মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো ধর্মীয় বিষয় না হলেও এ অঞ্চলে প্রথাটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এক সময় সম্ভ্রান্ত হিন্দু সম্প্রদায় এ উৎসবকে জাকজঁমকভাবে পালন করতো। তাদের এ রেওয়াজ ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলের মানুুষকে প্রভাবিত করে। এক পর্যায়ে উৎসবটি এ অঞ্চলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়ায়। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ফুটে উঠে এ মাসে। পথে-ঘাটে.নদী-নালা,ক্ষেত-খামারে চোখে পড়ে অপূর্ব দৃশ্য।
মন্তব্য চালু নেই