উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলায় বোরো ধানের চারা রোপোনে ধূম পড়ে গেছে

লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলায় বোরো ধানের চারা রোপোনে ধূম পড়েগেছে। হরতাল অবরোধ কৃষকের ফসল ফলানোর স্পৃহার কাছে কোন বাধা হয়ে উঠতে পারেনি। কৃষক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখতে প্রতিটি কৃষক পরিবার নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। দম ফেলার সময় নেই। কোন আগ্রহ নেই জামায়াত শিবির বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে । কৃষক হিমশীতল ঠান্ডাকে জয় করে খুব ভোরে তার স্বপ্নের আলপনা আঁকতে মাঠে চলে যায়। আপন মনে রোপন করে চলে কাঁদায় চারা ধানের গুচ্ছ। বোরো চাষে মাঠে কৃষকের জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা কোন বাধা হয়ে উঠতে পারেনি।

তবে মানব সৃষ্ট রাজনৈতিক বৈরী প্রতিকূলতা সার ও ডিজেল সরবরাহে কিছুটা বিপর্যয়ে ফেলবে আশস্কা ছিল। কিন্তু সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ ও সাধারন মানুষ বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড প্রত্যাখ্যান করায় সেই আশস্কাও এখন নেই। উত্তরাঞ্চলের কৃষক হাসি মূখে বোরো ধানের চারা রোপন পরিচর্যায় সকল মনোযোগ দিয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদুৎ সরবরাহ, সার ও ডিজেল পর্যাপ্ত পরিমানে বাজারে সরবরাহ রয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের কৃষক মঙ্গা নামের অপবাদের শব্ধটি যাতে আর কোন দিন নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিতি না পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। চিরদিনের মত উত্তরাঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন করতে হবে। এই আশা মাঠে নেমেছে উত্তরাঞ্চলের কৃষক পরিবার গুলো। কৃষি বান্ধব সরকার কৃষকের পাশে সাধ্যমতে আছে। আছে নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুত ব্যবস্থা। আছে কৃষি নির্ভর তথ্য প্রযুক্তি। পাশে আছে কৃষি বিভাগ । পাশে আছে বেসরকারি এনজিও ও কৃষি বীজ ও ঔষধ কোম্পানী গুলো।

লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলা কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর ও পঞ্চগ্রাম জেলায় কৃষকের ঘরে ঘরে বোরো চাষে ধূম পড়েগেছে। প্রতিটি কৃষক পরিবারের দম ফেলার সময় নেই। সকল প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট রাজনৈতিক বৈরী প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে হাসি মূখে বোরো ধানের চারা রোপন পরিচর্যা কৃষকের এখন সকল মনোযোগ। নিরবিচ্ছিন্ন বিদুৎ সরবরাহ, সার ও ডিজেল পর্যাপ্ত পরিমানে বাজারে সরবরাহ রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধানের বাম্পার ফলন করতে হবে এই আশা করছে উত্তরাঞ্চলের কৃষক পরিবার গুলো।

শীতের তীব্রতা কমতে শুরু করেছে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায়। তাই শৈত্য প্রবাহের প্রকটতা এখন একটু একটু কমছে । বোরো মৌসুমের শুরুতেই কৃষক বোরো ধানের বীজতলা শৈত প্রবাহের কারনে পঁচন রোগ ধরে ছিল। তখন বীজতলা নিয়ে হুমকীর মূখে পড়ে ছিল।
লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষক বীজতলায় নিবির পরিচর্যা করে শীতের তীব্রতা থেকে বীজতলা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। কোন কোন কৃষক পঁচে যাওয়া ও নষ্ট হয়ে যাওয়া বীজতলা ভেঙ্গে ফেলে পুনরায় নতুন বীজতলা তৈরী করেছে। বর্তমানে বোরো ধান চাষের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে সার, বিদুৎ ও ডিজেল সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। তাই কৃষক পরিবার গুলো হাসি মুখে ধ্ােনর চারা রোপনে মনোযোগ দিয়েছে। লক্ষ্য বোরো মৌসুমে দেশে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের।

বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যার বহু বছরের পুরোন পদ্দতি ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছে। এই পদ্দতি ব্যবহার করতে কৃষকের কোন বাড়তি খরচ করতে হয়নি। বোরো ধানের বীজতলা শীতের ও কূয়াশার তীব্রতা থেকে রক্ষায় কাঠি ব্যবহার করে দিনে ২-৩ বার করে মুক্তার দানারমত জমে থাকা শিশির বিন্দু বোরো ধানের বীজতলা থেকে ঝেরে ফেলেছে। নানা ভাবে পরিচর্যা করেও যারা ধানের বীজতলা পঁচন রোগ থেকে রক্ষা করতে পারেনি তারা কৃষি বিভাগের কাছে পরামর্শ নিয়ে নতুন করে বীজতলা বপন ও তৈরী করছে।

এদিকে মানব সৃষ্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল, অবোরোধ ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ তীব্র শীত মোকাবেলা করে লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগে কৃষক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বোরো চাষের অনুকূল পরিবেশ থাকায় গ্রামে গ্রামে বোরো ধানের চারা রোপনে ধূম পড়েগেছে। কৃষক পরিবার গুলো এখন মহা ব্যস্ত সময় পাড় করছে। তাদের লক্ষ্য এখন একটাই বোরো ধানের চারা রোপন করা। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ সৃষ্টি না হলে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের আশ করছে কৃষক। যাতে করে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এবারে বোরো মৌসুমে হাইব্রীড, উচ্চসফলশীল ও স্থানীয় জাতের বোরো ধানের চারারোপনের কাজ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। দেশে কৃষি বান্ধব সরকার পূনরায় ক্ষমতায় আসায় কৃষক নিশ্চিত হয়েছে বোরো ধান চাষের মৌসুমে সারা, ডিজেলসহ কৃষি উপকরনের কোন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হবে না।

লালমনিরহাট জেলার পূর্বকদমা গ্রামের তরুন যুবক কৃষক এআর ফয়সাল রহমান রিংকু (৩৩) জানান, শৈত্য প্রবাহের হাত থেকে রক্ষায় ১৫- ২০ বছর আগে তার দাদুকে দেখেছেন শৈত্য প্রবাহের সময় বীজতলার চারা গাছে জমা হওয়া মুক্তর দানার মত শিশির বিন্দু কাটি দিয়ে দিনে ৩- ৪ বার সরিয়ে দিতে। এতে করে বীজ তলার চারা পঁচন রোগ থেকে রক্ষা পায়। তার পদ্দতি ব্যবহার করে এবারে তীব্র শীত ও শৈত্য প্রবাহ থেকে চারা ধানের বীজতলা পঁচন রোগ থেকে রক্ষা পেয়েছে। এই পদ্দতি তার এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বোরো বীজতলা রক্ষা পাওয়ায় তাকে ক্ষতির সম্মূখিন হতে হয়নি। তাই বোরো ধানের চারা বীজতলা থেকে তুলে রোপনের কাজে মনোনিবেশ করেছে। বর্তমান সরকার কৃষক বান্ধব সরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সার, বীজ ও কীটনাশক কোম্পানীল কর্মকর্তারা পচঁন রোগ হতে রক্ষায় নিজি নিজ কোম্পানীর ঔষধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। এতে করে উৎপাদন ভাল হবে বলে কৃষককে বুঝচ্ছে। কিন্তু কৃষক পয়সা খরচ করে তাদের ঔষধ বিগত দিনে ব্যবহার করে আশানুরুপ ফল পায়নি। তাছাড়াও এতে ধান চাষে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। কিন্তু লাগসই বহুবছরের কৃষকের নিজস্ব পুরাতন পদ্দতি ব্যবহারে খরচ কম হয়। এই পদ্দতিতে কোন খরচ নেই চললেই চলে। এখানে কৃষকের শারীরিক পরিশ্রমেই খরচ। তাই বীজতলার চারা রক্ষায়। কাঠি পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল মজিদ জানান, বর্তমানে আকাশ রৌদ্দু উজ্জল হয়ে উঠেছে। এখন বোরো ধানের বীজতলা নতুন করে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। বীজতলা এখন রোপনের জন্য সম্পূন রুপে প্রস্তুত। রংপুর বিভাগীয় কৃষি কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানাগেছে, লালমনিরহাটে প্রায় ৩৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলায় চারা তৈরী হয়েছে। রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় প্রায় ৪ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে উফশী, হাইব্রীড ও স্থানীয় জাতের বোরো ধানের বীজতলা তৈরী হয়েছে। বাজারে বোরো ধানের চারার সরবরাহ প্রচুর। বোরো রোপনের মৌসুমে কোন অবস্থাতেই ধানের চারার সংকট সৃষ্টি কোন সম্ভবনা নেই। পর্যাপ্ত পরিমান বীজতলা তৈরী হয়েগেছে। কৃষকের ঘরে ঘরে ধূম পড়েগেছে বোরো ধানের চারা রোপনের কাজে।

লালমনিরহাটে ৫১ হাজার ৩০২ হেক্টর জমিতে উফশী ও হাইব্রীট জাতের ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই