উচ্চতাকে ভয়? কেন?

আপনি যখন উঁচু কোন দালানের সর্বোচ্চ ফ্লোরে চার দেয়ালের মাঝে অবস্থান করছেন তখন সেখান থেকে আপনার পড়ে যাওয়া অবাস্তব। তবু মনে ভয় জন্মাতে পারে। আপনি যখন প্লেনে ভ্রমণ করছেন, মনে হতে পারে প্লেনটি পড়ে যাবে, অথবা আপনি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। আর যখন আমরা অনেক উচ্চতায় কোন খোলা স্থানে থাকি? যেমন, বাসার ছাদ। এই ভয় অনেক সময় প্রপায়োসেপশন দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। যা ঘটে মস্তিষ্কের অসচেতন অনুভুতি থেকে। মস্তিষ্ক পরিমাপ করতে পারে না সে কতখানি উচ্চতায় অবস্থান করছে অথবা যে অবস্থানে সে আছে তার থেকে নীচের দূরত্ব কতখানি ইত্যাদি।

৫টি পদ্ধতিতে আমাদের মস্তিষ্ক নির্ধারণ করতে পারে আমরা কোথায় আছি।

১। আভ্যন্তরীন অনুভব- মাথার অবস্থান অনুভব করতে পারে, বুঝতে পারে মাধ্যাকর্ষণ টান এবং ত্বরণ।
২। চোখ- বস্তু থেকে দুরত্ব, বস্তুর অবস্থান, আবহাওয়ার অবস্থা।
৩। স্পর্শ- ভারসাম্যের অনুভুতি প্রদান করে।
৪। ঘ্রাণ- বস্তুর দূরত্ব এবং অবস্থান নির্দেশ করে।
৫। শ্রবণ- বস্তুর দূরত্ব এবং অবস্থান নির্দেশ করে।

শারীরিক এই পদ্ধতিগুলোর কোনটা যদি কাজ না করে, আমাদের সিগন্যাল প্রদান না করে তখন আমরা বস্তুর সাথে আমদের দুরত্ব বা অন্যান্য সম্পর্ক টের পাই না। আমরা অনিরাপদ বোধ করতে থাকি, ভয় পেতে শুরু করি। তখন ছাদের উপর থেকে নিচে তাকালে আমাদের মনে হয় আমরা পড়ে যাব। এমনকি সামান্য উচ্চতা থেকে যেখান থেকে পড়ে গেলেও কোন ক্ষতি নেই, তা আমদের কাছে অনেক দুরত্ব বলে অনুভুত হতে পারে। রাস্তা পারাপারের সময়ও দূরের গাড়ি মনে হতে পারে অনেক কাছে চলে এসেছে।

উচ্চতাকে ভয় পাওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে কাল্পনিক উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন। পিটার প্যান, ম্যারি পপিন, ফ্লাইং নান সিনেমার মত। এই সিনেমাগুলোতে কাল্পনিক চরিত্রগুলোকে আমরা কোন প্লেনে উড়তে দেখি না। বরং দেখি স্বশরীরে উড়তে যা আসলে বাস্তব নয়। ক্যাপ্টেন ট্রুমান কামিং, প্যান অ্যাম এ ‘fear of flying’ এর উপর কোর্স করছেন। তার মতে, অধিকাংশ পাইলটের উচ্চতা ভীতি রয়েছে, ককপিটে বদ্ধ অবস্থায় নয়, খোলামেলা উড়ন্ত অবস্থায়। তিনি আরও মনে করেন, পাইলটরা সাধারণ মানুষের তুলনায় কাল্পনিক উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন আরও বেশি দেখেন। আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় তাদের মস্তিষ্কে এলার্ম ঘড়ির মত সেই স্বপ্ন ফিরে আসে এবং তাদের মনে হতে থাকে, প্লেনের প্রয়োজন নেই, তারা নিজেরাই উড়ে বেড়াতে পারবেন।

একইভাবে যে মানুষেরা এই প্যানিক এটাকের স্বীকার হন তারা জানেন যে এই প্যানিক এটাক থেকে তারা বের হতে পারবেন অবস্থা থেকে পালিয়ে। অর্থাৎ, প্যানিক এটাকের শুরুতেই তিনি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেন। তবে কাজটি সহজ নয় মোটেও। অতিমাত্রায় প্যানিক হয়ে গেলে এ ধরণের মানুষকে সামলানো খুবই কঠিন। কারণ, আপনি দেখতে পাচ্ছেন সিঁড়ি থেকে নীচে নামতে মাত্র একটি ধাপ, কিন্তু যার প্যানিক এটাক হয়েছে তিনি দেখছেন ধাপটি অনেক দীর্ঘ। কোনমতেই সেই এক পা ফেলে তিনি নামতে চাইবেন না।

এধরণের সমস্যায় একজন মনোবিজ্ঞানী সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করতে পারেন। নিয়মিত থেরাপী নিয়ে একজন ফিরে আসতে পারেন সুস্থ জীবনে।



মন্তব্য চালু নেই