কক্সবাজারের কিছু খবর

উখিয়া সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের অনিয়ম দেখবে কে? উখিয়ার জমির দাতা ও গ্রহীতারা ঠকছে

কক্সবাজারের উখিয়ার হাজারো জমির দাতা ও গৃহীতাসহ রেজিষ্ট্রাট করতে আসা সাধারণ লোকজন নানা ভাবে হয়রানীর ও লোকসানের হয়রানী হলেও পকেট ভারী হচ্ছে উখিয়া সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও জমি রেজিষ্ট্রাট সংক্রান্ত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জ্ঞান না থাকায় পাশা-পাশি বাড়ছে মামলা মোকদ্দমা। এসব ঘটনায় জড়িয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

বাংলাদেশের ভুমি আইনে কি আছে তা সম্পর্কে তারা জানেন না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি দালাল চক্র ও কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। ফলে দিনের পর দিন সাবরেজিষ্টার কার্যালয়ে আগত জমির দাতার গ্রহীতারা বিভিন্ন ভাবে প্রতারিত হচ্ছে। উখিয়া সদরের ১০/১২ জনের একটি দলিল লিখক ও নকল কারক সিন্ডিকেট, দালাল-ফড়িয়া ও সাবরেজিষ্টার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনৈতিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অত্যচারে বিষিয়ে তুলেছে দাতা গ্রহীতাদের। সাবরেজিষ্ট্রার অফিসের রেজিষ্ট্রি সম্পর্কিত তথ্য তাদের জানা না থাকায় পদে পদে অতিরিক্ত ফিসের দাবানলে পড়ে অনেকেই সর্ব শান্ত হচ্ছে।

হাজিরপাড়ার আব্দুল হাকিম জানান, অতিরিক্ত ফিসের ব্যাপারে প্রতিবাদ করায় তার একমাত্র ভিটে মাটির দলিলটি এখনো রেজিষ্ট্রি সম্পাদন হয়নি। একই ভাবে পালংখালী ইউনিয়নের মোঃ জলিলের তার ভিটের জমিটি অন্যের নামে ছিল। ওই জমিটি না দাবীতে কিংবা ফেরত দেওয়ার রেজিষ্ট্রি দিতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে রেজিষ্ট্রি করাতে পারেনি।

এদিকে উখিয়া সদরে গড়ে উঠা দালাল চক্র ও দলিল লিখক ও নকল কারক সিন্ডিকেট ও সাবরেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের দুর্নীতিবাজ কতিপয় কর্মচারীরা নিজের খেয়াল-খুশি মত যা ইচ্ছা তাই করছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে জানান, রাতা-রাতি অনেক দলিল লিখক ও সাবরেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে অর্থ ও সম্পদের মালিক বনে গেছেন। অফিস সহকারী চিত্তরঞ্জন সুশীল, মোহরার সজীব কান্তি দে ও মোকতার আহমদ কোটিপতি বনেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, স্ট্যাম্প ডিউটি বিধি মোতাবেক দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে যে ফি আদায় করছে ঠিক তার দ্বিগুন অর্থ গুনতে হয় জমি দাতা ও গ্রহীতাদের। তুলনামূলক যদি সরকারী ফি ১ লক্ষ মূল্যমানের দলিলে যদি ১০ হাজার টাকা হয় এ ক্ষেত্রে ২০/৩০ হাজার টাকাও আদায় করা হচ্ছে। এ ভাবে কোটি টাকার দলিলে কত অবৈধ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তার কোন সঠিক ইয়াত্তা নেই। বিশেষ করে দলিল লিখকদের নিকট নিমর্মভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন দাতা ও গ্রহীতারা।

উপজেলার ১২টি মৌজার মধ্যেবর্তমানে ৬টি মৌজায় সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অনুমতি পেলে তার পর তা বিক্রি করা যায়। যে সব মৌজায় সরকারী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সে গুলো হচ্ছে জালিয়াপালং, ইনানী মৌজা, রতœাপালং মৌজা, রুমখাঁ পালং মৌজা, উখিয়ারঘাট ও পালংখালী মৌজার জমি বেঁচা কেনা বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য মৌজার জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দামের পার্থক্য হয়। উপজেলা সদর ছাড়া প্রতিটি মৌজার জমি বিঘা প্রতি ৪ লাখ টাকা বিক্রয় হয়। অথচ সদরের প্রতি শতাংশ জমির মূল্য সর্বনিু ১ লাখ ৫০ হাজার কিংবা ২ লাখ টাকা। আর এ সুযোগকে হাত ছাড়া করতে নারাজ কতিপর্য দলিল লিখক ও নকল কারক এবং সাবরেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। তাদের ইচ্ছামত অতিরিক্ত অর্থ জমি দাতা গ্রাহীতাদের নিকট থেকে আদায় করে থাকেন। উখিয়া সদরের দলিল লিখক ও নকল কারক সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন ধরে সাবরেজিষ্ট্রার কার্যালয়টিকে ঘিরে এ অপকর্ম চালিয়ে আসছে। ওই সিন্ডিকেট ঠিক করেন কোন মৌজার জমি কোন দামে রেজিষ্ট্রি হবে।

সূত্র জানা যায়, ১ লাখ টাকার উপরে এক রকম দাম, নিচে আর এক দাম। ৫ লাখ টাকার উপরে আরেক দাম। ১০ লাখ টাকার উপরে আর এক দাম। এভাবে জমিদাতা ও গ্রহীতারা ভুমি আইন সম্পর্কে জ্ঞাত না হওয়ার কারণে দলিল লিখকদের নিকট প্রতারণার শিকার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারী বিধি-বিধানে কোন বালাই নেই।

একজন জমি দাতা ও গ্রহীতা ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এক বিঘা জমি রেজিষ্ট্রি করতে কত টাকার স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি, ট্রাজারী চালান, অফিস খরচ, দলিল লিখকের খরচসহ অন্যান্য খরচ কত টাকা তা ক্রেতা বিক্রেতারা জানেন না। এ ছাড়া এক বিঘা জমির দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে খাজনা খারিজ ফি কত তা কেউ জানেন না। অপর দিকে দলিল দাতারা জীবন জীবিকার প্রয়োজনে দলিল লিখকের নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে। কোন ব্যক্তি অত্যান্ত কঠোর প্রয়োজন ও ঠেকায় পড়ে নিরোপায় হয়ে নিজের শেষ সম্বল হিসেবে বাড়ি ঘর, ভিটা, পুকুর, টিলা, নাল জমি, বাঁশ ঝাড়, জলাশয়, পাহাড়ী, ধানীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর জমি ক্রয় করতে সাবরেজিষ্ট্রার কার্যালয়ে এসে প্রথমে যান তার নিকটতম অথবা পরিচিত দলিল লিখক ও নকল কারকের কাছে। একজন দলিল দাতার শুরু হয় অর্থনৈতিক ভাবে খরচের পালা। নানা অজুহাতে দলিল লিখককেরা প্রথম দফায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। তারপর দ্বিতীয় দফা সাবরেজিষ্ট্রার কার্যালয়ে দেওয়ার অজুহাতে আর এক দফা হাতিয়ে নেন। আসলে তার দলিল থেকে সরকার কত টাকা রাজস্ব ফেল এ কোন হিসাব বা চিন্তা ক্ষতিগ্রস্থ দলিল দাতারা করেন না। উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রার নজরুল ইসলাম সরকারের নিকট এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

উখিয়ার শীর্ষ মানবপাচারকারী রেবি ম্যাডামের তান্ডব : আহত ৫ : দশক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট
সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় শীর্ষ মানবপাচারকারীর রাণী রেজিয়া আক্তার প্রকাশ রেবি ম্যাডাম কারাগার থেকে জামিনে বের˝ হয়ে এলাকায় তান্ডব চালিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানবপাচারের তথ্য প্রকাশ করার অভিযোগে রেবি ম্যাডামের নেতৃত্বে সোনারপাড়া বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট করে তান্ডবা চালিয়েছে। এ সময় তার বাহিনীর হাতে আহত হয়েছে ৫ জন।

শনিবার রাত সাড়ে ৮ টা থেকে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে এ তান্ডব চালায় ৩০/৩৫ জন চিহ্নিত মানবপাচারকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী চক্র। সোনারপাড়া বাজারের স্থানীয় লোকজন জানান, রেবি ম্যাডামের নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জন চিহ্নিত মানবপাচারকারী অস্ত্র নিয়ে সোনারপাড়া দোকানে হামলা চালায়। এসময় তারা মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিমের মালিকানাধীন ঔষুধের দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় হামলায় আহত হন আব্দুল হামিদ। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় মেম্বার আবুল হোছন সহ স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা চালায়।

আহত আব্দুল হামিদ জানান, সন্ত্রাসীরা মামলা চালিয়ে নগদ টাকা সহ ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তার বড় ভাই মোহাম্মদুল্লাহ বাদী হয়ে রেবি ম্যাডামকে প্রধান আসামী করে গতকাল রোববার ১১ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া এলাকার নূরুল কবির ১ বছর আগেও একজন কৃষক হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল। তার স্ত্রী রেজিয়া আক্তার প্রকাশ রেবি ম্যাডাম ছিলেন একটি বেসরকারী বিমার মাঠ প্রতিনিধি। কিন্তু সাগর পথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের জড়িয়ে একটি বাহিনী গঠন করে এখন তারা কোটিপতি এবং শীর্ষ মানবপাচারকারীদের দুই জন। দুই জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা রয়েছে থানায়। গত ২৩ নভেম্বর কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হন রেবি ম্যাডাম। এ মামলায় জামিনে মুক্তির পর এলাকা ফিরে এ তান্ডব চালানো হয়। উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনাস্থল উখিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন মজুমদার পরিদর্শন করেছেন।

 

 

উখিয়ায় বন বিভাগের আরো ২ টি স্থাপনা উচ্ছেদ
কক্সবাজারের উখিয়ার বন বিটের অধীনে থাইংখালী বিটের আওতায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা দুটি স্থাপনা উচ্ছেদ করার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার সকাল ১১ টায় থাইংখালী বিট কর্মকর্তার নেতৃত্বে বনকর্মীরা তাজনীমার খোলা এলাকা থেকে এ স্থাপনা দুটি উচ্ছে করা হয়। বিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বন বিভাগের জায়গায় অবৈধ ভাবে জবর দখলকারীদের ক্রমান্বয়ে উচ্ছেদ করা হবে।

 

 

কক্সবাজার-টেকনাফ মহা সড়কে বিজিবির নিরাপত্তায় পন্য বোঝাই যান চলাচল করছে
কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের ৭৯ কিলোমিটার এলাকায় ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধে তৈলবাহী ও পন্য বোঝাই যানবাহন গুলোতে নাশকতা ঠেকাতে বিজিবি কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

শনিবার রাতেও চট্টগ্রাম থেকে বিজিবি’র সহযোগিতায় ৮ টি জ্বালানী তৈল বোঝাই গাড়ি কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জ্বালানী তৈল, ভোজ্য তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য যাতে সংকট সৃষ্টি না হয় এতে লক্ষ্য করে বিজিবি সড়কের বিভিন্নস্থানে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পন্য বোঝাই যানবাহন গুলোতে। বিরোধীদল অনিদিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডাকলেও উখিয়াতে কথিত অবরোধের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী নিয়ে যানবাহনের মাধ্যমে এসব পন্য উখিয়াতে আনছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। পন্য সংকট না থাকায় বাজারেও কোন দ্রব্য মূল্যে প্রভাব পড়েনি অবরোধের। যানমালের নিরাপত্তা ও ঠিক সময়ে দুরপাল্লার যানবাহন গুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতায় নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে।

কক্সবাজার ১৭ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল খন্দকার সাইফুল আলম জানান, জ্বালানী তৈল সংকট না হওয়ার লক্ষ্যে বিজিবি জ্বালানী তৈলবাহী যানবাহন গুলোতে কঠোর নিরাপত্তার সহিত নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে।

কক্সবাজারস্থ বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল খালেকুজ্জামান বলেন, জ্বালানী তৈল বোঝাই গাড়িতে যাতে কোন ধরণের নাশকতা করতে না পারে এব্যাপারে বিজিবি’র সদস্যরা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা, কোটবাজার, উখিয়া সদর, থাইংখালী, পালংখালী, হোয়াইক্যং,  ও টেকনাফ সদর এলাকা পর্যন্ত বিজিবির সদস্যরা সর্তকতার সহিত ওই সব যানবাহন গুলোতে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে।

চৌধুরী ফিলিং ষ্টেশনের সত্বাধিকারী সাবেক উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, অবরোধে জ্বালানীবাহী যানবাহনে বিজিবি নিরাপত্তা জোরদার করায় কোথাও এ পর্যন্ত জ্বালানী তৈলের সংকট সৃষ্টি হয়নি। তিনি বিজিবির এ উদ্যোগকে সন্তোষজনক বলে মনে করেন।



মন্তব্য চালু নেই