মালয়েশিয়ার জঙ্গলে কিশোরের আর্তনাদ

উখিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তালিকাভূক্ত মানব পাচারকারীদের খোঁজে পুলিশ তৎপর

কক্সবাজারের উখিয়ার উপকূল দিয়ে দালালদের মাধ্যমে সোনার হরিণ ধরার আশায় কম টাকায় মালেশিয়ায় যাওয়ার পথে দালালরা বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক দফা বিক্রি করে দিলে মালেশিয়াগামীরা ঠিকমত পৌছতে পারেনা। সেইখানে গিয়ে তারা মালয়েশিয়া জঙ্গলে পৌছলে দালালরা নির্যাতন করে তাদের পরিবারের কাছে ফোন করে দেড় থেকে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত টাকা দাবী করে। যারা দিতে পারে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যারা দিতে পারেনা তাদেরকে নির্যাতন পূর্বক মেরে ফেলা হয়। সেই সব মালয়েশিয়াগামীদের আর্তনাদের অন্ত নেই। তেমন এক নির্যাতনের শিকার এক যুবক তার বোনকে মোবাইল ফোনে আর্তনাদ করে বলেন, বোন আমাকে বাচাঁও, দালালেরা আড়াই মাস ধরে তাদের বন্দিশালায় মালয়েশিয়ার জঙ্গলে আটকিয়ে রেখে আমাকে নির্যাতন করছে। সপ্তাহে দু’য়েক বেলা খাবার জুটলেও উপবাসে আমার যায় যায় অবস্থা। দালালেরা বলছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ না করলে আমাকে মেরে ফেলা হবে। বোন যেভাবে হোক আমাকে বাঁচানোর জন্য টাকা পাঠাবার ব্যবস্থা কর। কথা গুলো বুধবার রাতে মুঠো ফোনে তার বড় বোন রোকেয়া বেগমকে বলছিল থাইল্যান্ড জঙ্গলে আটক উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম দরগাহবিল গ্রামের মৃত মির আহমদের ছেলে জসিম উদ্দিন (১৬)।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত আড়াই মাস পূর্বে উপজেলার ডিগলিয়াপালং গ্রামের কবির আহমদের ছেলে আলী আহমদ তাকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে উপকূলের সোনাইছড়ি ঘাট দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দেয়। এরকম অহরহ তথ্যবহুল ঘটনা উখিয়ার গ্রামগঞ্জের আনাছে কানাছে ঘটলেও তা ফলাও করে আত্মপ্রকাশ না করায় নিরবে নিভৃতে মানবপাচার চলে আসছিল। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণখবরের সন্ধান আবিস্কৃত হওয়ার পর সেখান থেকে বাংলাদেশী নাগরিকের জীবন্ত কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে উখিয়ার আনাছে কানাছে।

জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা জালিয়াপালং ইউনিয়নের চোয়াংখালী ঘাট দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে পাচারের ঘাট বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলের ১৩টি পয়েন্ট দিয়ে দিনে রাতে মানবপাচার চলতে থাকে। এসময় পুলিশ মাঝে মধ্যে হানা দিয়ে দালাল সহ মালয়েশিয়া যাত্রীদের আটক করলেও প্রকৃত দালালেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় কোন প্রকার প্রভাব পড়েনি মানবপাচারের উপর। এদিকে হলদিয়া পালং ইউনিয়নের রুমখাঁ মৌলভী পাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে হোছাইনের(২৫) সাথে একই গ্রামের জাফর আলমের মেয়ে কোটবাজার ফাতেমাতুজ জাহ্রা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা বেগমের (১৯) বিয়ে হয় ২০১৪ সালের ফেব্র“য়ারী মাসে। সংসার জীবনে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চলতি বছরের ১৩ মার্চ হোছাইন দালালের হাত ধরে মালয়েশিয়া পাড়ি জমায়।

হোছাইনের স্ত্রী আয়েশা জানান, আড়াইলক্ষ টাকার চুক্তিতে নগদ ৩০ হাজার টাকা প্রদান করলে স্থানীয় দালাল দুদু মিয়ার ছেলে ছিদ্দিক আহমদ ও মৃত রশিদ আহমদের ছেলে ছৈয়দ হোছনের হাত ধরে তার স্বামী মালয়েশিয়া পৌঁছে টাকা পরিশোধের কথা বললে যথা সময়ে বাকী টাকা দালালদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু দালাল চক্র ওই টাকা পাওয়ার পরও মালয়েশিয়াস্থ দালালের ছেলে সোহেল কে টাকা পরিশোধের কথা অস্বীকার করায় সেখানে হোছাইনের উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। আয়েশা আরো জানান, এভাবে তাকে ১৫ দিন অনাহারে, অর্ধাহারে বন্দিশালায় আটকিয়ে রেখে নির্যাতনের এক পর্যায়ে সে মারা যায়। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ছৈয়দের বড় ভাই পেঠান আলী মুঠোফোনে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে পরিবারের কাছে জানালে গ্রামের বাড়ীতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জহিরুল ইসলাম খান জানান, দালালের সুনির্দিষ্ট কোন তালিকা না থাকলেও ২০১২ সাল থেকে উখিয়া থানায় প্রায় ৩৫টি মানবপাচার আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ২০ জনেরও অধিক দালাল কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাদবাকী দালালদের আটকের জন্য পুলিশ প্রতিরাতেই বিভিন্ন স্থানে তল্লাসী অভিযান অব্যাহত রেখেছে।



মন্তব্য চালু নেই