সংকুচিত হচ্ছে বনভূমি

উখিয়ায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে বস্তির আয়তন দিন দিন বাড়ছে

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবির এলাকায় পূর্ণবাসিত রোহিঙ্গা বস্তির আয়তন জ্যামিতিক আকারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সংকুচিত হয়ে আসছে রক্ষিত ও সংরক্ষিত সরকারী বনভূমি। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট ব্যবহার করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ পরবর্তী স্থায়ী বসবাসের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার ঘটনায় সরকারি বনভূমির উপর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদী সচেতন মহল।

সূত্রমতে ২০০৫ সালের মে মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাওয়ার ফলে কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক আটকা পড়ে যায়। ২০১০ সালে সীমান্তের নাফনদী ও পাহাড়ী এলাকা অতিক্রম করে আরো প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা কুতুপালং বনভূমির জায়গা দখল করে আশ্রয় নেয়। এসময় স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগ একাধিকবার যৌথ অভিযান চালিয়ে অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেনি। পরে স্থানীয় বনবিভাগ এসব রোহিঙ্গাদের দু’শত একর বনভূমির জায়গা চিহ্নিত করে এসব রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ভাবে পূর্ণবাসিত করে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য মতে এসবা রোহিঙ্গারা দিন দিন স্থাপনা সম্প্রসারিত করার ফলে বর্তমানে প্রায় চারশত একর বনভূমি রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। এসব নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ও বস্তিতে বসবাসের সুযোগ পেয়ে আসে পাশের সরকারি বনভূমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ পূর্বক বিচ্ছিন্ন ভাবে বসবাস করার সুযোগ করে নিচ্ছে বলে গ্রামবাসী জানায়।

সরেজমিন বড় ইনানী, ছোট ইনানী, সোনাইছড়ি, জুম্মাপাড়া, হরিণমারা, লম্বাশিয়া, বালুখালী, হাতিরঘোনা, তেলখোলা, মোছারখোলা বনভূমির জায়গা দখল করে বসবাস করছে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির সদস্য ফরিদুল আলম জানায়, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে

অনুপ্রবেশকরা রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বনভূমির জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে। এদের অনুসরণ করে প্রতিদিন অহরহ রোহিঙ্গা নাগরিক বনভূমি দখল অব্যাহত রাখার ফলে সংকুচিত হয়ে আসছে সরকারি বনভূমির আয়তন। তিনি আরো বলেন, বনভূমির পরিত্যক্ত জায়গায় স্থানীয় ভূমিহীনদের পূর্ণবাসিত করা হলে রোহিঙ্গারা বন দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করার সুযোগ পেত না।

বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়া জানায়, স্থানীয়দের সহযোগীতায় রোহিঙ্গারা বনভূমিতে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ করে নিচ্ছে। না প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গ্রামবাসী জানান, ওয়ালাবিট কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মিয়ার ঘুষ বাণিজ্যের কারণে ওয়াবিটের আওতাধীন প্রায় ৫শ’ একর বনভূমিতে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা পরিবার স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছে।

এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিট কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মিয়া জানান, তিনি ওয়ালা বনবিটের যোগদান করার পূর্বে রোহিঙ্গারা ওইসব বনভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ধারাবাহিকতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বনভূমি জবরদখল থামবে না। তিনি এব্যাপারে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান।



মন্তব্য চালু নেই