ঈদ এখন ফেসবুকেই

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এখন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দৈনন্দিন জীবনের এখন নিত্যসঙ্গী অন্তর্জাল জীবন। প্রতিদিনের নানা হালচাল এখন এক মুহূর্তেই পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুকে। সেহরিতে কী খাচ্ছেন? ইফতার কোথায় করছেন? সবকিছুই যেন এক সূত্রে গাঁথা। ঈদেও এর ব্যতিক্রম নয়।

নিজের প্রয়োজনেই হোক আর পেশার প্রয়োজনেই হোক ফেসবুক এখন নিত্যসঙ্গী। নিজের প্রতি মুহূর্তের আপডেট অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে মিস করেন না অনেকেই। যমুনার চরের তরুণরা এখন ঈদের সকালে নদীর পানিতে ডুব দেওয়ার আগেও সেলফি দিতে ভুলেন না। যেমনি ভুলেন না শহুরে তরুণরা ঈদের সকালের মেঘমুক্ত বা মেঘময় আকাশের ছবি ফেসবুকে আপলোড করতে।

বলতে গেলে ঈদের সকালটা শুরু হয় ফেসবুকেই। ঘুম থেকে ওঠেই নিউজফিডের সবশেষ আপডেট দেখে অনেকেই সিদ্ধান্ত নেন কীভাবে ঈদের দিনটা কাটাবেন। অনেকেই খাবার ছবি দেখে মায়ের কাছে আবদার জুড়েন এই খাবারটি তার চাই-ই চাই। নতুন জামা পরে ঈদের মাঠে যেতে যেতে শুরু হয় ঈদ সেলফি। বাবার সঙ্গে কিংবা ছোট বড় ভাইয়ের সঙ্গে। এক সময় ঈদ শীতকালে হলেও এখন পুরো গরম। খোলা ঈদগাহে সকালের তীব্র রোদে ঘেমে একাকার সবাই। তবু থেমে নেই সেলফি। নামাজ শেষে কোলাকুলিতেও সেলফির জুড়ি নেই। বাড়ি ফিরতে ফিরতে নিউজফিড জুড়ে ঈদের নামাজের সেলফি। অন্তর্জালের দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে পদ্মা তীরের জেলে পাড়ার ঈদ আনন্দ থেকে শুরু করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঈদ আনন্দ। সবই যেন এক সূত্রে গাঁথা।

ফেসবুকের দুনিয়ার অলস সময় কাটে অনেকের। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে মিস হয়ে যায় ঈদের নামাজ। তবে ঈদের বাকি আনন্দ মিস করার সুযোগ নেই। বাসার মজার মজার খাবারগুলো খেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমে কলেজের মোড়ে কিংবা স্কুলের পেছনের সেই পুরনো গাছতলায়। এতো শহুরে ঈদের চিত্র। আর গ্রামে নামাজ শেষ করে এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে নিজের বাড়ি ফিরতে ফিরতে কেটে যায় অনেক সময়। সবকিছু আপডেটই ফেসবুকে। এবার অবশ্য ছবি ও ভিডিওর পাশাপাশি লাইভেও দেখা যাবে অনেককে। নিজের ফেসবুক পেইজে কিংবা গ্রুপে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে যুক্ত হবেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। ইউরোপ আমেরিকা থেকে শুরু করে মেঘনার মোহনার পাশের ছোট্ট ঈদগাহ মাঠ থেকেও হতে পারে এমন কাজ। নোটিফিকেশনের বেড়াজালে হাপিয়ে উঠেন অনেকেই। মেসেঞ্জারের টিং টিং শব্দের কাছে হার মেনেছে এসএমএস এর সোনালী অতীত। ৫ টাকায় হাজার এসএমএস এর অফারেও এখনো আকৃষ্ট করে তারা তরুণ-তরুণীদের। মেসেঞ্জারেই ছড়িয়ে যায় ঈদের সব ভালোলাগা ভালোবাসার গল্প। অন্যের ছবিতে নিজের কথাগুলোর সঙ্গে ইমোটিকনের ছোঁয়ায় ফেসবুকে যুক্ত হয় বাড়তি আনন্দ।

সবকিছুর সঙ্গে কিছু মানুষের গল্প একেবারেই আলাদা। এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী থেকে শুরু করে বার্তাকক্ষের সম্পাদকদের গল্প। যাদের ছুটি নেই। ফেসবুকে অন্যদের ছবির সঙ্গে যুক্ত হয় তাদের মনের গভীরের কথা। ছুটি থেকেও ছুটি নেই তাদের। সবাই যখন আনন্দে ব্যস্ত। তখন বার্তাকক্ষের ব্যস্ততা কাটে কী-বোর্ডে। তবে এখানেও রয়েছে অন্যরকম আনন্দ। যার দেখা মেলে ফেসবুকেও। ছুটি না থাকলেও নতুন পোশাকে নিজের ডেস্কে বসে সেলফি দিতে ভুলেন না তারা।

ঈদের নাটকগুলোও এখন পাওয়া যায় ফেসবুকে। এনিয়ে বিব্রত ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো। বিজ্ঞাপন বিহীন নাটক দেখাতেও জুড়ি নেই ফেসবুকের। তাই বাক্সবন্দি বিনোদনও টানে না এখনকার তরুণ-তরুণীদের। ফেসবুকের এই ঈদ আনন্দ অটুট থাকুক সবসময়।



মন্তব্য চালু নেই