ইসলামের আলোকে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য ও অধিকার

আল্লাহ তা’আলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তার জীবন যাপনের পন্থা বাতলে দিয়েছেন। তার জৈবিক ও আত্মিক চাহিদা পূরণের নিয়ম কানূন বলে দিয়েছেন। আর মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এই বিধি বিধান মেনে চলার মাধ্যমেই ইহলৌকিক মুক্তি ও সমৃদ্ধি এবং পরলৌকিক শান্তি ও সফলতা নিহিত। আল্লাহ তা’আলা নারী ও পুরুষের মধ্যে যে পারস্পরিক আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তাদের একের সাথে অপরের সুখময় জীবন যাপনের যে পন্থা দিয়েছেন, তা হচ্ছে বিয়ে। বৈবাহিক বন্ধনের দ্বারা মানব সৃষ্টির বৈধ ধারা অক্ষুণœ রাখার নিমিত্তে আল্লাহ তা’আলা নারী পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কে বিধিবন্ধন করেছেন। আল কুরআনে তিনি ইরশাদ করেছেন- ‘তাঁর আরও এক নিদর্শন হচ্ছে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ [সূরা রুম : ২১]

অর্থাৎ বিয়ে মানব জীবনের কেবল যৌন আকাঙ্খা চরিতার্থ করার সম্পর্কই নয়, বরং তা মানুষের জন্য আল্লাহ তা’আলার এক বিরাট নেয়ামত যার মাধ্যমে মানুষ পরম প্রশান্তি লাভ করতে পারে। বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও নারীর দাম্পত্য জীবনের সূচনা হয়। আর সুন্দর ও আদর্শ দাম্পত্য জীবন গড়ে তোলা প্রত্যেক মুমিন মুমিনার দায়িত্ব। জান্নাতে ঈমানদার লোকদের যেসব নেয়ামত প্রদান করা হবে, সেগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে আল কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন- ‘আমি জান্নাতি রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী, কামিনী, সমবয়স্কা।’ [সূরা ওয়াকিয়া: ৩৫-৩৭]

উপরোক্ত বক্তব্য তখনই আখিরাতের জীবনে স্থায়ী হবে যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ই মুত্তাকি হবে এবং উভয়ই জান্নাতবাসী হবে। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে বলা হয়েছে- ‘বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্র“ হবে, তবে খোদাভীরুরা নয়।’ [সূরা যখরুফ : ৬৭]

বস্তুত: স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার প্রেম প্রীতি ও ভালোবাসা ছাড়া কিছুতেই মানবজীবন সৌন্দর্য মন্ডিত হতে পারে না। তাই সফল ও সুখময় দাম্পত্য জীবনের জন্যে কুরআন হাদীসের আলোকে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে জানা দরকার।

স্বামীর কর্তব্য
দাম্পত্য জীবনের সফলতার প্রথম শর্ত হচ্ছে একে অপরকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে বরণ করে নেয়া। তাদের সম্পর্ক হবে একান্ত আন্তরিক ও একনিষ্ঠ। একের অন্তরে অপরের প্রতি কোনো প্রকার বিতৃষ্ণা থাকবে না।

মানুষ হিসেবে স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের মধ্যে কিছু দোষ ক্রটি থাকতে পারে। অথবা স্ত্রীর মধ্যে এমন কিছু পাওয়া যেতে পারে যা স্বামীর পছন্দনীয় নয় এবং স্বামীর মধ্যেও এমন কিছু পাওয়া যেতে পারে যা স্ত্রীর পছন্দনীয় নয়। এমতাবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. তাদের পরস্পরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিয়েছেন। এরকম অবস্থার দুর্বলতা সাধারণত নারীদের মধ্যেই একটু বেশি পাওয়া যায়। অল্পতেই রেগে যাওয়া, অভিমানে ক্ষুব্ধ হওয়া এবং স্বভাবগত অস্থিরতায় চঞ্চলা হয়ে উঠা নারী চরিত্রের বিশেষ দিক। মেয়েদের এ স্বাভাবিক দুর্বলতা কিংবা বৈশিষ্ট্য যাই হোক না কেন, তা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভালভাবেই জানতেন। তাই তিনি স্বামীদের নির্দেশ দিয়েছেন- ‘হে ঈমানদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহণ করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না, যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও; কিন্তু তারা যদি কোনো প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। তারপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’ [আন নিসা : ১৯]এ আয়াতের মাধ্যমে স্বামীদের এক ব্যাপক হিদায়াত দেয়া হয়েছে। স্বামীদের প্রতি আল্লাহর প্রথম নির্দেশ হচ্ছে- তোমরা যাকে বিয়ে করে ঘরে তুলে নিলে, যাকে নিয়ে ঘর বাঁধলে, তার প্রতি সবসময়ই খুব ভাল ব্যবহার করবে, তার অধিকার পূর্ণ মাত্রায় আদায় করবে। নবী করীম সা. বলেছেন: কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীকে তার কোনো একটি অভ্যাসের কারণে ঘৃণা না করে। কেননা, তার মধ্যে একটি অভ্যাস অপছন্দ হলে, অপরাপর গুণাবলী দেখে সে খুশীও হতে পারে। [মুসলিম] অনুরূপভাবে স্ত্রীকেও স্বামীর খুঁটিনাটি দুর্বলতা উপেক্ষা করা কর্তব্য এবং তার অন্যান্য গুণাবলীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া উচিত। অর্থাৎ দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী উভয়েরই একে অপরেরর সামান্য দোষ ক্রটি উপেক্ষা করে সৎ গুণাবলীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সা. স্বামীদেরকে স্পষ্ট নসীহত করে বলেছেন, ‘তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সবসময় কল্যাণময় ব্যবহার করার জন্য আমার নসীহত কবুল করো। কেননা, নারীরা জন্মগতভাবেই বাকা স্বভাবের হয়ে থাকে। তুমি যদি জোরপূর্বক তাকে সোজা করতে যাও, তবে তুমি তাকে চূর্ণ করে ফেলবে। আর যদি তাকে ওভাবেই ছেড়ে দাও, তবে সে সবসময় বাকা হয়েই থাকবে। অতএব, বুঝে শুনে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার ব্যাপারে আমার উপদেশ অবশ্যই গ্রহণ করবে।’

এ হাদীস থেকে বুঝা যায়- নারীদের স্বভাবে বক্রতা এটা প্রকৃতিগত ও জন্মগত। তাই তাদের আসল প্রকৃতিকে যথাযথভাবে থাকতে দিয়েই তাদেরকে নিয়ে সুমধুর পারিবারিক জীবন গড়ে তোলা এবং তাদের সহযোগিতায় কল্যাণময় সমাজ গড়া যেতে পারে। আর তা হচ্ছে তাদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা, তাদের সাথে অত্যন্ত দরদ, নম্রতা ও সদিচ্ছাপূর্ণ ব্যবহার করা এবং তাদের মন রক্ষা করতে যথাসম্ভব চেষ্টা করা।

একজন ইউরোপীয় চিন্তাবিদ পুরুষদের লক্ষ্য করে বলেছেন: নারীদের গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবজনিত কঠিন ও দুঃসহ যন্ত্রণার কথা একবার চিন্তা করো। দেখো নারীজাতি দুনিয়ার কত শত কষ্ট, ব্যথা, বেদনা ও বিপদের ঝুুঁকি নিজেদের মাথায় নিয়ে বেঁচে থাকে। তারা যদি পুুরুষের ন্যায় ধৈর্যহীন হত, তাহলে এতসব কষ্ট তারা কি করে বরদাশত করতে পারত? প্রকৃতপক্ষে বিশ্বমানবতার এ এক বিরাট সৌভাগ্য যে, মায়েরজাতি স্বভাবতই কষ্ট সহিষ্ণু। তাদের অনুভূতি পুরুষদেরমত নাজুক ও কঠিন হলে, কষ্টকর কাজের দায়িত্ব পালন করা তাদের পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব ছিল।’

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ক্ষমাশীলতা দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য ও স্থায়িত্বের জন্যে একান্তই অপরিহার্য। যে স্বামী স্ত্রীকে ক্ষমা করতে পারে না, ক্ষমা করতে জানে না, কথায় কথায় দোষ ধরাই যে স্বামীর স্বভাব, শাসন ও ভীতি প্রদর্শনই যার কথার ধরন, তার পক্ষে কোনো নারীকে স্ত্রী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে স্থায়ীভাবে জীবন যাপন সম্ভব হতে পারে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্ত্রীদের সম্পর্কে সাবধান বাণী উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতি ক্ষমা সহিষ্ণুতা প্রয়োগেরও নির্দেশ দিয়ে ঘোষণা করেছেন: ‘হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে অনেকেই তোমাদের শত্র“। অতএব, তাদের সস্পর্কে সাবধান! তবে তোমরা যদি তাদের ক্ষমা কর, তাদের ওপর বেশি চাপ প্রয়োগ না কর বা জবরদস্তি না কর এবং তাদের দোষত্র“টি ক্ষমা করে দাও, তাহলে জেনে রাখবে আল্লাহ নিজেই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ [সূরা তাগাবুন : ১৪]

স্ত্রীদের প্রতি অত্যাচার জুলুম করাতো দূরের কথা, তালাক দিয়ে আবার ফেরত নিয়ে স্ত্রীকে কষ্ট দেয়া ও দাম্পত্য জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করাও ইসলামে নিষিদ্ধ। স্ত্রীদের সাথে মিষ্টি ও মধুর ব্যবহার করা এবং তাদের কোনরূপ কষ্ট না দিয়ে শান্তি ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দান করার সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও যদি কেউ তার স্ত্রীকে অকারণে জ্বালা যন্ত্রণা দেয়, ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, তবে সে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কারণে আল্লাহর গজবের যোগ্য হবে।
নবী করীম সা. ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসদেরমত না মারে। এভাবে মারধর করার পর দিনের শেষে তার সাথে কিভাবে যৌন সঙ্গম করবে?’ [বুখারি]

অর্থাৎ স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করাতো এক স্বাভাবিক কাজ, কিন্তু স্ত্রীকে এক দিকে মারধর করা আর অপরদিকে সেদিনই তার সাথে যৌনসঙ্গম করা অত্যন্ত ঘৃণার কাজ। এ সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহ. লিখেছেন: ‘স্ত্রীকে প্রচন্ডভাবে মারধর করা এবং সে দিনের বা সে রাতের পরবর্তী সময়ে তারই সাথে যৌন সঙ্গম করা এ দুটো কাজ এক সঙ্গে সম্পন্ন করা যে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তির দ্বারাই সম্ভব হতে পারে না, হওয়া বাঞ্ছনীয়ও নয়। স্ত্রীদের মারধর করতে, গালাগালি করতে এবং তাদের সাথে কোনরূপ অন্যায় জুলুম আচরণ করতে নিষেধ করে রাসূলে করীম সা. স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন: ‘তোমরা স্ত্রীদের মুখের ওপর মারবে না, মুখমন্ডলের ওপর আঘাত দেবে না, তাদের মুখের শ্রী চেহারা বিনষ্ট করবে না, অকথ্য ভাষায় তাদের গালাগাল করবে না এবং নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কোথাও তাদের বিচ্ছিন্নাবস্থায় ফেলে রাখবে না।’ [আবু দাউদ]

img_4086_1

এখানে প্রশ্ন হতে পারে, মুখমন্ডল ব্যতীত অন্যত্র মারধর করা কি জায়িয আছে? এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এজন্য যে তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সেমতে নেক্কার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর, যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায় তবে তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।’ [সূরা আন নিসা: ৩৪]

এখানে যেসব নারীরা তাদের স্বামীকে মানে না, বিদ্রোহ করে, তাদের ক্ষেত্রে স্বামীরা কি করবে, তাই বলা হয়েছে। এ আয়াতে এ ক্ষেত্রে প্রথমত: বলা হয়েছে স্ত্রীকে ভালভাবে বোঝাতে, উপদেশ দিতে, নসীহত করতে এবং একথা তাকে জানিয়ে দিতে যে, স্বামীকে মান্য করে চলা, স্বামীর সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা বজায় রাখার জন্যে আল্লাহ তাআলাই নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। অন্যথায় তার ইহকালীলন দাম্পত্য জীবন ও পারিবারিক জীবন তিক্ত বিষাক্ত হয়ে যাবে, পরকালেও তাকে আল্লাহর আযাব ভোগ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত: বলা হয়েছে, অমান্যকারী স্ত্রীকে মিলন শয্যা থেকে বিচ্ছিন্ন কর। অন্য কথায় তাকে না শয্যা সঙ্গী বানাবে, না তার সাথে যৌন সম্পর্ক বজায় রাখবে।
তৃতীয়ত: বলা হয়েছে- তাকে মারধর করতে। কিন্তু এ মারধর সম্পর্কে একথা স্পষ্ট যে, তা অবশ্যই শিক্ষামূলক হতে হবে মাত্র। ক্রীতদাস ও জন্তু জানোয়ারকে যেমন মারা হয়, সে রকম মার দেয়ার অধিকার স্বামীর নেই।

তারপর বলা হয়েছে- স্ত্রী যদি স্বামীকে মেনে নেয়, স্বামীর সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে রাজী হয়, তাহলে স্বামীর কোনো অধিকার নেই তার উপর কোনরূপ অত্যাচার করার, তাকে এক বিন্দুও কষ্ট জ্বালাতন দেয়ার। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে- উপযুক্ত কারণ ব্যতীত স্ত্রীকে কষ্ট দিলে তোমাদের অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে যদিও তারা অক্ষম, কিন্তু তোমাদের ভুললে চলবে না আল্লাহ হচ্ছেন প্রবল পরাক্রান্ত, শ্রেষ্ঠ ও শক্তিমান, তিনি অবশ্যই প্রত্যেক জালিমের জুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন এবং সেজন্য পরকালে কঠোর শাস্তি দানের ব্যবস্থা রয়েছে।

স্ত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার করা পূর্ণ ঈমান ও চরিত্রের ভূষণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। নবী করীম সা. ইরশাদ করেছেন: ‘যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম, নিষ্কুলুষ, সে সবচেয়ে বেশি পূর্ণ ঈমানদার। আর তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোৎকৃষ্ট এবং যে নিজ পরিবারের সঙ্গে স্নেহশীল আচরণ করে।’ [তিরমিযী ও আহমদ]

স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের প্রেম ভালোবাসার স্থায়িত্ব ও গভীরতার জন্য স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীকে মাঝে মধ্যে নানা ধরনের চিত্তাকর্ষক দ্রব্যাদি দেয়া। স্ত্রীরও যথাসাধ্য অনুরূপ করা উচিত। রাসূলে করীম সা. এ জন্য উপদেশ দিয়েছেন- ‘তোমরা পরস্পর উপহার উপঢৌকন আদান প্রদান করো। দেখবে এর ফলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হবে এবং মায়া মমতা বৃদ্ধি পাবে।’





স্ত্রীর বিপদে আপদে, রোগে শোকে তার প্রতি অকৃত্রিম সহানুভূতি প্রদর্শন করা স্বামীর কর্তব্য। বস্তুতঃ স্ত্রীর সবচেয়ে বেশি দুঃখ পায় তখন যখন তার বিপদে কষ্টে তার স্বামীকে সহানুভূতি পূর্ণ ও দুঃখ ভারাক্রান্ত দেখতে পায় না। এজন্য নবী করীম সা. স্ত্রীর প্রতি দয়াবান ও সহানুভূতিশীল হবার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এর সাধারণ নিয়ম হিসেবে বলেছেন- ‘যে লোক নিজে অপরের জন্য দয়াবান হয় না, সে কখনো অপরের দয়া সহানুভূতি লাভ করতে পারে না। স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের ক্ষেত্রে এটা খুবই বাস্তব কথা। এজন্যে স্বামীর একান্তই কর্তব্য স্ত্রীর মনের আবেগ উচ্ছ্বাসের প্রতি লক্ষ্য রাখা।’

স্ত্রীর মোহর আদায় করাইসলামে নারী পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার সময় স্ত্রীকে মোহর প্রদানের নির্দেশ রয়েছে। এ মোহরের টাকা স্ত্রীর একক অধিকার। স্ত্রীকে মোহরের টাকা পরিশোধ না করা বা গড়িমসি করা কিংবা কৌশলে স্ত্রীর নিকট হতে মাফ করিয়ে নেয়া মারাত্মক গুনাহের কাজ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন- ‘স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরের টাকা প্রসন্ন করে দিয়ে দাও।’ [সূরাহ আন নিসা: ৪]

স্ত্রীর জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করাবিয়ের পর স্ত্রীর বাসস্থানের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। আল্লাহ পাক বলেছেন-‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না। যদি তারা গর্ভবতী হয়, তবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ স¤পর্কে পর¯পর সংযতভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পর¯পর জেদ কর, তবে অন্য নারী স্তন্যদান করবে।’ [সূরা ত্বালাক্ব: ৬]

বিয়ের পর স্ত্রীর অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। নবী করীম সা. বলেছেন: ‘তোমরা যখন খাবে, তাদেরও খাওয়াবে; আর তোমরা যেমন পোষাক পরবে, তাদেরকেও পরাবে।’ [আবু দাউদ]

এটা ইসলামের মূলনীতি যে, স্ত্রীর আর্থিক অবস্থা যেমনই হোক, তার পূর্ণ ভরণ পোষণের দায়িত্ব তার স্বামীর। কুরআন ও হাদীসে এই মূলনীতিই ঘোষিত হয়েছে। স্ত্রী ও সন্তানের পূর্ণ ভরণ-পোষণ স্বামীর জন্য কোনো দয়া দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়, বরং দুটো তার দায়িত্ব। ইসলামী আইন মতে, সংসারে স্বামী স্ত্রী সকল বিষয়ে পরস্পরকে সহায়তা করবে, কিন্তু আর্থিক দায়িত্বটা পুরুষের একারই।

স্ত্রীর নিজস্ব সম্পদে হস্তক্ষেপ না করা স্বামীর অন্যতম র্কতব্য। ইসলামে ন্যায়সঙ্গত ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত। নারীদেরও আয় উপার্জন ও সম্পদের মালিক হওয়ার অধিকার আছে। যেমন অধিকার আছে পুরুষদেরও। ইসলাম নারীকে যেমন ব্যক্তি স্বাধীনতা দিয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও দিয়েছে। আল্লাহ পাক বলেছেন- ‘পুরুষগণ যা উপার্জন করে তা তাদের প্রাপ্য, আর নারীগণ যা উপার্জন করে, তা তাদের প্রাপ্য।’ [সূরা আন নিসা: ৩২]

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আমানতস্বরূপ
বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে নিবিড় সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। একের কাছে অন্যের কিছুই গোপন থাকে না। নবী সা. বলেছেন- ‘স্বামী স্ত্রীর গোপন ব্যাপার কেউ অন্যের নিকট প্রকাশ করবে না।’

যদি কোনো ঈমানদার ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকে, তবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- ‘স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমতা-ভিত্তিক আচরণ করা। ইনসাফ কায়েম করার ব্যাপারে নেতিবাচক আশংকা থাকলে, সেক্ষেত্রে আল কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন- তোমাদের যদি স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ কায়েম না করার ব্যাপারে আশংকা হয়, তবে কেবল মাত্র একজন স্ত্রীই রাখবে।’ [সূরা আন নিসা: ৩]

স্ত্রীদের সাথে ইনসাফ বা সমব্যবহার বহু বিবাহের অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। ইনসাফ বলতে বুঝায় সকল স্ত্রীকে এক মানের খাবার, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, বিনোদন, সময় এবং সহানুভূতি দিতে হবে।

স্বামীর উচিত স্ত্রীর সাথে সবসময় গম্ভীর হয়ে না থেকে মাঝে মধ্যে হাসি কৌতুক ও আনন্দদায়ক খেল তামাশা করা। আর স্ত্রীর পিতা মাতা, ভাই বোন ও আত্মীয় স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। এক নাগাড়ে চারমাসের অধিক প্রবাসে থাকবে না। অন্যথায় এতে স্ত্রীর হক নষ্ট হয়।

স্বামীর ওপর স্ত্রীর বিশেষ অধিকার হচ্ছে এই যে, স্বামী সর্বপ্রকার যৌন উচ্ছৃংখলা থেকে বিরত থাকবে এবং যৌন ব্যাপারে কেবল স্ত্রীর ওপরই সন্তুষ্ট থাকবে। বিসমিল্লাহ পড়ে উত্তম পন্থায় সহবাস করবে। হায়েস নিফাস অবস্থায় কখনও সহবাস করবে না। সবশেষে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাসূলে করীম সা. এর সেই ফরমান, যা তিনি বিদায় হজ্জের বিশাল সমাবেশে মুসলিম জনতাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছিলেন- ‘হে মুসলিম জনতা! স্ত্রীদের অধিকার সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে অবশ্যই ভয় করতে থাকবে। মনে রেখো তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসেবে পয়েছো এবং আল্লাহর হুকুমে তাদের দেহ ভোগ করাকে নিজেদের জন্য হালাল করে নিয়েছো। আর তাদের ওপর তোমাদের জন্য এ অধিকার নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, সে কোন অবাঞ্ছিত ব্যক্তির দ্বারা তোমাদের দু’জনের মিলন শয্যাকে মলিন ও কলঙ্কিত করবে না।’ [আবু দাউদ]

স্ত্রীর কতর্ব্য
পারিবারিক জীবনের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করতে, একটি সুন্দর পরিপাটি সংসার উপহার দিতে, একটি ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত পরিবার গড়তে, একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে, পারিবারিক, সামজিক ও রাষ্ট্রীয় সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি রক্ষার্থে, স্বীয় সম্ভ্রম, মান-ইজ্জত, মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখতে আল কুরআনের বিধি বিধান ও রাসূলে করীম সা. এর সুন্নাত অনুযায়ী জীবন যাপন করে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি হাসিলের জন্য স্বামীকে যেমন কতকগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়, তেমনি স্ত্রীকেও কতগুলো কর্তব্য পালন করতে হয়।

হাসিমুখে অভ্যর্থণা
স্বামী যখনই বাহির থেকে ঘরে ফিরে আসেন, তখন স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে হাসিমুখে ও হাস্যবদনে তাকে অভ্যর্থনা করা, স্বাগতম জানানো। স্বামী যত ক্লান্ত শ্রান্ত হয়েই ঘরে ফিরে আসুক না কেন এবং তার হৃদয় যত বড় দুঃখ, কষ্ট ও ব্যর্থতায়ই ভারাক্রান্ত হোক না কেন, স্ত্রীর মুখে অকৃত্রিম ভালোবাসাপূর্ণ হাসি দেখতে পেলে তিনি তাঁর সব কিছুই নিমিষেই ভুলে যেতে পারেন।

কাজেই যেসব স্ত্রী স্বামীর সামনে মুখ গোমড়া করে থাকে, উদার হৃদয়ে স্বামীর সাথে প্রাণ খোলে কথা বলে না, তারা নিজেরাই নিজেদের ঘর ও পরিবারকে নিজেদেরই একমাত্র আশ্রয় দাম্পত্য জীবনকে ইচ্ছে করেই জাহান্নামে পরিণত করে।

রাসূলে করীম সা. বলেন: ‘মুসলিমের জন্য তাকওয়ার পর সবচেয়ে উত্তম জিনিস হচ্ছে- নেককার চরিত্রবতী স্ত্রী। এমন স্ত্রী যে স্বামীর আদেশ মেনে চলে, স্বামী তার প্রতি তাকালে সন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং স্বামী কোনো বিষয়ে কসম দিলে, সে তা পূরণ করে। আর স্বামীর অনুপস্থিতে তারা নিজের ও স্বামীর ধন সম্পত্তির ব্যাপারে স্বামীর কল্যাণকামী হয়।’ [ইবনে মাযাহ]

nm001-muslim-wedding-kirstenbosch-cape-town-alan-browne

এখানে বুঝা যায় যে, আল্লাহর ভয় ও তাকওয়ার পর সকল মুসলিম পুরুষের জন্যই সর্বোত্তম সৌভাগ্যের সম্পদ হচ্ছে সতী-সাধ্বী, সুদর্শনা ও অনুগতা স্ত্রী। প্রিয়তম স্বামীর সে একান্ত প্রিয়তমা। স্বামীর প্রতিটি কথায় সে উৎসর্গকৃতা, সতীত্ব ও পবিত্রতা রক্ষার ব্যাপারে সে অত্যন্ত সজাগ। আর এরকম স্ত্রী একজন স্বামীর পক্ষে গৌরব ও মাহাত্ম্যের ব্যাপার, তেমনি এ ধরনের স্ত্রী অত্যন্ত ভাগ্যবতীও।

প্রেম-ভালোবাসা
কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী স্বামীর যেমন স্ত্রীর প্রতি কোমল হতে হবে, তেমনি স্ত্রীরও স্বামীর প্রতি অনুগত হতে হবে, তাকে সেভাবে ভালোবাসতে হবে, তার কল্যাণ ও সুখের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য সুখ ও প্রশান্তি অর্জন, সেহেতু স্বামী স্ত্রীর উভয়ে নিজেদেরকে পরস্পরের কাছে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে তুলবে। বিশেষভাবে স্ত্রী নিজেকে (ইসলামের সীমার মধ্যে) সুন্দরভাবে স্বামীর কাছে পেশ করবে। ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন- ‘স্বামীকেও স্ত্রীর কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে হবে।’

ইসলামের দৃষ্টিতে সৌন্দর্য চর্চার মূল উদ্দেশ্যই স্বামী বা স্ত্রীকে পরস্পরের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য করা। এজন্য ইসলাম মেয়েদেরকে ঘরে সাজগোজ করার অনুমতি দিয়েছে। অথচ বর্তমানে পাশ্চাত্যের অনুসরণে মেয়েরা ঘরে অতি সাধারণভাবে থাকে, আর বাইরে যাবার সময় ঠোঁট কপাল রাঙ্গিয়ে বেপর্দাভাবে নিজেদেরকে আকর্ষণীয় করে তুলছে। এটা ইসলামের হুকুমের উল্টো চলন বৈকি।

পর্দা গ্রহণ করা এবং শালীনতা রক্ষা করে চলা সম্ভ্রান্ত বংশের মহিলাদের চিহ্ন। মুসলিম মহিলাদের জন্য তা ফরয। বিশেষ করে বাইরে যেতে হলে আবরু ইজ্জত রক্ষা করে চলা কর্তব্য। নারী জাতির প্রভূত কল্যাণ ও মঙ্গলের নিমিত্তে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: ‘হে নবী! আপনি আপনার পতœীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। [সূরা আহযাব: ৫৯]

ইসলাম স্বামী স্ত্রীর জীবনকে এক উত্তম প্রেম ভালোবাসার মাধুর্যপূর্ণ ভাবধারায় সজ্জীত দেখতে চায়। কেননা, প্রেম-ভালোবাসা, পারস্পরিক আদর যতœ ও সোহাগ না থাকলে দাম্পত্য জীবন আর বিয়ের বন্ধন যে দুর্বিষহ হয়ে উঠে এবং সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে যায় একথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না।

বদান্যতা
ইসলামে পরিবার হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে উভয়েরই অবদান মূল্যবান। তবে পরিবারের শান্তি শৃংখলা রক্ষার খাতিরে একজনের নেতৃত্ব মেনে চলা প্রয়োজন। নারীর স্বাভাবিক দুর্বলতা, নানাবিধ দৈহিক অসুবিধা এবং পুরুষের তুলনায় তার দৈহিক ও মানসিক অসম্পূর্ণতার কারণে ইসলামে স্ত্রী পুরুষের পারস্পরিক জীবনে পুরুষের প্রাধান্য ও নেতৃত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। কেননা, পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে যে কোনো প্রতিকূলতা, অসুবিধা ও বিপদ মুসীবত আসতে পারে, কিংবা সাধারণতঃ এসে থাকে, তার মুকাবিলা করা এবং সমস্যা ও জটিলতা সমাধান করার উপযুক্ত ক্ষমতা যোগ্যতা পুুরুষেরই রয়েছে। সাধারণত পুরুষের তুলনায় স্ত্রীলোকদের এসব ক্ষমতা অনেকাংশে কম ও অপ্রতুল। একথা বাস্তব দৃষ্টিতে ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে অনস্বীকার্য। ঠিক এ কারণেই পরিবারে পুরুষের নেতৃত্ব চলবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন: ‘পুরুষরা নারীদের অভিভাবক ও ব্যবস্থাপক। কারণ, আল্লাহ তাদের একের ওপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।’ [সূরা নিসা: ৩৪]

সাধারণত জ্ঞান, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, কর্মশক্তি, দুর্ধষতা, সাহসিকতা, বীরত্ব, ত্যাগ-তিতীক্ষা ও সহ্যশক্তি মেয়েদের অপেক্ষা পুরুষদের বেশি। আর পারিবারিক জীবনে অর্থ উপার্জন ও শ্রম পুরুষই করে থাকে, স্ত্রীকে মোহরানা পুরুষই দেয়; স্ত্রী ও সন্তান সন্তুতির খোরাক পোশাক ও যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস পুরুষই সংগ্রহ করে থাকে। এজন্যে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক দাম্পত্য জীবনের প্রধান কর্তা ও পরিচালক পুরুষকেই করা হয়েছে।

আনুগত্য
কুরআন ও হাদীসের আলোকে স্বামীর যেমন কর্তব্য স্ত্রীর সন্তুষ্টি লাভের জন্য চেষ্টা করা, তেমনি স্ত্রীরও তাই কর্তব্য। স্ত্রীর যাবতীয় কাজ কর্মের লক্ষ্য থাকবে প্রথমতঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি লাভ। দ্বিতীয়তঃ স্বামীর সন্তুষ্টি লাভ।

স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য। স্বামী সন্তুষ্ট থাকলে আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট থাকেন। আর আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট থাকলে, জান্নাত লাভ করা যায়। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা. ইরশাদ করেন- ‘যে স্ত্রীলোক এ অবস্থায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, সে জান্নাত লাভ করবে।’ [তিরমিযী]

তিনি আরও ইরশাদ করেছেন: ‘কোন স্ত্রী যদি পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায নিয়মিত আদায় করে, রামযানের একমাস ফরয রোযা রাখে, তার যৌন অঙ্গের পবিত্রতা পূর্ণমাত্রায় বজায় রাখে, পর্দা করে, তবে সে অবশ্যই বেহেশতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করতে পারবে।’ [মিশকাত]

010ww.thumbnail

এ হাদীসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, স্ত্রীর ওপর যেমন আল্লাহর হক রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বামীর অধিকার। আল্লাহর হক আদায় না করে যেমন পরকালীন জীবন সুখময় হতে পারে না, তেমনি স্বামীর অধিকার আদায় না করে স্ত্রীর জৈবিক জীবন সাফল্য মন্ডিত হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে নবী করীম সা. ইরশাদ করেছেন- ‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে, আর সে তা অস্বীকার করে, এ অবস্থায় তার প্রতি তার স্বামী খুশী না হওয়া পর্যন্ত যিনি আসমানে আছেন, তিনি তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন’ অন্যত্র বলেছেন ‘এ অবস্থায় ফেরেশতাগণ সেই স্ত্রীকে সকাল হওয়া পর্যন্ত অভিশাপ করতে থাকে।’ [বুখারি ও মুসলিম]

বস্তুত: স্বামীর হক আদায় করার জন্যে দরকার তার আনুগত্য করা। কিন্তু স্বামীর এ আনুগত্যও অবাধ নয়, অসীম নয়, নয় নিঃশর্ত। এটা আল্লাহর আনুগত্যের অধীন। এজন্যে স্বামীর আনুগত্যের ব্যাপারে শরীয়তে সীমা উল্লেখ করা হয়েছে। নবী করীম সা. বলেছেন ‘সঙ্গত ও শরীআত সম্মত কাজে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্র্তব্য। অন্যত্র রাসূল সা. বলেছেন- ‘কোন স্ত্রী ঈমানের স্বাদ ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারে না, যতক্ষণ না সে তার স্বামীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায় করবে।’
এখানে সঙ্গত ও শরীআত সম্মত বা ন্যায়সঙ্গত শর্তের উল্লেখ আছে। কাজেই স্বামীর শরীআত বিরোধী কাজের কোনো আদেশ পালন করা স্ত্রীর জন্য জায়িজ নয়। তা অমান্য করাই ঈমানদার স্ত্রীর কর্তব্য।

নবী সা. এর যুগে এক আনসারী মহিলা তার কন্যাকে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর কন্যার মাথার চুল পড়ে যেতে শুরু করে। তখন মহিলাটির জামাতা তাকে বললেন তার স্ত্রীর মাথায় পরচুলা লাগিয়ে দিতে। তখন মহিলাটি রাসূলে করীম সা. এর দরবারে হাজির হয়ে বলল, আমার মেয়ের স্বামী আমাকে আদেশ করে যে, আমি যেন মেয়ের মাথায় পরচুলা জুড়ে দেই।’ রাসূলে করীম সা. তার এ কথা শুনে বললে- ‘না, তা করবে না। কেননা, যেসব মেয়েরা পরচুলা লাগায়, তাদের ওপর লা’নত করা হয়েছে।’ অন্যকথায়, পরচুলা লাগানো যেহেতু হারাম, অতএব, এ হারাম কাজের জন্য স্বামীর নির্দেশ মানা যেতে পারে না। [বুখারি]

দায়িত্ব সচেতনতা
মুসলিম পরিবারে স্বামী স্ত্রী একে অন্যের সুখ দুঃখের অকৃত্রিম সাথী। দুঃখ কষ্ট ভাগাভাগি করে নিলে বহন করা সহজ হয়। কোনো রকম দৈব দুর্বিপাকে স্বামীর দৈহিক বা আর্থিক সামর্থের হানি ঘটলে, স্ত্রী ধৈর্য্য ধারণ করবে। পূর্বের অবদান ও ভালোবাসার কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞ থাকবে। অক্ষম স্বামীকে মোহরানার ঋণের ভার থেকে মুক্তি দেয়া স্ত্রীর নৈতিক ও মানবিক কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘স্ত্রীগণ সানন্দে স্বেচ্ছায় মোহরের কিছু অংশ দান করে দিলে, তোমরা তা সন্তুষ্ট চিত্তে খেতে পার।’ [সুরাহ নিসা: ৪]

পরিবারে স্বামীর সেবা করা, সন্তুানদের পরিচর্যা করা ও সংসারের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পাদন করার দায়িত্ব থাকে স্ত্রীর ওপর। স্ত্রীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব সম্বন্ধে রাসূল সা. বলেছেন- ‘স্ত্রী স্বামীর পরিজনবর্গ ও সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী। তাকে এই দায়িত্ব সম্বন্ধে কিয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে।’ [বুখারি ও মুসলিম]
প্রতিটি স্ত্রীর পবিত্র দায়িত্ব নিজের সতীত্ব রক্ষা করা। সতী সাধ্বী ও উত্তম চরিত্রের রমণীদের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ পাক বলেছেনÑ‘আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ্ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব, তাদেরকে তাদের মালিকের অনুমতি ক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যভিচারিণী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না। তারপর যখন তারা বিবাহ বন্ধনে এসে যায়, তখন যদি কোনো অশ্লীল কাজ করে, তবে তাদেরকে ¯¦াধীন নারীদের অর্ধেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্যে, তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে। আর যদি সবর কর, তবে তা তোমাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। [সূরা নিসা:২৫]

অনেক সময় নারীদের মিষ্টি কথায় লম্পট, চরিত্রহীন পুরুষেরা প্রলুব্ধ হয়, আকৃষ্ট হয়। এরা স্বামীর অনুপস্থিতিতে কুমতলব হাসিলের সুযোগ খুঁজতে থাকে। তাই এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাবধান করে দিয়ে বলেছেন- ‘হে নবী পতœীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছ্ েতোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।’ [সুরা আহযাব: ৩২]

শালীনতা রক্ষা করে চলা প্রতিটি স্ত্রীর কর্তব্য। বেপর্দাভাবে, অশালীন পোশাক পরে বাইরে যাওয়া উচিত নয়। এর জন্য আল্লাহ পাক বলেছেন- ‘তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ! আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।’ [সূরা আহযাব : ৩৩]

গোপনীয়তা রক্ষা
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। স্বামী স্ত্রী একজন আরেকজনের ইজ্জত রক্ষক ও দুর্গ। তাই স্ত্রীর গোপন বিষয় যেমন স্বামীর জন্য অন্য কারো কাছে প্রকাশ করা কোনো মতেই বৈধ নয়, ঠিক তেমনি স্ত্রীরও স্বামীর কোনো গোপন কথা বা গোপন বিষয় অন্যের কাছে প্রকাশ করবে না। একে অপরের গোপনীয়তা রক্ষা করা পবিত্র আমানত। এ আমানতের খিয়ানত করা সাংঘাতিক গোনাহর ব্যাপার।

পারিবারিক জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো ব্যাপারে মতের মিল নাও হতে পারে, কখনও রাগ অভিমানও হতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই স্বামী যেমন স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দিতে পারবে না, স্ত্রীও তেমনি স্বামীর ঘর থেকে বের হয়ে যেতে পারবে না। কারণ, ঘর থেকে বের হয়ে গেলে, স্বামী স্ত্রীর নিজস্ব ব্যাপারে তৃতীয় পক্ষ জড়িত হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে নবী করীম সা. বলেছেন- ‘যে স্ত্রী রাগ করে স্বামীর ঘর থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও রাত যাপন করে, ফেরেশতাগণ সে স্ত্রীর ওপর অভিসম্পাত করতে থাকে যতক্ষণ না সে স্বামী গৃহ ফিরে আসে।’

Muslim

হক আদায়
স্বামীর মর্যাদার ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তিনি যদি কখনও কোনো প্রয়োজনে ডাক দেন, স্ত্রী ফরয নামায ব্যতীত যে অবস্থায় থাকুক না কেন, স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া বা স্বামীর শরীআত সম্মত যে কোনো নির্দেশ মেনে চলা স্ত্রীর কর্তব্য। রাসূল সা. বলেছেন- ‘স্বামী যখন তার কোনো প্রয়োজনে নিজ স্ত্রীকে আহ্বান করে, তখন তার ডাকে সাড়া দেয়া স্ত্রীর কর্তব্য, যদিও সে চুলায় রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে।’ [তিরমিযী]

শুধুমাত্র স্বামীর সাথে সদ্ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয়, স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করাও স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর কাছ থেকে নগণ্য উপহার পেলেও স্ত্রীর উচিত, তা খুশি মনে গ্রহণ করা। স্বামী কোনো ঋণ বা অসম্পূর্ণ কাজ রেখে মৃত্যু বরণ করলে, স্ত্রী সামর্থ্য অনুসারে ঋণ শোধ এবং অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করবে। স্বামীর মৃত্যুর পর ইয়াতীম সন্তানদের লালন পালন ও মানুষ করা স্ত্রীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা. বলেছেন- ‘যে বিধবা সুন্দরী পুনরায় বিবাহ করেনি এবং ইয়াতীমদের প্রতিপালন করতে গিয়ে কষ্ট ও পরিশ্রমে তার চেহারা মলিন হয়ে গেছে, এমনকি ইয়াতীম সন্তানদের সংসার প্রতিষ্ঠা লাভ অথবা মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত পরিশ্রম করতে থাকে, রাসূল সা. তাঁর মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলের ইশারা প্রদর্শন করে বলেছেন. আমি এবং এ বিধবা রমণী কিয়ামতের দিন এ রকম পাশপাশি অবস্থান করব।’ [আবু দাউদ]

দীনী সহযোগিতা
সত্যিকার অর্থে প্রকৃত বুদ্ধিমতী, জ্ঞানবতী তারাই যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের সা. সন্তুষ্টির জন্য কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ অনুযায়ী নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করে। আল্লাহ তাআলার দাসত্ব ও আনুগত্য করা এবং তারই সন্তুষ্টি ও মর্জি অনুযায়ী চলার জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই স্বামী স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর দীন পালনের জন্য ইবাদত বন্দেগীর পথে একে অপরকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করা। যে স্বামী স্ত্রী আল্লাহ পাকের ইবাদতে পরস্পরকে সাহায্য সহযোগিতা করে, আল্লাহ পাক তাদের ওপর তার রহমত ও করুণা বর্ষণ করেন। ইসলামের ফরয ওয়াজিব ইবাদতে একজন আরেক জনকে প্রস্তুত ও উদ্বুদ্ধ করবে। এ হচ্ছে প্রত্যেকেরই দীনী কর্তব্য। কিন্তু তা ছাড়াও সুন্নাত এবং নফল ইবাদতের জন্যেও তা করা ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক কল্যাণকামিতা। রাসূলে করীম সা. এ প্রসঙ্গে বলেছেন- ‘আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির প্রতি তাঁর অনুগ্রহ ও করুণা বর্ষণ করেন, যে রাত জেগে নফল নামায পড়ে আর নিজ সহধর্মিনীকে জাগায় এবং নামায পড়ায়। আর সে যদি উঠতে না চায়, তবে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। তেমনিভাবে ঐ নারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা রহমত ও করুণা বর্ষণ করেন, যে রাত জেগে নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকেও সেজন্যে জাগায় আর স্বামী উঠতে না চাইলে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়।’ [আবু দাউদ]

বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে যে দাম্পত্য জীবনের সূচনা হয়, তার সুখ ও সফলতা নির্ভর করে কেবলমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক ও শরয়ী বিধি ব্যবস্থা অনুসরণ ও অনুকরণের ওপর। প্রত্যেক স্বামী স্ত্রীর শরয়ী এ অনুশাসন মেনে চলা পার্থিব সুখময় জীবনের জন্য যেমন ফলদায়ক, তেমনি তা পরকালীন অনন্ত জীবনের শান্তির সোপান।

[ লেখিকা : প্রাবন্ধিকা, গবেষক ]

সূত্রঃ মাসিক আল জান্নাত



মন্তব্য চালু নেই