ইসলামের আলোকে বর্তমান সময়ে আয়োজিত পহেলা বৈশাখ বর্জণীয়

মোটা মোটা কিছু দাগে বর্তমান সময়ে আয়োজিত ১লা বৈশাখকেন্দ্রিক এই সব উৎসব-আয়োজনগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ-বর্জণীয়-হারাম এবং এতে অংশ গ্রহণ করাকেও অনৈসলামিক কাজে অংশ গ্রহণ করার সমান বলেই বিবেচনা করা হয়। বর্তমান সময়ে আয়োজিত ১লা বৈশাখকেন্দ্রিক এই সব উৎসব-আয়োজনগুলো। ইসলাম যে সব কারণে বর্তমান সময়ে আয়োজিত ১লা বৈশাখকেন্দ্রিক উৎসব-আয়োজনগুলোকে বর্জণীয় মনে করে তা উল্লেখ করা হলো-

এক. বর্তমানকালে মঙ্গল শোভা যাত্রা বা এই রাকম যে সব আয়োজন নববর্ষ উপলক্ষে করা হয়, অধিকাংশই ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় হিসেবে গণ্য।আর পবিত্র কোরানে স্পষ্টভাবে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। সুতরাং কেবল নববর্ষকেন্দ্রিক উৎসব-আয়োজনের ক্ষেত্রে নয় একজন মুসলমানের উচিত জীবনের সব ক্ষেত্রে অপচয় থেকে বিরত থাকা। অপচয়ের মতো অপব্যয়কে নিষিদ্ধ করে কোরান মজিদে বর্ণিত হয়েছে- ‘আর কিছুতেই অপব্যয় করবে না। যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ”। (১৭ : ২৬-২৭)

দুই. নতুন দিন বা নতুন বছরকে স্বাগত জানানো। নতুন দিন বা নতুন বছরকে স্বাগত জানানো অর্থ হচ্ছে সূর্যকে স্বাগত জানানো। এই কথার প্রমাণস্বরুপ বাংলা উইকিপিডিয়ার একটি বর্ণনা তুলে ধরা হলো- ‘বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট-এর গানের মাধ্যমে নতুন বছরের সূর্যকে আহবান। পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মিলত কন্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহবান জানান। সূত্র :[bn.wikipedia.org/wiki/পহেলা_বৈশাখ]

ইসলামে সূর্যকে স্বাগত জানানো, সূর্যর আহবান বিষয়টি প্রকারান্তরে সূর্যপূজারই শামিল এবং এই বিষয়টি ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। কেবল সূর্য কেন কোনো সৃষ্টিকেই কোনো প্রকার কোনো ক্ষমতার উৎস জ্ঞান করাই ইসলাম পরিপন্থী। সুতরাং সূর্যকে স্বাগত জানানোর সন্দিহানগত প্রমাণ্যতা থাকায় ইসলামি দৃষ্টিতে এমন মানসিকতা লালনে নববর্ষ পালন করা নিষিদ্ধ।

তিন. নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশাগত বিচরণ ও নারীকে জড়িয়ে নানা রকম অশ্লীলতা সৃষ্টি হয় এই সব উৎসব-আয়োজনগুলোতে এবং চরমভাবে লঙ্ঘিত হয় ইসলামের পর্দার বিধান। অথচ ইসলাম পর্দার বিধানকে ফরজ ঘোষণা করেছে। এছাড়া ১লা বৈশাখ উপলক্ষে বর্তমানে আয়োজিত নানা আয়োজনে ইসলামে বর্ণিত নানা প্রকার জিনার প্রবলতা লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশাগত বিচরণ, নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন অশ্লীলতার প্রবণতা এবং ইসলামের পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হওয়ায় ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এই সব আয়োজন পুরোপুরিভাবেই নিষিদ্ধ।

সহিহ হাদিসের আলোকে একথা স্বীকৃত যে, রাসুল [সা.] বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষের উপর জান্নাত হারাম অর্থ্যাত এই তিন শ্রেণীর মানুষ কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রথম শ্রেণী হলো- যারা কোনো প্রকার নেশাদার দ্রব্য পান বা গ্রহণ করে। মদখোর, বিড়িখোর, গাজাখোর, ফেনসিডিলখোর, ইয়ারাখোর, বাবাখোর, হিরোইনখোর, আফিমখোর, আলাখোর, জদ্দাখোর- যে কোনো প্রকার নেশাই গ্রহণ করেন না কেন; এই সব খেলে দেহ অপবিত্র হয়ে যাবে আর এই অপবিত্র দেহ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। সুতরাং এইসব নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা আজকেই ছাড়া উচিত, আজ এবং এখনই তাওবা করা উচিতি এই পাপ কাজ থেকে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

দ্বিতীয় শ্রেণী হলো- যে বা যারা পিতা-মাতার অবাদ্ধ, এই শ্রেণীভূক্ত মানুষরাও জান্নাতে যাবে না। জান্নাত তাদের উপর হারাম। মৃত্যু পর্যন্ত পিতা-মাতার দেখভাল করতেই হবে। পিতা-মাতাকে কোনো কারণেই ত্যাগ করা যাবেনা। পিতা-মাতার খেদমত করতেই হবে। রাসুল [সা.] পরিস্কারভাবে বলেছেন, পিতা-মাতার অবাদ্ধ সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পিতা-মাতার অবাদ্ধ সন্তান না হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তৃতীয় শ্রেণী হলো- দাইউস। ঐ দাইউস ব্যক্তি যে তার পরিবারে পর্দা প্রথা চালু রাখেনি। পরিবারের সদ্যসের মাঝে বেপর্দা ছিলো, বেহায়াপনা ছিলো কিন্তু সে তা বাধা প্রদান করেনি। পরিবারের কর্তা হিসেবে বেপর্দা-বেহায়াপনা বন্ধ না করার জন্য এই শাস্তি পাবে সে। আপনি যত বড় ইবাদতকারীই হোন না কেন, মক্কার মাটিতে যতবারই হজ পালনে ঘুরে আসুন না কেন, পাঞ্জাবী আপনার যতই সুন্নতি-শক্তিশালী ও সুন্দর হোক না কেন- পরিবারে যদি পর্দার বিধান চালু রাখার ব্যপারে আপনার অবদান না থাকে রাসুল [সা.] –এর হাদিস অনুযায়ী আপনি জাহান্নামি। জান্নাত এই শ্রেণীর মানুষের জন্য হারাম। [মুসনাদে আহমদ : ২/৬৯]
চার. উন্মুক্তভাবে গান-বাজনার ছড়াছড়ি।

গান-বাদ্যর ব্যাপারে রাসুল [সা.] আমাদেরকে স্পষ্ট নীতিমালা দিয়ে বলেছেন, আমার উম্মতের মাঝে এমন এক দল আসবে যারা জিনাকে হালাল করবে, পুরুষদের জন্য রেশমি কাপড়কে হালাল করবে, মদকে হালাল করবে এবং গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে। অথচ গান-বাজনা এবং বাদ্য-যন্ত্রের ব্যবহার ইসলামে নিষিদ্ধ। গান-গায়িকা এবং এর ব্যবসা ও চর্চাকে হারাম আখ্যায়িত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম।[জামে তিরমিযি, হাদিস : ১২৮২; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৬৮]

বর্তমানে গান ও বাদ্যযন্ত্রের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে যাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এর সকল উপার্জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিস অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমিনে ধ্বসিয়ে দিবেন।[সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২০; সহিহ ইবনে হিব্বান হাদিস : ৬৭৫৮]

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে।[ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২]

পাচ. তথাকথিত বাঙ্গালী চেতনার নামে প্রচারিত পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতির আগাগোড়া হিন্দু ধর্মের আচার অনুষ্ঠানের নকল বা ফটোকপি। গণেশ পূজার ‘মঙ্গল যাত্রা’ থেকে নেওয়া মঙ্গল শোভা যাত্রা, ‘চৈত্র সংক্রান্তি পূজা’ থেকে নেওয়া চৈত্রসংক্রান্তি, হিন্দু-বৌদ্ধদের ‘উল্কি পূজা’ থেকে নেওয়া উল্কি উৎসব, বিভিন্ন হিংস্র-অহিংস্র জীব-জন্তু পূজা থেকে নেওয়া রাক্ষস-খোক্কসের মুখোশ ও পশু-পাখীর প্রতিমা নিয়ে উৎসব, হিন্দুদের ‘আশ্বিনে রান্না কার্তিকে খাওয়া’ প্রথার আদলে চৈত্রের শেষদিনে রান্না করা অন্নে জল ঢেলে পহেলা বৈশাখের সকালে পান্তা খাওয়ার প্রথা এবং পুজোর অপরিহার্য আইটেম ঢোল-তবলা, কুলা ও হিন্দু রমণীর লাল সিঁদুরের অবিকল লাল টিপ-পুজোর লেবাস শাদা শাড়ী ইত্যাদি হল পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রধান উপাদান!! অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন ধর্মের মানুষের (ধর্মীয় আচারের) অনুকরণ বা সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [সুনানে আবু দাঊদ]

ছয়. উল্কি বা ট্যাটু অঙ্কন করা। কেবল পহেলা বৈশাখে নয় বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই উল্কি বা ট্যাটু অঙ্কনের প্রবল প্রচলণ পরিলক্ষিত । উল্কি অঙ্কনের ক্ষেত্রেও বিপরীত লিঙ্গের হাত ব্যবহার করা হয়। যা প্রকাশ্য অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা এবং ইসলামি পর্দান বিধান লঙ্ঘিত হওয়ার কারণ । নাসায়ির বর্ণনা মতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “উল্কি অঙ্কনকারিনী ও যার গায়ে অঙ্কন করা হয়- উভয়ের প্রতি আল্লাহর লানত বর্ষণ হয়।”

তাছাড়া এতে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা হয়, যা কোরানের নির্দেশনা মতে হারাম। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতেও উল্কি অঙ্কন ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর ইচ্ছাকৃত স্বাস্থ্য হানী করাও ইসলামে নিষিদ্ধ।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্ত বিক্রির বিনিময়ে মূল্য, কুকুর বিক্রয়লব্ধ মূল্য এবং ব্যভিচারের বিনিময় গ্রহণ হতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, উল্কি অঙ্কনকারী, যে নারী উল্কি অঙ্কন করায় এবং যে ছবি উঠায় তাদের সকলকে লানত করেছেন।” (বুখারি শরিফ)

মাওলানা মিরাজ রহমান
[email protected]



মন্তব্য চালু নেই