‘ইভিএমের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ভেল্কিবাজি’

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)বা ই-ভোটিং পদ্ধতি প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ভেল্কিবাজিরই বর্ধিত প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচনে ই-ভোটিং পদ্ধতির বিরোধিতা করে রিজভী বলেন, ‘দেশে এখনও অনেক মানুষ নিরক্ষর। টেকনিক্যাল বিষয় উপলব্ধি করা বা বোঝা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। এই পদ্ধতিতে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

সুতরাং সরকারের জন্য ভোট ম্যানিপুলেট করা খুবই সহজ হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দুই শতাব্দীরও বেশি পুরাতন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভোটাররাও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করে থাকে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ই-ভোটিং ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে দূরভিসন্ধিমূলক। জনগণের ভোটকে স্বীয় উদ্দেশ্য সাধনে জালিয়াতি করার প্রচেষ্টা মাত্র। এটি প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ভেল্কিবাজিরই বর্ধিত প্রকাশ।

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও যারা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের নিয়ম চালু করেছিল, কিন্তু এই ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকায় তারা সেটি বন্ধ করে দেয়। কারণ এই পদ্ধতি দূর থেকে হ্যাক করা সম্ভব। ভারত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ ই-ভোটিং পদ্ধতি চালু করলেও এটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ১/১১ এর সময় সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা ইভিএম চালুর প্রস্তাব করেছিলেন। তখন বুয়েটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ এবং প্রায় সব রাজনৈতিক দল সেটির বিরোধীতা করেছিল। সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদও এই পদ্ধতিটি চালুর জোর প্রচেষ্টা চালান। পরীক্ষামূলকভাবে ২০১০ সালে প্রথম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে এই পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হয়। ওই সময়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে আপত্তি তোলায় কাজী রকিবউদ্দীন ইভিএম চালু থেকে সরে আসে।

‘ই-ভোটিং পদ্ধতি চালু করার ঘোষণা তামাশার বায়োস্কোপ’ দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন জনগণের দৃষ্টিকে সিইসি’র দিক থেকে অন্য দিকে সরানোর জন্য ই-ভোটিং ব্যবস্থার আরেকটি ম্যাজিক জনগণের সামনে প্রদর্শন করছেন। এটি প্রধানমন্ত্রীর ভোটারবিহীন নির্বাচন করার আরেকটি ডিজিটাল প্রতারণা কিনা- তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় দেখা দিয়েছে। তার পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ই-ভোটিং চালু করার ঘোষণা জনগণকে আরেকটি তামাশার বায়োস্কোপ দেখানো ছাড়া অন্য কিছু নয়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যেকোন ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দিবে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর উচ্চাভিলাষের কাছে সংগ্রামী জনগণ নিজেদেরকে কখনোই সঁপে দেবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনগণ ক্ষমতাসীন মহলের যেকোন ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল খান, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আসাদুল করিম শাহীন, অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই