ইন্টারনেট ব্যবহারে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ
এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫৩টি দেশের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। বাংলাদেশের প্রতি ১০০ জন নাগরিকের মধ্যে গড়ে ২ দশমিক ৪ জন ফিক্সড ব্রডব্যান্ড বা উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এসক্যাপ) তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক সর্বশেষ চলতি মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশ ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনের তুলনামূলক চিত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশে যেখানে প্রতি ১০০ জনে ২ দশমিক ৪ জন উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, সেখানে ভারতে গড়ে মাত্র ১ দশমিক ৩ জন তা ব্যবহার করেন। ইন্টারনেট ব্যবহারে পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তানের চেয়েও ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানে প্রতি ১০০ জনে ব্যবহারকারী মাত্র একজন এবং নেপালে গড়ে ১ দশমিক একজন ব্যবহারকারী আছেন। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানে আছে মালদ্বীপ।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির প্রতি ১০০ জনে গড়ে ৪০ দশমিক ২ জনই উচ্চ গতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এরপর হংকংয়ের বাসিন্দারা প্রতি ১০০ জনে গড়ে ৩১ দশমিক ৫ জন এ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
তৃতীয় স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডবাসীর এ হার গড়ে ৩০ দশমিক ৫। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আফগানিস্তানের। তালিকার তলানিতে থাকা এ দেশটির প্রতি ২০ হাজার জনে মাত্র একজন উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। উচ্চমূল্যের কারণে ২০টি দেশ এখনো প্রতি ১০০ জনের মধ্যে দুজনও ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন না।
দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, তুর্কিমিনিস্তান ও লাওস।
এ তালিকায় চীনের অবস্থান ১১তম। তা সত্ত্বেও এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্রডব্যান্ড সুবিধার প্রবৃদ্ধি চীনের ওপরই নির্ভরশীল। এ অঞ্চলে যত ব্রডব্যান্ড গ্রাহক আছে, এর অর্ধেকের বেশি চীনেই। যদিও চীনে প্রতি ১০০ জনে ১৮ দশমিক ৬ জন ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করেন। কিন্তু জনসংখ্যা প্রায় ১৫০ কোটি। এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মোবাইল ফোনে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারে উন্নত দেশের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর। আর ইউরোপে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং উত্তর আমেরিকার ১৪ দশমিক ১ শতাংশ গ্রাহক আছেন। ২০০৫ সালে এসক্যাপ সদস্য দেশগুলোতে বিশ্বের ৩৮ শতাংশের বেশি গ্রাহক ছিল। এক দশকের ব্যবধানে অন্য অঞ্চলে কমলেও এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশে এ অংশীদারিত্ব বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭০টির বেশি উন্নয়ন কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, সরকারি কেনাকাটার অনলাইনে ব্যবহার বা ই-প্রকিউরমেন্টে সবচেয়ে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ১ ডলার খরচ করে ৬৬৩ ডলারের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এরপরই রয়েছে ভূমি নিবন্ধনের ডিজিটালাইজেশন। সেখানে ১ ডলার খরচ করে ৬১৯ ডলারের সুবিধা মিলছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ (জুলাই-২০১৬) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩৯ লাখ ১৫ হাজার। আইএসপি ও পিএসটিএন গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৩৭ লাখ ৭০ হাজার এবং ওয়াইম্যাক্স গ্রাহক রয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার।
মন্তব্য চালু নেই