ইনি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, কিন্তু আড়ালে যে কারবার চালাতেন, তা অবিশ্বাস্য

শিশু পাচারের বড়সড় চক্রের খোঁজ পাওয়া গেল জলপাইগুড়িতে। দত্তক দেওয়ার নাম করে শিশু বিক্রির অভিযোগে জলপাইগুড়ির একটি বেসরকারি হোমের বেশ কয়েক জন মাথাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি-র বিশেষ দল। আর এই চক্রের মূল পাণ্ডা যিনি, সেই চন্দনা চক্রবর্তী ময়নাগুড়ির একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।

সিআইডি-র অভিযোগ, বাদুড়িয়ার শিশু পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমেই চন্দনা চক্রবর্তীর নাম জানতে পারে সিআইডি। তার পর থেকেই এই প্রধান শিক্ষিকা এবং তাঁর শিশু পাচার চক্রের উপর নজর রাখছিলেন গোয়েন্দারা। সেই সূত্রেই শনিবার জলপাইগুড়িতে বেঙ্গল পিপলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের হোমে হানা দেয় সিআইডি-র বিশেষ দল। এর পরে ময়নাগুড়ির স্কুল থেকে হোমের চেয়ারপার্সন চন্দনা চক্রবর্তী নামে ওই শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করা হয়। জলপাইগুড়ির তিনটি হোমে তল্লাশি চালান সিআইডি আধিকারিকরা। তল্লাশিতে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়। শুধু তাই নয়, সিআইডি-র বেশ কিছু প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারেননি অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তী। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে শিশু বিক্রির অভিযোগে চন্দনাদেবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডি-র স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের ওসি সৌগত ঘোষ। এই ঘটনায় চন্দনাদেবীর হোমের সঙ্গে যুক্ত পাঁচ কর্মীকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

সিআইডি সুত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামাঞ্চল এবং আদিবাসী বলয় থেকে গরিব পরিবারের অবিবাহিত গর্ভবতী মহিলাদের হোমে নিয়ে আসা হতো। থানায় সামান্য জিডি করে সেই মহিলাকে নিজেদের হোমেই লালন-পালন করা হতো। তার পরে সেই মহিলার সন্তানকে বেআইনি ভাবে বিক্রি করা হতো। অভিযোগ, একই শিশু একাধিক নিঃসন্তান দম্পতিকে দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে চন্দনাদেবীর এই সংস্থা। গর্ভবতী মায়েদের এই ফাঁদে ফেলা হতো বলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা জেরায় শিকার করেছেন বলেও সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।

সিআইডি-র দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথোরিটি, স্টেট অ্যাডপশন রিসোর্স অথোরিটি এবং জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট না মেনেই হোমে থাকা শিশুদের বেআইনি ভাবে বিক্রি করতেন চন্দনা চক্রবর্তী। অথচ হোমে রাখা শিশুদের অনলাইনে কেন্দ্রীয় নির্দিশিকা মেনে সেন্ট্রাল রিসার্চ অ্যাডপশন অথরিটির কাছে নথিভুক্ত করত না। প্রকৃত শিশুর সংখ্যা লুকিয়ে তাদের চড়া দামে বিক্রি করা হত।
কোথায়, কী ভাবে, কাদের মাধ্যমে শিশু পাচার করা হতো, কারা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত, কতগুলি শিশুকে এখনও পর্যন্ত কোথায় বিক্রি করা হয়েছে, তার বিস্তারিত খুঁটিনাটি তথ্য চন্দনাদেবীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। আর্থিক লেনদেন, শিশুদের রেজিস্টার সব কিছুই খতিয়ে দেখে বাজেয়াপ্ত করা হয়। দুপুর ৩টে থেকে এক টানা চন্দনা চক্রবর্তীকে জেরা করে তল্লাশি শুরু হয়।

গত বছরও জলপাইগুড়ির একটি হোম থেকে বেআইনি ভাবে শিশু বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল। এ বারে নাম জড়াল আরও একটি সংস্থার। অভিযুক্ত চন্দনাদেবীকে এ দিনই জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে পেশ করে ট্রানজিট রিম্যান্ডে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানাবে পুলিশ।



মন্তব্য চালু নেই