ইনজুুরি সারাতে বন্ধু সৈয়দ রাসেলকে ৪ লাখ টাকা দিলেন মাশরাফি
ক্রিকেটার-অধিনায়ক মাশরাফির পাশাপাশি মানুষ মাশরাফিও অনেকেরই প্রিয়। অতি সাধারণ জীবন-যাপন, প্রাণখোলা মাশরাফি ক্রিকেটার, কোচ, কর্মকর্তা ছাপিয়ে আম জনতার কাছেও অনেক ভালো মানুষ হিসেবে সমাদৃত। সবার জানা, মাশরাফি মানেই সাহস আর উদ্যম। মাশরাফি মানেই ভয়-ডর না পাওয়া সাহসী এক নাবিক। মাশরাফি মানেই মাঠে সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দেয়া। মাশরাফি মানেই ড্রেসিংরুম চাঙা করা এক ব্যক্তিত্ব।
তাই তো নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ের ৩৩ বছরের যুবা এখনও বাংলাদেশের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে এক নম্বর। জানেন কি, মানুষ মাশরাফি যে এসব ধারণার চেয়ে আরও অনেক বড়!
তার মন আকাশের মতো উদার। কারও দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা, অভাব-অনটনে পাশে দাঁড়াতে যার জুুড়ি মেলাভার। অপরের দুঃখ-যন্ত্রণায় মাশরাফির মন যে কতটা কাঁদে, কারও দুঃসময়ে সাহায্য করতে তার মন কতটা উদার- তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ শুনুন।
এটা মাশরাফির মুখ থেকে হয়ত কোনোদিনই বের হবে না। কারণ সত্যিকার অর্থে মানবসেবা ও পরোপকারি যারা-তারা কাজ করেন নীরবে-নিভৃতে। ঢোল না পিটিয়ে। তেমনি এক গল্প বলি শুনুন। যে গল্পের নায়ক মাশরাফি। বন্ধু সৈয়দ রাসেলের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
কিন্তু কাউকে ঘুণাক্ষরেও জানতে দেননি সে কথা। আজ পড়ন্ত বিকেলে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ আর শেখ জামালের খেলা শেষে এ প্রতিবেদকের কাছে যেচেই এ কথা জানালেন মাশরাফির সঙ্গে জাতীয় লিগে খুলনার হয়ে এবং জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বেশ কয়েক বছর খেলা বাঁ-হাতি পেসার সৈয়দ রাসেল।
বলার অপেক্ষা রাখে না, একসময় জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য ছিলেন সৈয়দ রাসেল। গতির ওপর নির্ভর না করে নিখুঁত মাপা লাইন ও লেন্থে বল ফেলা এবং উইকেটের দু’দিকে সুইং করানোতে ওস্তাদ সৈয়দ রাসেল মাঝে কয়েক বছর বাংলাদেশের অন্যতম বোলিং নির্ভরতাও ছিলেন।
বন্ধু মাশরাফির মতো তাকেও ইনজুরির ভয়াল থাবা গ্রাস করেছিল। বাহুর ইনজুরিতে বেশ কিছুদিন ধরেই মাঠের বাইরে রাসেল। নিজেকে খানিক দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। ৬ টেস্টে ১২ আর ৫২ ওয়ানডেতে ৬১ উইকেট শিকারি সৈয়দ রাসেল অনেক ম্যাচেই রানের গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে বাংলাদেশের জয়ের বড় ভূমিকা পালন করেছেন।
কিন্তু ইনজুরিতে পড়ে গিয়ে সে অর্থে বোর্ড ও পৃষ্ঠপোষক কারও সাহায্যই মেলেনি। অনেকের চিকিৎসার পেছনে অকাতরে অর্থ বরাদ্দ হলেও ক্যারিয়ারের স্বর্ণসময়কে পেছনে ফেলে আসা সৈয়দ রাসেলের পছনে সে অর্থে আর অর্থ খরচ করেনি ক্রিকেট বোর্ড।
এদিকে ক্রিকেট শুধু ধ্যান-জ্ঞানই নয়। রুটি-রুজিও। কী করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না রাসেল। সেই ২০১০ সালের জুলাই থেকে জাতীয় দলের বাইরে। এর মধ্যে ইনজুরি বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় ক্লাব ক্রিকেটে অংশগ্রহণও প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
মাঝে কোমরের কঠিন ইনজুরি সারতে না সারতেই পড়লেন বাম কাঁধের ইনজুরিতে। যে বাম হাতে বোলিং করেন, সেই কাঁধের ইনজুরি। ধরে নিয়েছিলেন অস্ত্রোপচার করা লাগবে; কিন্তু চিকিৎসার জন্য দরকার মোটা টাকা। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অপারেশন করালে অন্তত আট লাখ টাকা দরকার। আর ভারতের মুম্বাইতে করলেও চার লাখের কমে হবে না।
কোথায় পাবেন এ অর্থ? বিপাকে পড়ে খেলার সাথী ও বন্ধু মাশরাফির কাছে ধার চাইলেন সৈয়দ রাসেল। ‘দোস্ত, আমি তো মাঠের বাইরে আছি বেশ কিছু দিন। হাতে টাকা পয়সাও নেই তেমন। আমাকে লাখ চারেক টাকা ধার দিবি? চিকিৎসা করাবো।’
মাশরাফির জবাব, ‘হ্যাঁ দেব। তবে ধার নয়। বন্ধুকে ভালোবেসে। এ অর্থ শোধ করতে হবে না।’ এভাবে বন্ধুকে ভালোবেসে চার লাখ টাকা সৈয়দ রাসেলকে দিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি।
এদিকে মুম্বাইতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তত টাকা খরচ হয়নি রাসেলের। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়ে দিয়েছেন, অস্ত্রোপ্রচার লাগবে না। এমনি ওষুধে সেরে যাবে। দেশে ফিরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সৈয়দ রাসেল; কিন্তু ইনজুুরি পেছনে ছাড়ছে না। প্রথমে ক্যাম্প আর এখন গ্রোয়েন ইনজুরি ভোগাচ্ছে। তবে বোলিংয়ে সমস্যা হচ্ছে না।
রাসেলের আশা, ‘গ্রোয়েন ইনজুরি কেটে গেলে ঠিক মাঠে নামতে পারবেন।’ এদিকে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ থেকে পাওয়া পারিশ্রমিক দিয়ে বন্ধুর ধার শোধ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন রাসেল। মাশরাফি কিছুতেই আর সে অর্থ ফিরিয়ে নিতে চান না।
মন্তব্য চালু নেই