ইতি, ইতিহাস সৃষ্টিকারী আমেরিকান আইডল

অবশেষে পনেরতেই থামছে আমেরিকান আইডল। আগামী সিজনেই যতি পড়তে যাচ্ছে টেলিভিশন ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় এই রিয়েলিটি শো-র মার্কিন অভিযাত্রা।

গত ১১ মে ফক্স ব্রডকাস্টিং কোম্পানি একটি ঘোষণায় রিয়েলিটি শোয়ের এই ভবিতব্য জানায়। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হবে শোটির শেষ আসর। শেষ আসরটিতে উপস্থাপনায় ফিরছেন রায়ান সিক্রেস্ট। বিচারক প্যানেলে অবশ্য কোনো পরিবর্তন আসছে না। থাকছেন আগের তিনজনই—জেনিফার লোপেজ, হ্যারি কনিক জুনিয়র এবং কিথ আরবান। তবে খরচ কমাতে সম্ভবত বিচারকরা এই আসরে বেতন একটু কমই পাবেন।

আমেরিকান আইডলের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে। আইডিয়াটা বের হয়েছিল সাইমন ফুলারের মাথা থেকে। অবশ্য ঠিক বের হয়েছিল বলা যাবে না, কারণ এটা তার মৌলিক ভাবনা নয়। এমনকি এই ভাবনায় তার প্রথম প্রোগ্রামও এটা না।

আমেরিকান আইডলের মতো রিয়েলিটি শোয়ের ভাবনা তার মাথায় আসে নিউ জিল্যান্ডের একটা প্রতিযোগিতার গল্প শুনে। পপস্টার্স নামের সেই প্রতিযোগিতায় বিচারক প্যানেলের সামনে প্রতিযোগীরা গান গাইত। আর বিচারকরা বিচার করার পাশাপাশি বিভিন্ন মন্তব্যও করতেন।

সে প্রতিযোগিতার আদলে সাইমন ২০০১ সালে ব্রিটেনের আইটিভির জন্য তৈরি করেন পপ আইডল। অবশ্য পপস্টার্সের আইডিয়ার সঙ্গে আরও কিছু আইডিয়া জুড়ে দেন তিনি। যেমন দর্শকদের ভোট, ব্যাকস্টেজের গল্প, প্রতিযোগীদের জীবনের গল্প উপস্থাপন ইত্যাদি। পরে সাইমন আমেরিকান চ্যানেলেও আইডিয়াটা বিক্রি করতে সমর্থ হলে ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করে আমেরিকান আইডল।

ব্রিটেনে পপ আইডল মাত্র দুই সিজন স্থায়ী হয়। তবে এরই মধ্যে এই সিরিজের সঙ্গে ঠোকাঠুকি লেগে যায় নিউ জিল্যান্ডের পপস্টার্স কর্তৃপক্ষের। আর তাই পরবর্তীতে রিয়েলিটি শোটির অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নাম থেকে পপ শব্দটা বাদ দেয়া হয়। আমেরিকায় গিয়ে শোটির নাম হয় আমেরিকান আইডল। এমনি বিভিন্ন দেশে শোটি বিভিন্ন নাম গ্রহণ করে— ইন্দোনেশিয়ান আইডল, নিউ জিল্যান্ড আইডল, ল্যাটিন আমেরিকান আইডল, ইন্ডিয়ান আইডল, বাংলাদেশি আইডল ইত্যাদি।

২০০১ সালে ব্রিটেনে শোটি শুরু হওয়ার পর থেকেই সাইমন আমেরিকার চ্যানেলগুলোতে আইডিয়াটা বিক্রির চেষ্টা করতে থাকেন। শুরুতে অবশ্য মার্কিন চ্যানেলগুলো আইডিয়াটাকে তেমন পাত্তা দেয়নি। তবে ফক্স ব্রডকাস্টিং কোম্পানির মালিক রুপার্ট মারডক প্রোগ্রামটির স্বত্ব কিনে নেন। বিশেষত তার মেয়ে ব্রিটিশ টিভি শোয়ের বিশেষ ভক্ত হওয়ায়, অনেকটা তার অনুরোধেই মারডক প্রোগ্রামটির স্বত্ব কেনেন। পরেরটুকু তো ইতিহাস। আমেরিকান আইডল: দ্য সার্চ ফর এ সুপারস্টার নাম নিয়ে প্রথম সিজনেই বাজিমাত করে রিয়েলিটি শোটির মার্কিন সংস্করণ।

পরের কয়েক বছর শোটির জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০০৪ সালে আমেরিকার সবচেয়ে বেশি দেখা টিভি শো হয় এটি। তবে শোটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিল পঞ্চম আসরে, ২০০৬ সালে।

এরপর থেকেই অবশ্য শোটি জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। এমনকি প্রথম আসরগুলোর বিজেতারা যেখানে মোটমাট ১৩টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে, (আন্ডারউড একাই জিতেছে ৭টি) সেখানে গত এক দশকে কোনো আইডল সুপারস্টারই গ্র্যামি জিততে পারেনি।

শোটি প্রথম বড়সড় ধাক্কা খায় ২০০৯ সালে, পলা আব্দুল বিচারক প্যানেল থেকে বিদায় নিলে। পরের বছর শোটি আরও বড় ধাক্কা খায়। আমেরিকায় আসে আরেক গানের প্রতিযোগিতার ফ্র্যাঞ্চাইজি দ্য এক্স ফ্যাক্টর। জনপ্রিয় বিচারক সাইমন কাওয়েল-ও আইডল থেকে চলে যান এক্স ফ্যাক্টরে। ওদিকে এনবিসি নেদারল্যান্ড থেকে নিয়ে আসে গানের প্রতিযোগিতার আরেক ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রোগ্রাম— দ্য ভয়েস অফ আমেরিকা।

অবশ্য গত কয়েক বছর আইডলের জনপ্রিয়তা খানিকটা স্থিতিশীল অবস্থায়ই ছিল। আর তার বড় কারণ ছিল লোপেজ-কনিক-আরবান বিচারক প্যানেল। তাতেও অবশ্য ফক্স ব্রডকাস্টিং কোম্পানির খুশি হওয়ার তেমন কোনো কারণ ঘটেনি। কারণ, পুরো আয়োজনের খরচ, সংশ্লিষ্টদের বেতন ইত্যাদি দিয়ে খুব বেশি লাভের মুখ দেখা যাচ্ছিল না। এরচেয়ে নির্ধারিত স্ক্রিপ্টের টিভি সিরিজগুলোই (এম্পায়ার কিংবা গোথাম) বেশি লাভজনক। আইডলের কারণে উল্টো এ ধরনের আরও সিরিজ প্রচারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাই আমেরিকান আইডল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণাটা এসেই গেল।

আর শেষ আসর বলে আগামী আসরে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মহাসমারোহে পুরনোদের পুনর্মিলনীরও ব্যবস্থা হতে যাচ্ছে। আইডলের মঞ্চে আবারও দেখা যাবে কেলি ক্লার্কসন, ক্যারি আন্ডারউড, জেনিফার হাডসন, ক্রিস ড’ট্রি, অ্যাডাম ল্যাম্বার্টদের মতো আইডল তারকাদের। চ্যানেলের ভাষ্যমতে, ফাইনাল আইডল সুপারস্টার খোঁজার পাশাপাশি আগামী আসরে থাকবে সিজন-লং সেলিব্রেটরি ইভেন্ট। কাজেই, শেষবার জ্বলে ওঠার মতো আমেরিকান আইডলের শেষ সিজনটিও সম্ভবত শোটির টিআরপি উস্কে দিতে যাচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই