ইটালিতে কেন বারবার ভূমিকম্প

গত কয়েক মাসে ইটালিতে বেশ কয়েকটি বড়ো রকমের ভূমিকম্প হয়েছে যাতে প্রতিবারই বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

ইউরোপের এই দেশটিতে আঘাত হানা এসব ভূমিকম্পের কোনটি ছিলো খুবই শক্তিশালী। অন্যগুলি দুর্বল ছিলো কিন্তু মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির জন্যেও ছিলো যথেষ্ট।

খুব স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে এই একই জায়গাতেই হয়তো খুব শীঘ্রই আবারও ভূমিকম্প হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইটালিতে অ্যাপেনাইন্স পর্বতমালার মেরুদণ্ডের ওখানে প্রচুর বাড়িঘর গড়ে উঠেছে।

ওই এলাকায় টেকটনিক নড়াচড়ার কারণে সেগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

ভূমিকম্প বিজ্ঞানী রস স্টাইন বলছেন, ২০০৯ সালে লা -কোয়েলায় যে ভূমিকম্প হলো তার মাত্রা ছিলো ৬ দশমিক ২। যুক্তরাষ্ট্রে এধরনের ভূমিকম্প হলে তাতে কেউই মারা পড়তো না। কিন্তু ইটালিতে মারা গেলো তিনশোর মতো মানুষ। এতে প্রাচীন একটি শহর ধ্বংস হয়ে গেছে।

“তখন আলোচনা শুরু হতে লাগলো যে আগে থেকে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব কিনা? আমেট্রিসে এলাকায় যে ভূমিকম্প হলো তার মাত্রাও ছিলো ৬ দশমিক ২। এটা আঘাত হেনেছে লা -কোয়েলা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। এই ভূমিকম্পেও মধ্যযুগীয় প্রাচীন একটি শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় একই সংখ্যক লোক নিহত হয়েছে। অর্থাৎ এই ভূমিকম্প এখন ডোমিনো এফেক্টের মতো আরো উত্তর-পশ্চিমে সরে এসেছে।”

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই একটি ভূমিকম্পের সাথে কি আরেকটির ভূমিকম্পের কোন ধরনের সম্পর্ক আছে?

বিজ্ঞানী রস স্টাইন বলছেন, প্রথম দিকে ইটালিতে যে ধরনের ভূমিকম্প হতো, বিশ্বের অন্যান্য জায়গার তুলনায়, তার বেশিরভাগই হতো একসাথে কিম্বা হতো ধাপে ধাপে।

ইটালিতে ভূমিকম্পের এই বৈশিষ্ট্য আর কোথাও নেই।

এই পার্থক্যটা তেমন বড় কিছু নয়, কিন্তু চোখে পড়ার মতো।

“এর কারণ হতে পারে এই যে, ওখানে যেসব ফল্ট বা চ্যুতি তৈরি হয়েছে সেগুলো তুলনামূলকভাবে নতুন। এগুলোর বয়স ১০ লাখ বছরেরও কম। তুলনা করতে গেলে বলা যায় সেন্ট অ্যান্ড্রেয়াস ফল্ট এক কোটি বছর পুরনো।”

সুতরাং বারবার ভূমিকম্প হওয়ার মাধ্যমে ফল্টগুলো যেভাবে একটি বড়ো আকারের মসৃণ ফল্টে পরিণত হয় ইটালিতে সেরকম কিছু হয়নি। আর একটি মাত্র ফল্ট থেকে খুব বড়ো ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে না। এসবরে কারণে খুব ঘন ঘন আর মাঝারি মাপের ভূমিকম্প হতে পারে।

লা কোয়েলায় ভূমিকম্প হয়েছিলো বেশ কয়েক বছর আগে। তারপর এক লম্বা বিরতির পরে গত অগাস্ট মাসে একবার ভূমিকম্প হলো, তারপর আরেকবার এবং তারপর আরো একবার…।

এই ভূমিকম্পের সময় এবং একটার সাথে আরেকটার যে দূরত্ব- এসব থেকে কি কোনো কিছু ধারণা করা যায়?

বিজ্ঞানী রস স্টাইন বলছেন, এটা খুবই মজার একটি ব্যাপার। খুব সাধারণ একটি ভূমিকম্পের কথা ধরুন যার মাত্রা ৬। এটা আফটারশক তৈরি করবে। অর্থাৎ মূল ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার পরেও ছোটখাটো কম্পন হতে পারে।

তিনি বলেন, “আফটারশকের একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। সময় যতো বাড়বে এটি ততোই ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই মাত্রা কমে না।”

“এখন আপনি যদি প্রথম দিনের বড়ো ভূমিকম্পটির কথা ভাবেন তাহলে পরের দশ দিনেও একই রকমের ভূমিকম্প হতে পারে। আগামী একশো দিন পরেও হতে পারে একই আকারের ভূমিকম্প। লা -কোয়েলায় ভূমিকম্প হয়েছে সাত বছর আগে। এটা এখনও সেই সময়ের মধ্যেই আছে যখন ভূমিকম্প হতে পারে।”

এখন আপনি যদি লা -কোয়েলা থেকে শুরু করে ইদানীংকালে যতোগুলো ভূমিকম্প হয়েছে সেগুলোর দিকে তাকান তাহলে এসব ভূমিকম্পকে আপনি দেখতে পারেন বিভিন্ন ফল্টের মধ্যে সংলাপ হিসেবে।

গত কয়েক বছর ধরেই আমরা ইটালিতে ভূমিকম্পের একটা প্যাটার্ন লক্ষ্য করছি। এসব থেকে কি বলা যেতে পারে যে ওই একই জায়গায় আরো ভূমিকম্প হতে পারে?

বিজ্ঞানী রস স্টাইন বলেন, মোটা দাগে বলতে গেলে এটা একটা সহজ প্রশ্ন। হ্যাঁ, আরো ভূমিকম্প হবে এবং আমরা সেগুলোকে বলা হবে আফটারশক।

“সাধারণত আফটার শক প্রথম ভূমিকম্পটির চেয়ে দুর্বল হয়ে থাকে। আবার কখনও কখনও মূল ভূমিকম্পটির চেয়ে আফটারশক বড়ো আকারেও হতে পারে।”

তিনি বলেন, “মানুষেরা মনে করে বিজ্ঞানীরা হয়তো এবিষয়ে অনেক কিছু জানেন কিন্তু আমরা আসলে কিছুই জানি না। কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব হচ্ছে- হ্যাঁ, আরো ভূমিকম্প হবে।”

“আর বেশিরভাগ ভূমিকম্পই হবে এর আগে আমরা যেসব ভূমিকম্প দেখেছি তারচেয়ে ছোট আকারের। আবার এটাও সম্ভব যে ওই আফটারশক আগের যে কোনো ভূমিকম্পের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালীও হয়ে উঠতে পারে।”

এসব নিয়েই শুনুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ হুমায়ূন আখতারের সাক্ষাৎকার।-বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই