ইচ্ছে না করলে তার সঙ্গে শুইনি : তসলিমা নাসরিন
তিনি ‘সাধারণ মেয়ে’৷ তিনি পেরেছেন৷ যে কারণে, তিনি যা পেরেছেন, যে কোনও মহিলা চাইলেই তা করতে পারবেন! তা হলে, ৩০ বছর আগে তিনি যেমন করতে পেরেছেন, তেমন কেন করতে পারবেন না এখনকার মহিলারা?
অথচ, পুরুষরা ধর্ষণ করে করে, নির্যাতন করে করে মেরেই ফেলছেন মহিলাদের! তা হলে, মহিলারা কেন নিজেদের মারবেন? কিন্তু, মহিলারা যখন আত্মহত্যা করেন, নিজের অজান্তে তাঁরা তখন পুরুষ হয়ে যান! পুরুষ যেমন মহিলাদের ঘৃণা করেন, তেমন করে মহিলারা নিজেদের ঘৃণা করেন! পুরুষ যেভাবে হত্যা করেন, সেভাবে মহিলারাও নিজেদের হত্যা করেন!
তিনি, এক ‘সাধারণ মেয়ে’৷ এমনই দাবি তাঁর৷ অথচ, তিনি, লেখিকা তসলিমা নাসরিন৷ বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহযোগী মহিলা অধ্যাপকের আত্মহত্যার প্রসঙ্গে এমনই বক্তব্য পেশ করেছেন তিনি৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন তাঁর কথা৷ লেখিকা এমনই জানিয়েছেন, ত্রিশ বছর তিনি ডিভোর্স দিয়েছিলেন যাঁকে, তাঁকে নোটারি পাবলিকের কাগজে সই করে বিয়ে করেছিলেন৷
তার পর, তিনি একা ঘর ভাড়া নিয়েছেন৷ একা থেকেছেন৷ মানুষের মন্দ কথায় বিরক্ত হয়েছেন৷ কিন্তু, তিনি ভেঙে পড়েননি৷ বরং, তিনি ব্যস্ত ছিলেন হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা আর তাঁর লেখাপড়া নিয়ে৷ তিনি পরোয়া করেননি৷ তাঁর বিরুদ্ধে মৌলবাদীরা জোট বেঁধেছে৷ দেশ জুড়ে মিছিল মিটিং করে তাঁর ফাঁসি চেয়েছে, মাথার মূল্য ধার্য করেছে৷ তাও তিনি পরোয়া করেননি৷ তাঁর যা করতে ইচ্ছে হয়েছে তিনি করেছেন৷ যখন ধর্মের নিন্দা করতে তাঁর ইচ্ছে করেছে, তিনি নিন্দা করেছেন৷ তিনি এমনই বলেছেন, ‘কারও সঙ্গে শুতে ইচ্ছে করলে শুয়েছি, শুতে না ইচ্ছে করলে জগৎ উল্টে গেলেও শুইনি৷’
ফেসবুকের ওই বক্তব্যে তসলিমা নাসরিন এমনই বলেছেন, ‘মেয়েরা কেন যে ভুলে যায় তারা একটা অসভ্য অশিক্ষিত নারীবিদ্বেষী সমাজে বাস করছে৷ ভালো মেয়েদের, বুদ্ধিমতী মেয়েদের, মেরুদণ্ড সোজা করে চলা মেয়েদের এই নষ্ট সমাজ নানা ভাবে নানা কায়দায় অপমান করে, অপদস্থ করে, গালি দেয়, চরিত্র নিয়ে কুকথা বলে৷ যে মেয়েদের এ সব করা হয় না, যে মেয়েদের ‘ভালো মেয়ে’ বলা হয়, তারা আসলে মাথামোটা, গবেট, নির্বোধ, মানসম্মানের ছিটেফোঁটা নেই এমন মেয়ে৷ যে মেয়েরা বাধা পায়, গালি খায়, তারাই সত্যিকারের হীরে৷’
একই সঙ্গে তিনি এমনই বলেছেন যে, ‘আত্মহত্যা করলে চলবে কেন! নারীবিদ্বেষী সমাজটাকে তুমুল অবজ্ঞা করা শিখতে হবে৷ কাউকে পরোয়া না করে নিন্দুকের মুখে থুতু দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করা শিখতে হবে৷ ত্রিশ বছর আগে আমি যা পেরেছি, তা কেন পারবে না এখনকার মেয়েরা? আমি তো সাধারণ একটি মেয়ে৷ যে কোনও মেয়ে চাইলেই পারবে আমি যা পেরেছি৷ কোনও মেয়ের আত্মহত্যার খবর আর শুনতে চাই না৷ পুরুষরা তো মেয়েদের ধর্ষণ করে করে, নির্যাতন করে করে মেরেই ফেলছে৷ প্রতিদিন মারছে৷ মেয়েরা নিজেদের মারবে কেন?’সূত্র: কলকাতা২৪
মন্তব্য চালু নেই