আদালতে জিহাদ চৌধুরী

আ.লীগ নেতা আদেলের আদেশে একরামকে হত্যা

ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেলের আদেশেই ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরামকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রেপ্তারকৃত জাহিদুল ইসলাম জিহাদ চৌধুরী।

সোমবার দুপুরে ফেনীর চিফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি এ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

জিহাদ চৌধুরী ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারীর সেকেন্ড ইন-কমান্ড। তিনি একরাম হত্যার মূল হোতা।

এদিকে, জিহাদ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিকেলে আদালতের কাছে ১০ দিনের আবেদন জানায় পুলিশ। বিচারক মোহাম্মাদ খাইরুল আমীন তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় ফেনী মডেল থানা পুলিশ ফেনী পৌরসভার বারাহীপুর থেকে জিহাদকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক ( ওসি-তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, পুলিশ জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৮ দিন মঞ্জুর করেন।

রোববার একই আদালতের বিচারক মো. খাইরুল আমীন ১৩ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সোমবার ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল হক জানান, রিমান্ডে থাকা ১৩ জনের কাছ এখন পর্যন্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি। কোনো তথ্য পেলে জানানো হবে।

আদেলের বাড়িতে তল্লাশি: সকালে জাহাঙ্গীর কবির আদেলের বারাহীপুর ও শহরের পেট্রোলবাংলা বাড়িতে গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রাশেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন আদেল নিজাম হাজারীর ছত্রছায়ায় আছেন। অভিযোগ রয়েছে ফেনীর পুলিশের অর্থ সংক্রান্ত লেনদেন এই আদেলই করতেন। পুলিশ তাকে কৌশলে অন্যত্র পাঠিয়ে ‘আইওয়াশের’ অভিযান চালিয়েছেন।

নিজাম হাজারীসহ একসঙ্গে প্রতিবাদ সমাবেশ: একরাম খুনের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশে নিজাম হাজারীর সঙ্গেই ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির আদেল। গত ২০ মে মহিপালের এক তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশে নিজাম হাজারীর সঙ্গে তাকে দাঁড়াতে দেখা যায়।

আবিদকে নিয়ে রশি টানাটানি: একরামকে যে প্রথম গুলি করেছে তিনি হচ্ছেন আবিদুল ইসলাম আবিদ। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন মিডিয়ায় এমনই সংবাদ প্রকাশ হয়। তবে সোমবার সকালে জেলা ছাত্রলীগ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন এর প্রতিবাদ জানায়।

ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি জহিরুল ইসলাম জুয়েল জানান, আবিদ ছাত্রদল নেতা। একইদিন বিকেলে এর প্রতিবাদে জেলা ছাত্রদল পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নঈমুল ইসলাম বরাত জানান, তিনি নিজাম হাজারীর মামাতো ভাই। তার মা ফেনী মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। একরাম হত্যার ৮ ঘণ্টা পর আবিদ নিজাম হাজারীর সঙ্গে দেখা করেন। সে ছবি বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়।

এব্যাপারে স্থানীয়রা জানায়, আবিদ এক সময় বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে ছাত্রলীগে যোগ দেন। আবার অনেকে বলেছেন আবিদ একজন সুবিধাবাদি মাদক সম্রাট।

মামলা চলছে নিজাম হাজারীর ইশারায়: একরাম হত্যার মামলা চলছে নিজাম হাজারীর ইশারায়। এমন অভিযোগ একরাম পরিবারের। তথ্যমতে, গ্রেপ্তারের আগে শিবলু নিজাম হাজারীর বাসায় ছিলেন। সেখান থেকে এসে ফেনী মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করেন।

পরিকল্পনাকারী বেলালের বাড়িতে আগুন: একরাম হত্যার পরিকল্পনাকারী বেলাল হোসেন পাটোয়ারি ওরেফে টুপি বেলালের বাড়িতে সোমবার দুপুর ১২ টায় আগুন দিয়েছে একরাম সমর্থকরা। ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে তার বাড়ি। তিনি আনন্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

একরামের স্বজনরা জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের দিন বেলাল মূল হত্যাকারীদের মুঠোফোনে তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া এবারের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মিনারের সঙ্গে সখ্যতা রেখে একরামকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। বর্তমানে বেলাল পলাতক রয়েছেন।

এর আগে গত রোববার ফুলগাজী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আলমগীরের বাড়িতে আগুন দেয় একরাম সমর্থকরা। ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বেলাল জড়িত থাকলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এছাড়া যতদিন পর্যন্ত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেয়া না হবে ততদিন আন্দোলন চলবে।

ফেনীর পুলিশ দিয়ে তদন্ত সম্ভব নয়: একরাম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ফেনীর পুলিশ দ্বারা সম্ভব নয়। একরাম পরিবারের এক সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, ফেনীর পুলিশের অধিকাংশ কর্মকর্তা একরাম হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমান পুলিশ প্রশাসন কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এ পর্যন্ত মামলার অগ্রগতি করেছে র‌্যাব। শিবলু ও জিহাদ চৌধুরীর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার ব্যাপারে নাটকীয়তা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এরা ফেনী পুলিশের অধীনে থাকলে রিমাণ্ডের নামে জামাই আদরে থাকবে।

এর আগে গত রোববার একই অভিযোগ করেছে ‘উপজেলা পরিষদ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’। রোববার দুপুরে স্থানীয় এলজিইডি ভবনে ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে সাংবাদিক সম্মেলনে পরিষদের বক্তারা বলেন, ‘সুষ্ঠু বিচারের জন্য মামলা ঢাকার ‘সিআইডিতে স্থানান্তর করা হোক। কারণ ফেনীর পুলিশ দিয়ে তদন্ত সম্ভব নয়। পুলিশের সঙ্গে আসামিদের সখ্যতা রয়েছে। তারা সঠিক তদন্ত করবে না। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের যেন ফেনী কারাগারে রাখা না হয়। এখানে থাকলে তারা জামাই আদরে থাকবে।

বক্তারা বলেন, ‘এর আগে নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যানকে খুন করা হয়েছে, তার বিচার হয়নি। একরাম হত্যার বিচার না পেলে আমরা উপজেলা বর্জন করবো। প্রয়োজনে আগামীতে আমরা আরো কঠোর আন্দোলন দিবো।



মন্তব্য চালু নেই