দীর্ঘ ৭ মাসেও পারেনি বিএনপি, কিন্তু আ.লীগ করেছে মাত্র এক সপ্তাহে

সম্মেলনের দীর্ঘ ৭ মাসেও বিএনপি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারলেও আওয়ামী লীগ ঘোষণা করেছে মাত্র এক সপ্তাহে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভেদ-বিভ্রান্তি।

গত ১৯ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন খালেদা জিয়াকে চেয়ারপারসন নির্বাচিত করে বাকি কমিটি ঘোষণার জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সেদিন বলেছিলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ কিন্তু প্রায় সাড়ে চার মাস পর ৫০২ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে এখনো নাম ঘোষণা করা হয়নি। কবে হবে তাও জানেন না নেতাকর্মীরা। অবশিষ্ট পদগুলো অবশ্য এক প্রকার চাপাই পড়ে আছে।

এদিকে কমিটির নাম ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বেশ কিছু নেতা নিষ্ক্রিয়। এখনো বিএনপিতে পদপদবি নিয়ে চলছে বাণিজ্য এবং কোন্দল। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই দলের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন দলের অনেক নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, নানা কারণে বিএনপি এখন অনেকটাই দুর্বল। রাজনীতিতে একদল অন্য দলকে ছাড় দেবে না- এটাই স্বাভাবিক। বিগত দিনে বিএনপিও দেয়নি। দল সংঘবদ্ধ হতে পারলে হয়তো এ সমস্যা কাটানো সম্ভব।

তবে দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা দলের দুর্বলতা মানতে নারাজ। তাদের মতে, বিএনপি দুর্বল হয়নি, সরকার দমনপীড়নেও বিএনপির অবস্থানে চিড় ধরাতে পারেনি। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি এর জবাব দিতে প্রস্তুত।

বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে তারা সামনের দিকে কীভাবে এগোতে পারে- সেটিই মূল লক্ষ্য দলটির।

খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল সম্প্রতি বিএনপির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তার কিছু অংশে দাবি করেছেন, ‘আত্মবিশ্লেষণ, আত্মানুসন্ধান ও আত্মসমালোচনা করলে বিএনপি দেখতে পাবে যে, দলে রাজনৈতিক দর্শন, মতাদর্শগত অনুশীলন ও সংগ্রাম খুবই কম। ফলে আদর্শগত সচেতনতা ও দৃঢ়তা গড়ে উঠছে না। বিপদ-বিপর্যয় মোকাবেলায় সাহসী নেতাকর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে। সাংগঠনিক তৎপরতা বলতে কর্মীদের মিছিল-সমাবেশে যোগদান আর নেতাদের বক্তৃতা দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।’

তিনি দল নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন, নেতাদের পারস্পরিক অবিশ্বাস ছড়ানো, হেয় করা, কোন্দল সৃষ্টিসহ গ্রুপিং প্রবণতাও বিএনপিকে ভেতর থেকে দুর্বল করে রাখছে। এই প্রবণতা দেশ ও দলের চেয়ে ব্যক্তি এবং গ্রুপকে শক্তিশালী রাখার প্রয়াস দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণ পরিষদ- জাতীয় স্থায়ী কমিটিকেও অকার্যকর করে রেখেছে। সাফল্য, আত্মসাৎ এবং ব্যর্থতার দায় না নিয়ে অপরের ওপর চাপিয়ে দেয়ার ধারা দলকে সঠিক সিদ্ধান্ত থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে।

তবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান মাহাবুবুর রহমানের দাবি, দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।



মন্তব্য চালু নেই