১৪ দলীয় জোট
আ.লীগের ছায়ায় দুর্বল শরিকরা
টানা দুইবার ক্ষমতায় থেকেও তৃণমূলে নিজেদের অবস্থা পোক্ত করতে পারছে না ১৪ দলের শরিকদলগুলো। অধিকাংশ দলই জোটের তৎপরতার ওপর নির্ভরশীল। দল গোছানোর চেয়ে সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে সরকারকে খুশি করায় যেন তাদের সাংগঠিক কাজ হয়ে পড়েছে।
প্রায় ৬ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আছে। ২০০৯ থেকে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসে তারা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলোও মাঠ পর্যায়ে নিজস্ব কোনো কর্মসূচি ছিল না শরিক দলগুলোর। জোটগত কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ১৪ দলের দুই-একটি দল ছাড়া বাকিদের ঢাকার বাইরে তেমন কোনো সাংগঠনিক অস্তিত্বই নেই। ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জাসদ), তরিকত ফেডারেশন ছাড়া বাকিদের সাংগঠনিক অবস্থা নেই বললেই চলে। শরিক দলগুলোর কোনোটিরই ৬৪ জেলায় কমিটি নেই। শুধু নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে আছে তারা।
১৪ দলীয় জোটে বর্তমানে শরিক দলের সংখ্যা আসলে ১০টি। তবে এ জোটের প্রধান এবং একমাত্র চালিকা শক্তি আওয়ামী লীগ। তাদের নির্দেশনাতেই পরিচালিত হয় জোটের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এমনকি ১৪ দলের বৈঠক হয় ও বৈঠকের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের নির্দেশনাতেই হয়, বাকিদের কোনো মতামতও গ্রহণ করা না।
জোটের অন্য শরিক দলগুলো হচ্ছে- ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ ও গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যুক্ত হয়েছে তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি)। এই দুই দল জোটে আসার আগে যে ১৪ দলীয় জোট, এখনো সেই নামেই জোটের পরিচয়। এছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল বাসদ (রেজাউর রশিদ), জাকের পার্টি রয়েছে একেবারেই নিস্ক্রিয়।
জোটের যে দুই-একটি দলের নিজস্ব কর্মসূচি দেয়ার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা রয়েছে সে দলগুলোও ঝিমিয়ে পড়েছে। এই সময়ে জোটের শরিক দলগুলোর কয়েকজন নেতা সরকারের মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যও হয়েছেন। তবে দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানান নেতাকর্মীরা।
ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান জানান, ৬৪ জেলার মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির কমিটি রয়েছে ৫০টিতে। এর মধ্যে ৭/৮টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই।
জোটের আরেক শরিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরিফ নুরুল আম্বিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাসদেরও কমিটি আছে ৫০ জেলায়। এর মধ্যে বেশ কিছু জেলায় রয়েছে আহ্বায়ক কমিটি।
তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল বলেন, ‘আমাদের ৩০ জেলায় সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আর্ন্তজাতিক সুফী সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।’
সাম্যবাদী দলের নেতা হারুন চৌধুরী জানান, তাদের ২০ জেলার সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। তবে ৮ জেলার আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। বাকিগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। পুরনো দল হিসেবে ন্যাপের এক সময় দেশব্যাপী সংগঠন থাকলেও বর্তমানে এ দলটির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ জেলায় ন্যাপের সংগঠন নিষ্ক্রিয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গণতন্ত্রী পার্টির ২০টির উপরে জেলা কমিটি রয়েছে বলে এ দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম জানান। কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অবস্থাও একই। নতুনভাবে আওয়ামী লীগের জোটে যুক্ত হওয়া বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপির সারা দেশেই সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে বলে জানা যায়।
দলের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসিত বরণ রায় বলেন, ‘আমাদের পার্টি কার্যক্রম মূলত ঢাকা কেন্দ্রীক। আমাদের পার্টি নতুন, যেভাবে কার্যক্রম চালানো দরকার সেটা পারছি না। গোপালগঞ্জ ও কুমিল্লায় আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম আছে।’ অন্যদিকে গণ আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির কোনো জেলাতেই কমিটি নেই।
এদিকে সরকারের কোনো কোনো বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত থাকলেও সরকারে থাকায় ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিও দিতে পারছে না এই দলগুলো। জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য। ১৪ দলীয় জোটে থাকা দলগুলোর মধ্যে স্বতন্ত্র কর্মসূচির মধ্যে প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে জাসদ গত ১৯ অক্টোবর ঢাকায় গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করে। আর গত ২৯ নভেম্বর ঢাকায় সমাবেশে করে ওয়ার্কার্স পার্টি।
জানা গেছে যে, ২৩ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে ১৪ দল গড়ে উঠেছিলো সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে তেমন কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ১৪ দলের নেতাদের মধ্যে ক্রমান্বয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ শুধু প্রয়োজনেই তাদের কাছে টানে, ব্যবহার করে। অন্য সময় খবরও নেয় না।
মন্তব্য চালু নেই